Answered 2 years ago
মোটেও না। তাঁর লেখায় উচ্চমানের রসবোধ আছে। আছে অসাধারণ তথ্যাবলীর সমাবেশ। গল্প বলার ধরনে তিনি অনন্য। ভাষার সহজ-সাবলীল ব্যবহার এবং একটি বিশেষ ভঙ্গিমায় গল্প বুননের কারণে তিনি খুব সহজেই পাঠকের হৃদয়ে দাগ কাটতে সক্ষম হয়েছেন। তার গল্প-উপন্যাসের প্লট আমাদের সমাজের নানা ঘটনা এবং মানুষগুলোকেই কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে কিন্তু বাংলা সাহিত্যের অন্যকোন লেখকের লেখায় অতি সাধারণ বাক্যের ব্যবহারে অমন জাদু, অদ্ভুতূড়ে পাগলামি আর নেশা মিশে নেই। চুম্বকের মতো পাঠক ধরে রাখে তাঁর লেখাগুলো। এখানেই তার অনন্যতা। মহৎ সাহিত্যিক মাত্রেই নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে বিশিষ্ট। খুব সহজেই তাদের লেখা অন্যদের থেকে আলাদা করা যায়। বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের যেমন নিজস্ব ভাষাশৈলী আছে; বরং শিক্ষিত না হলেই আপনি তাঁদের লেখার মর্ম উদ্ধারে ব্যর্থ হবেন। তবে হ্যাঁ, সাহিত্য পাঠের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাধারী হতেই হবে ব্যাপারটা এমন নয়। শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, সশিক্ষিত সবাই সাহিত্যানুরাগী হতে পারেন। কিন্তু সাহিত্যের প্রকৃত রস অনুধাবনে শিক্ষার ভূমিকাও কম নয়।
প্রশ্নটা ছিল হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই লেখক হুমায়ুন জনপ্রিয়তায় আকাশ ছুঁয়ে ফেলার পরে তাঁর লেখার গুণগত মান কমে গিয়েছিল। প্রচুর রিপিটেশন ছিল তাঁর শেষের দিকের লেখায়। প্রকাশকদের চাপ ছিল। কিন্তু পাঠক তা-ও গোগ্রাসে গিলতো সেসব। আমাদের প্রজন্মের কাছে হুমায়ুন হয়ে গিয়েছিলেন অবশ্যপাঠ্য।ব্যক্তিগতভাবে আমি লেখার গুণগত মানে ছাড় দেয়াটা মেনে নিতে পারি না। জাপানের ঔপন্যাসিক হারুকি মুরাকামির ঐ উক্তিটা আমার কাছে বরাবরই প্রিয়-"কাহিনির শেষে যতিচিহ্ন আঁকা যেন একটি সন্তান জন্মদানের অভিজ্ঞতা।" সন্তান ত্রুটিযুক্ত হোক তা যেমন কোন জন্মদাতাই চান না, লেখকের ও একটা সৃষ্টি কেন অমন হেলাফেলায় রচিত হবে? হুমায়ুন আহমেদের শেষের দিকের রচনাগুলোর মানের উৎকর্ষ তেমন নয়। তবে তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন কিংবদন্তি একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। তিনি যা দিয়ে গিয়েছেন তা অমূল্য। তাঁকে ছোট করে দেখবার কোন অবকাশই নেই।
niloyrana publisher