শুধু গরুর জল খাওয়ার উদ্দেশ্য কলকাতার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে একটি পুকুর খনন করা হয়েছিল। তার ইতিহাস কেউ জানাতে পারেন?

1 Answers   2.5 K

Answered 2 years ago

আমি নিশ্চিত কলকাতার সঙ্গে যাদের একটু আধটু পরিচিতি আছে তাঁরা সকলে এই পুকুরটি দেখে থাকবেন। কারণ এই জলাশয়ের অবস্থান কলকাতার একেবারে কেন্দ্রীয় অংশে। নিউ মার্কেট যাওয়ার জন্য যে লিন্ডসে স্ট্রিট তা কলকাতার বেশ বিখ্যাত রাস্তা। এই রাস্তা জওহরলাল নেহরু রোডের যেখান থেকে বেরিয়েছে, ঠিক তার উল্টোদিকে ময়দানের মধ্যে এই পুকুরটির অবস্থান। যাঁরা রাস্তা টপকে প্রেস ক্লাবের দিকে যেতে চান তাঁদের যাত্রাপথের বাঁদিকে পড়বে এই পুকুর।

পুকুরটির পোশাকি নাম মনোহর দাস তড়াগ। ‘তড়াগ’ কথাটির অর্থ পুকুর বা জলাশয়। হিন্দিতে একেই বলে ‘তলাও’। কয়েক বছর আগেও এই জলাশয় আবর্জনায় ও ঝোপ-ঝাড়ে ঢেকে ছিল। জঙ্গল ও নোংরা ভর্তি তড়াগের পাশে কেউ ঘেঁষতেই চাইত না। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে একে পুনর্জীবন দান করা হয়েছে। চারদিকে রেলিং দিয়ে ঘিরে, সাইনবোর্ড লাগিয়ে, পাড় সুন্দর করে বাঁধিয়ে এমন ঝকঝকে করে তোলা হয়েছে যে এখন এটি চোখে না পড়াটাই আশ্চর্যের। নিউ মার্কেট থেকে কেনাকাটা সেরে কেউ চাইলে মনোহর দাস তড়াগের ধারে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন।

তবে আশ্চর্য হওয়ার আরও একটি বিষয় আছে। আর সেটাই মুখ্য। এই পুকুরটি খনন করা হয়েছিল গরুর জলপানের সুবিধার জন্য। এক কথায় এ ভাবেও বলা চলে যে ‘এই পুকুরটির সঙ্গে এক অবজ্ঞাত জীবের জন্য এক পূণ্যকামী পুরুষের স্মৃতি বিজরিত রয়েছে’। মানুষের জন্য তো কত কিছুই থাকে কিন্তু অবলা জীবের জন্য কে ভাবে? ব্যবসায়ী মনোহর দাস শাহ এই আপ্তবাক্যটি মনে রেখে আনুমানিক ১৮০০ সালে এই পুকুর খনন করেছিলেন।

উদ্দেশ্য, ময়দানে চড়ে বেড়ানো গরুরা যাতে এই পুকুরের জল খেয়ে তৃষ্ণা নিবারণ করতে পারে। সরকারি নথী থেকে জানা গেছে, প্রায় ২ বিঘা জমির ওপরে এই বড় আকারের পুকুর কাটা হয়েছিল। তবে শুধু জলপান নয় গরুর মতো অবলা তৃণভোজী জীবেরা যাতে খেতে পারে তার জন্য পুকুরের চারপাশে একশ বিঘে জমি কিনে তাতে গো-চারণের ব্যবস্থাও করেন।

পুকুরের চারকোণায় ছিল অষ্টভুজাকার চারটি ছোট ছোট মন্দির। তাতে ছিল শিব, বিষ্ণু, দুর্গা ও সূর্যের মূর্তি। আজও সেই মন্দির চারটি দেখতে পাবেন, তবে সেখানে বিগ্রহ নেই।

পূর্ব পাড়ে একটি বড় মার্বেল পাথরের ফলকে ইংরেজি, হিন্দি ও বাংলায় এই পুকুরের ইতিহাস লেখা আছে। ১৯৪৮ সালের ১২ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিনে রাজ্যপাল ডঃ কৈলাশনাথ কাটজু এই ফলকের আবরণ উন্মোচন করেন।

বেনারসের অভিজাত পরিবার গোপাল দাস শাহের পুত্র মনোহর দাস শাহ (জন্ম ১৭২৭) ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যাঙ্কার। ১৭৮০ সাল নাগাদ তিনি কলকাতায় আসেন। তবে তাঁর কৃতিত্ব শুধু কলকাতা নয় কাশী, বৃন্দাবন, গয়া-সহ নানা তীর্থক্ষেত্রে ছড়িয়ে আছে। সেখানে তিনি বহু মন্দির, কুণ্ড ও ফলক তৈরি করেছেন। বড়বাজারের ‘মনোহর দাস কাটরা’ তাঁরই তৈরি। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনেও দাস পরিবারের বিশিষ্ট ভূমিকা ছিল।


Runa Laila
runalaila
435 Points

Popular Questions