Answered 2 years ago
আমি এখানে নিজের কথা দিয়েই শুরু করলাম। আমার স্বামীর সঙ্গে যখন আমার বন্ধুত্ব শুরু তখন দুজনেই কলেজে পড়ি, আলাদা আলাদা কলেজ। যে যার নিজের বন্ধুবান্ধব, পড়াশোনা, পরীক্ষা, পড়তে যাওয়া নিয়েই ব্যস্ত। সারাদিনের ব্যস্ততার পর এটুকুই চাইতাম সে যেন তার সারাদিনের কাজের ফাঁকে আমার জন্য একটু সময় রাখে যাতে দুটো গল্প করতে পারি। আমরা দুজনেই মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়ে। কেউ কারুর কাছ থেকে কোনোদিনই কোনো দামি উপহার আশা করিনি। বছরে দু'বার গ্রিটিংস কার্ড আদানপ্রদান করতাম। সেইসব কার্ডে বছরের উল্লেখ করে ছোটবেলার টিনের সুটকেসের মধ্যে যত্ন করে রেখে দিয়েছি, বুড়ো বয়সে একসাথে বসে দেখব বলে। সেইসময় ওর কাছে চাওয়ার মতো আমার একটাই জিনিস ছিল, ওর সারাদিনের মধ্যে থেকে আমার জন্য কিছুটা সময়।
বিয়ের পরে তো আর সময় চাওয়ার কোনো ব্যাপার নেই। আর এখন এই লকডাউনে সারাদিনই চোখের সামনে ঘোরাঘুরি করছে। এটা দাও, ওটা দাও করে বেশি হুকুম করতেও পারছে না। এমনিতেই চোখের সামনে দেখছে যে সারাদিন কতো কাজ থাকে আমার। মাঝেমধ্যে নিজেই কাজের ফাঁকে এটা ওটা এগিয়ে দিয়ে আমায় সাহায্য করে। কোনো একবেলার রান্না করে দেওয়ার প্রস্তাব রাখে, কখনও বলে যে বাসন মেজে দেবে কিনা। যদিও আমি দিই না, বাসন যতো না মাজবে তার চাইতে সারাটা জায়গা জলে জল করবে। তবে ও যে নিজে থেকে কাজগুলো করে দেওয়ার কথা বলে, এতেই আমি খুব খুশি। আমার মনে হয় প্রত্যেক স্ত্রীই চায় তার স্বামী তার জন্য একটু ভাবুক, তার পরিশ্রমের একটু কদর করুক। রান্নায় কোনোদিন নুন কম হলে সেটা উল্লেখ করতে যেমন একমিনিটও দেরি হয় না, ঠিক তেমনই কোনো স্ত্রী তার স্বামীর জন্য ভালোবেসে কোনো বিশেষ পদ রাঁধলে তার প্রশংসা করতেও একমুহূর্ত দেরি হওয়ার কথা নয়। সেই সাথে প্রতিটি স্ত্রীই আশা করে স্বামী তার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবে। আমাদের (অর্থাৎ মেয়েদের) বাবা মায়েরা অনেক পরিশ্রম করে আমাদের স্বাবলম্বী হওয়ার উপযোগী করে তুলেছেন এবং সেই সঙ্গে আমরাও অনেক পরিশ্রম করেছি। নিজেদের ভাত কাপড়ের যোগাড় ঠিকই নিজেরা করে নিতে পারবো, কেউ বা অফিসে চাকরি বাকরি করে, কেউ বা টেলরিং এর দোকানে সেলাই ফোঁড়াই করে। দুটো খেতে পরতে পাওয়ার জন্য এখনকার কোনো মেয়ে বিয়ে করে না। আমরা স্বামীর কাছে আশা করি নিজেদের জন্য সম্মান, মর্যাদা আর বিশ্বাসের।
তার মাঝেও কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষে একজন স্বামী যদি তার স্ত্রীকে কিছু উপহার দেয় তাতে তার যত্নশীল মনোভাবই প্রকাশ পায়। উপহার মানেই অত্যন্ত দামি কিছু হতে হবে এমনটা একেবারেই নয়। আমরা মেয়েরা অল্পেতেই খুশি, সমাজের চিন্তাধারাই আমাদের "দামোদর শেঠ" বানিয়ে রেখেছে। কাজ থেকে ফেরার পথে আপনি আপনার স্ত্রীর জন্য একটা ফুল বা একটা চকোলেট কিনে নিয়ে গেলেই দেখবেন সে কতটা খুশি হয়েছে। আর স্ত্রী খুশি থাকলেই আপনার সংসারও খুশি
Masum publisher