মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকা শহরের যানজট–দুর্ভোগ কি কমবে?

1 Answers   5.8 K

Answered 2 years ago

মেট্রোরেল হয়েছে ভালো হয়েছে। আরো অনেক আগেই হওয়া উচিৎ ছিলো। কিন্তু এই মেট্রোরেল যানজট কমাতে পারবে না। সেই আশা করা ভুল হবে। একসময় যখন ঢাকা শহরে উড়াল সেতু তৈরি করা হলো- বলা হয়েছিলো, এবার যানজট কমবে। কিন্তু যানজট মোটেও কমেনি। বরং আরো বেড়েছে। উড়াল সেতু ও এই মেট্রোরেল তৈরি করতে গিয়ে সাধারন মানুষের অনেক কষ্ট হয়েছে গত কয়েক বছর। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রাস্তা গুলোতে গজব অবস্থা হয়েছে। এসব রাস্তায় যারা চলাফেলা করেছেন তাঁরা জানেন। আমি নিজেও এইসব রাস্তায় যাতায়াত করতে গিয়ে অনেক ভোগান্তির শিকার হয়েছি।

মেট্রোরেল বা উড়াল সেতু দিয়ে যানজট কমানো যাবে না। ঢাকা একটা গিঞ্জি শহর। অপরিকল্পিত শহর। এই শহরের বেশির ভাগ মানুষ গুলো অসভ্য। ইতর। ঢাকার যানজটের জন্য শহরের প্রতিটা লোক কোনো না কোনো ভাবে দায়ী। পুলিশও দায়ী। সিটি কর্পোরেশন দায়ী। নেতারা দায়ী। ঢাকার প্রতিটা রাস্তায় ফুটপাত এবং রাস্তা দখল করে দোকান বসে গেছে। যারা দোকান বসিয়েছে, তাঁরা প্রতিদিন চাঁদা দিচ্ছে। এই চাঁদা পুলিশ পাচ্ছে, স্থানীয় নেতা পাচ্ছে। যত্রতত্র দোকানপাট বসে যাওয়ায় সারাদিন যানজট লেগেই থাকে। এসব যানজট উড়াল সেতু ও মেট্রোরেল কমাতে পারবে না। আগে শহরের মানুষকে ভালো হতে হবে। ভদ্র হতে হবে। মানবিক হতে হবে। মানসিকতা উন্নত করতে হবে। চাঁদা ও ঘুষ একদম বন্ধ করতে হবে।

ক্ষমতাবানরা যেখানে সেখানে গাড়ি পার্ক করে। রংসাইড দিয়ে বীরের মতো গাড়ি চালায়। এবং শহরের অসভ্য ও নির্বোধ কিছু গাড়ির মালিক ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি পার্ক করে রাখে ঘন্টার পর ঘন্টা। এমন ভাব রাস্তাটা যেন তার বাপ দাদার সম্পত্তি। এবং তাদের কিছু বলাও যাবে না। কারন তাঁরা ক্ষমতাবান। ক্ষমতাবান মানুষেরা ভয়ংকর হয়। গত বারো বছরে দেশে কিছু মানুষ খুব বেশি ধনী হয়ে গেছে। এদের কারো কারো ২/৩ করে গাড়ি আছে। একটা ছেলের, একটা মেয়ের, একটা স্ত্রীর। নব্য ধনীরা যানজটের জন্য অনেকাংশে দায়ী। শহরের সবচেয়ে অসভ্য আরেকদল হলো বাইক চালকেরা। তাঁরা কোনো নিয়মের ধারধারে না। ফাক পেলেই ঢুকিয়ে দেয়। তাদের সহ্য ধৈর্য্য অনেক কম। এবং তাঁরা প্রচন্ড বেয়াদব হয়। এরা এতটাই অস্থির প্রকৃতির যে রাস্তায় সিগনাল পড়লে বাইক ফুটপাতে উঠিয়ে দেয়। এদের ভদ্র হতে হবে। মানুষ হতে হবে। নইলে জ্যাম কমবে না।

সরকার এবং পুলিশ যদি চায় শহরকে যানজট মুক্ত করবে তাহলে সেটা সম্ভব। খেয়াল করে দেখবেন, ভীষন ব্যস্ত রাস্তা। যানজট লেগে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি এ রাস্তা দিয়ে যাবেন। মুহুর্তের মধ্যে পুলিশ রাস্তার যানজট কমিয়ে ফেলে। পুরো রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়। ভেবে পাই না এত এত গাড়ি, বাস, রিকশা পুলিশ কোথায় লুকিয়ে ফেলল! যানজট কমানোর জন্য ফুটপাত ও রাস্তায় হকার বসানো বন্ধ করতে হবে। অবশ্য এটা পুলিশ ও স্থানীয় নেতা মেনে নেবেন না। তাহলে তাদের দৈনিক ইনকাম বন্ধ হয়ে যাবে। যানজট তখনই কমবে যখন শহরের মানুষ গুলো ভালো হবে। ভদ্র হবে। নিয়ম মানবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকবে। অযথা ক্ষমতার দাপট দেখাবে না। মানুষকে সৎ হবে। সব কিছু মিলিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশের যানজট কখনও কমবে না। এজন্য যাদের সুযোগ আছে, তাঁরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এই পোড়া দেশে থাকবে না।

যারা গাড়ি চালায়, তাদের দক্ষ হতে হবে। দক্ষ না হলে লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করতে হবে। আমাদের দেশে টাকা থাকলে লাইসেন্স ঘরে বসেই পাওয়া যায়। বাস যেখানে সেখানে থামা বন্ধ করতে হবে। এজন্য যাত্রীদের ভদ্র হতে হবে। সিটি কর্পোরেশন যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে তাহলে শহরের যানজট অর্ধেক কমে যাবে।সরকারী লোকজন যদি ঘুষ খাওয়া বন্ধ করে তাহলে যানজট কমে যাবে। অনেকে হয়তো বলবেন, ঘুষের সাথে যানজটের সম্পর্ক কি? সব কিছুর সাথে সব কিছুর একটা সামঞ্জস্য আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেল, উড়াল সেতু বা পদ্মাসেতুর চেয়ে বেশি জরুরী দেশে দূর্নীতি বন্ধ করা। দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলেই বাংলাদেশের ৭৫% সমস্যা আপনাতেই সমাধান হয়ে যাবে। লাগাম টানুন। ওদের থামান। দেশ বাঁচান। তাহলে মানুষ আপনাকে আজীবন শ্রদ্ধা করবে। ভালোবেসে স্মরণ করবে।

Huraira Faika
Hurairafaika
436 Points

Popular Questions