মানসিক শান্তি আনবো কী করে?

1 Answers   4.6 K

Answered 2 years ago

সুস্বাস্থ্য সুস্থতা ও শান্তিপূর্ণ জীবনের জন্য মানসিক প্রশান্তির বিকল্প নেই। মানসিক প্রশান্তি ও সুস্থতায় বিষন্নতামুক্ত থাকা খুবই জরুরি। জীবনের নানাবিধ বাধাবিপত্তি ও প্রতিকুল পরিস্থিতিতে মানসিক চাপমুক্ত থাকা খুবই কষ্টকর। কিন্তু বিষন্নতা, হতাশা, দুঃশ্চিন্তায় মানসিক চাপমুক্ত থাকতে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকনির্দেশনা ও অনুশাসন খুবই কার্যকর। বিষন্নতামুক্ত জীবনের জন্য ইসলামের দিকনির্দেশনাগুলো কী?

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস আজ। ‘অসম বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য’ স্লোগানে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনা বাড়াতে নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হচ্ছে আজ। মানসিক রোগ ও অশান্তি কমাতে ১৯৯২ সাল থেকে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

সমস্যাসংকুল পৃথিবীতে মানুষের প্রতিটি মুহূর্ত কাটে সীমাহীন অস্থিরতা ও দুঃচিন্তায়। ফলে কিশোর থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধরাও এ থেকে মুক্তির আশায় ভুল পথে পা বাড়ায়। জীবন ধ্বংসকারী মাদক ও নেশা জড়িয়ে পড়ে অধিকাংশ জীবন। আর তাতে মুক্তি না পেয়ে জড়িয়ে পড়ে মারাত্মক ক্ষতিকর ও অসামাজিক কাজে। অনেকে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি ৪০ সেকেন্ডে কেউ না কেউ আত্মহত্যার মাধ্যমে প্রাণ হারায়। এসব আত্মহত্যাকারীরা কোনো না কোনোভাবে মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকে। এ থেকে বুঝা যায়, মানসিক সুস্বাস্থ্য ও প্রশান্তি মানুষের কতবেশি জরুরি। কিন্তু এ মানসিক প্রশান্তি পাওয়ার উপায় কী?

১. চিকিৎসা গ্রহণ

চূড়ান্ত মানসিক অসুস্থতায় প্রথমেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসা নেওয়ার বিকল্প নেই। ইসলামে প্রচলিত দিনির্দেশনা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা নিষিদ্ধ নয়। তবে উন্মাদনাসহ সব ধরনের মানসিক রোগের ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি। পাশাপাশি আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং ডাক্তারের দেওয়া ঔষধ-পথ্য চালিয়ে যাওয়া।

২. নিয়মিত জিকির করা

জিকির মানুষের অন্তরকে প্রফুল্ল করে তোলে। সব দুঃশ্চিন্তা ও হতাশা থেকে মুক্ত থাকে মুমিন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

যারা বিশ্বাস করেছে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়। জেনে রাখ! আল্লাহর স্মরণেই (মানুষের) অন্তর প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাদ : আয়াত ২৮)

৩. নিয়মিত কোরআন পড়া

কোরআন তেলাওয়াতে মানুষের মনের স্থির হয়। মানসিক বিষন্নতা কমে যায়। কোরআন মানুষের জন্য মানসিকসহ অনেক রোগের সুচিকিৎসা এবং রহমত। আল্লাহ তাআলা বলেন-

نُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاء وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ وَلاَ يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إَلاَّ خَسَارًا

‘আমি কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করেছি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৮২)

৪. নামাজে যত্নবান হওয়া

বিষন্নতা ও অস্থিরতায় সুস্থ থাকতে নামাজে মনোযোগী হওয়া জরুরি। নামাজ মানুষের মনকে স্থির করে দেয়। যাবতীয় মানসিক অস্থিরতা দূর করে দেয়। যার প্রমাণ স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অস্থিরতা দূর করতে নামাজের ভূমিকা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-

إِنَّ الْإِنسَانَ خُلِقَ هَلُوعًا إِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ جَزُوعًا وَإِذَا مَسَّهُ الْخَيْرُ مَنُوعًا إِلَّا الْمُصَلِّينَ الَّذِينَ هُمْ عَلَىٰ صَلَاتِهِمْ دَائِمُونَ

‘নিশ্চয়ই মানুষ ভীরুরূপে সৃজিত হয়েছে। যখন তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে হা-হুতাশ করে (মনে অস্থিরতা তৈরি হয়)। আর যখন কল্যাণপ্রাপ্ত হয়, তখন কৃপণ হয়ে যায়। তবে তারা স্বতন্ত্র, যারা নামাজ আদায়কারী। যারা তাদের নামাজে সার্বক্ষণিক কায়েম থাকে।’ (সুরা মাআরিজ : আয়াত ১৮-২৩)

’তোমরা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আমার সাহায্য প্রার্থনা কর। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৪৫)

হাদিসে এসেছে, وكان –ﷺ– إذا حزبه أمرٌ فزِعَ إلى الصلاة রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন অস্থির হয়ে যেতেন তখন তিনি নামাজে দাড়িয়ে যেতেন।’ (আবু দাউদ)

শুধু তা-ই নয়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতেন, হে বেলাল- أقم الصلاة أرحنا بها নামাজের ইকামত দাও; এর মাধ্যমে আমাকে প্রশান্তি দাও।’ (আবু দাউদ)

৫. ক্ষমা প্রার্থনা করা

মানসিক চাপ সামলাতে ইসতেগফার কার্যকরী আমল। যেসব কারণে মানসিক চাপ বাড়ে, তন্মধ্যে অন্যায়-অপরাধে জড়ানো, অর্থকষ্টে থাকা, সন্তান-সন্তুতি না থাকা, জীবিকার অপ্রতুলতা ইত্যাদি হতাশা। এ সবের সমাধানে কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা হলো ইসতেগফার করা।

Quantum Mechanics by Muhammed Zafar Iqbal | কোয়ান্টাম

Rasel Rana
raselrana
462 Points

Popular Questions