Answered 2 years ago
ব্যাপারটা মহাকাশ আর পৃথিবী না শুধু, সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আপনি সহজ ও বোধগম্য ব্যাখ্যা চাইলেন তাই ব্যাপারটিকে জটিল না করে বলার চেষ্টা করছি।
আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী এটা হচ্ছে টাইম ডাইলেশন বা সময়ের প্রসারণ। এটা বুঝতে আপনাকে মহাশুন্যকে শুন্য মনে করলে হবেনা। মহাশুন্য হচ্ছে সময় ও স্থানের তৈরি একটা কাপড়ের মতো যা স্পেস-টাইম ফেব্রিক নামে পরিচিত। একটা টানটান কাপড়ের উপর একটা বল ছেড়ে দিলে দেখবেন তা দেবে যায়, তেমনি মহাশূন্যের ফেব্রিকেও নানা ভারী বস্তুর কারণে এমন খানাখন্দ আছে যা আমরা অভিকর্ষ নামে চিনি। এবং টাইম ডাইলেশনের একটি কারণ হচ্ছে অভিকর্ষ, আরেকটি কারণ হচ্ছে গতি। দুইটাই টাইম-স্পেসকে প্রভাবিত করে।
ধরুন আপনি পৃথিবীর মাটিতে দাঁড়িয়ে আছেন একটা ঘড়ি হাতে আর আপনার বন্ধু আরেকটি ঘড়ি হাতে অনেক গতিতে ছুটে যাচ্ছে অনেক দূরে (মনে করুন মহাশূন্যে, কারণ ওইদিকে গেলেই অসীম দূরত্বে যাওয়া যাবে এবং সময়ের পার্থক্য সহজে বোঝা যাবে), আর দুইজনের ঘড়িই একই সময় সেট করা ছিল। কিন্তু যিনি পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি দেখবেন উনার বন্ধুর ঘড়ি আস্তে চলছে আর উনার বন্ধু দেখবেন পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধুর ঘড়ি দ্রুত চলছে। এখন বন্ধু যদি আলোর ৯০% বেগে ছুটে ১০ মিনিট যায় তাহলে পৃথিবীতে থাকা বন্ধুর কাছে সেটা প্রায় ২০ মিনিট হবে! প্রথমে মনে হতে পারে ঘড়ির যান্ত্রিক সমস্যার কারণে এমন হচ্ছে, তবে এটা সব ধরণের ঘড়ি দিয়েই যুগে যুগে এর পরীক্ষা করা হয়েছে এবং একই ফলাফল পাওয়া গিয়েছে। আমাদের ঘড়ি মহাবিশ্বের নীতি মেনেই পরিচালিত হয় তাই টাইম-স্পেস ফেব্রিকের পরিবর্তনও এটা ধরতে পারে। বাস্তব উদাহরণ আপনি ISS থেকেই পাবেন। প্রতি বছর ISS এর সময় পৃথিবীর তুলনায় ০.০১ সেকেন্ড পিছিয়ে যায়। এজন্য বছর বছর এই পিছিয়ে যাওয়া সময় এগিয়ে নিতে হয় পৃথিবীর সাথে তাল মেলাতে। একই কাজ করা হয় জিপিএস স্যাটেলাইটগুলোতেও।
আবার একইভাবে ভারী বস্তুর যত কাছে যাবেন অর্থাৎ অভিকর্ষ বল যেখানে যত বেশি সেখানে সময় ততো ধীরে প্রবাহিত হয়। এক্ষেত্রে ISS পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে এর পৃষ্ঠের চেয়ে দূরে বলে এর সময় পৃথিবী পৃষ্ঠের চেয়ে দ্রুত চলার কথা, তবে এর গতির কারণে ধীর হওয়া সময় পৃথিবীর কম অভিকর্ষের কারণে দ্রুত হওয়া সময়ের চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে বলে মোটের উপর সময় কমে যায় পৃথিবীর পৃষ্ঠের তুলনায়।
rasel5265 publisher