ভিসা মুক্ত বিশ্ব কবে নাগাদ হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

1 Answers   2.7 K

Answered 2 years ago

আমি যখন সুইজারল্যান্ডের ভিসা নিয়ে ঐ ভিসা দিয়েই ইউরোপের প্রায় সবগুলো দেশ বিনা বাধায় বিনা ভিসায় ট্রেনে করে ঘুরে বেড়ালাম তখন বেশ অবাক লেগেছিল। জাতিসংঘের মিশনে দু’বার ইউরোপে কাজ করার সূবাদে ঘুরে বেড়ানোর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ছিলাম বেশ ভাল ভাবেই। তখনই আমি সেনজেন ভিসার সাথে পরিচীত হই। আমিও ভাবতাম পৃথিবীটা যদি এমন হতো! যদি এভাবেই এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলে যাওয়া যেত বিনা বাধায়- বিনা ভিসায়! আসলে সেটা হবার নয় কোনদিন। কেন হবার নয়? হবার নয় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভেদা-ভেদের কারনে। সাধারণত ইতালীর একজন নাগরীক কোন দিনই সুইজারল্যান্ডে যেয়ে অবৈধ ভাবে থেকে যাবে না- কারন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভারসাম্য। কিন্তু একজন সাধারণ বাংলাদেশী কিম্বা ভারতীয় কিম্বা শ্রিলংকান কিম্বা পাকিস্তানী ভিসা নিয়ে মরোক্কো বা লিবিয়া পর্যন্ত পৌছুতে পারলেই ভূমধ্যসাগর পারি দিতে যেয়ে সলিল সমাধীর মুখে পড়ছেন এরকম সচিত্র খবর নিরন্তর আমরা পাচ্ছি। কাজেই ভিসা মুক্ত বিশ্ব দেখার আগে নিদেন পক্ষে দারিদ্রমুক্ত বিশ্ব দেখার অপেক্ষায় আপনাকে থাকতে হবে।

ভিসা মুক্ত পৃথিবী আপনি কবে নাগাদ দেখতে পাবেন তা বলতে না পারলেও বাংলাদেশী হিসাবে কিম্বা ভারতীয় হিসাবে আপনি ৫০ এর অধিক দেশে যেতে পারবেন।

আর সেনজেন চুক্তিভূক্ত দেশের যে কোন একটির ভিসা যদি আপনি পেয়েই যান বিনা ভিসায় প্রায় পুরো ইউরোপই আপনি দেখে ফেলার সুযোগ পেয়ে যাবেন।

আসুন জেনে নেই সেনজেন ভিসা সম্পর্কে। ইউরোপীয় দেশগুলোকে নিয়ে একটি একীভূত অঞ্চল তৈরি করে দেশগুলোর মধ্যে মানুষের যাতায়াত সহজ করা লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮৫ সালে লুক্সেমবার্গের সেনজেন শহরে একটি চুক্তি সাক্ষর করে কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ। বলা যায় সেই চুক্তির ধারাবাহিকতাতেই সৃষ্টি হয়েছে সেনজেন এলাকা এবং সেনজেন ভিসা। ইউরোপের অধিকাংশ এলাকা এই সেনজেন অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত এবং কেবল সেনজেন ভিসা (Schengen Visa) নিয়েই ৯০ দিনের জন্য বেড়ানো বা ব্যবসা সংক্রান্ত প্রয়োজনে ইউরোপ ঘুরে আসা যায়।

সেনজেন ভিসায় আপনি সেনজেনভুক্ত ইউরোপের ২৬টি দেশ ভ্রমণ করতে পারেন। সেনজেনভুক্ত দেশগুলো হলো-

অস্ট্রিয়া, আইসল্যান্ড, ইতালি, এস্তোনিয়া,গ্রিস, চেক রিপাবলিক, জার্মানি, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, বেলজিয়াম, মাল্টা, লুক্সেমবার্গ, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া,স্পেন, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, হাঙ্গেরি।[1]

যেকোনো বাংলাদেশী বা ভারতীয় ভ্রমণ কিংবা ব্যবসায়িক কাজে ছয় মাস মেয়াদি ভিসার জন্য উপরের যে কোন একটি দেশের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। একটি দেশের ভিসা পেলেই বাকী দেশগুলোতে তিনি যেতে পারবেন। তবে যেকোনো দেশে একটানা ৯০ দিন কাটানো যাবে।

এছাড়াও আর্থিক খাতের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আরটন ক্যাপিটাল প্রভাবশালী পাসপোর্টের তালিকা তৈরি করেছে, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৭তম। ভারতের অবস্হান ৫৯।

বাংলাদেশের পাসপোর্টধারীদের ৫০ টি দেশে কোনো ভিসাই লাগবে না।

পাসপোর্টের প্রভাবের তালিকায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর অবস্থান হলো, আফগানিস্তান ৭৯ (পূর্বে ভিসা লাগবে না ৩৮ দেশে), ভারত ৫৯ (ভিসাহীন ৫৯), পাকিস্তান ৭১ (ভিসাহীন ৪৬), মালদ্বীপ ৫৩ (ভিসাহীন ৬৫), নেপাল ৭৯ (ভিসাহীন ৩৮), ভুটান ৭৯ (ভিসাহীন ৪০), শ্রীলংকা ৭০ (ভিসাহীন ৪৭)।

বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী পাসপোর্ট হলো যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের। তালিকায় এক নম্বরে থাকা দেশ দুটির পাসপোর্ট দিয়ে ভিসা ছাড়াই ১৪৭ টি দেশে যাওয়া যায়।

চেষ্টা করলে আপনি বাংলাদেশী হিসাবে ভিসা ছাড়াই ৫০টি[2] এবং ভারতীয় হিসাবে ৫৮টি [3] দেশ এবং সেনজেনভুক্ত একটি দেশের ভিসা নিয়ে প্রায় অর্ধেক পৃথিবী ঘুরে বেড়াতে পারেন।


Telha Setu
talhasetu
359 Points

Popular Questions