Answered 2 years ago
হঠাৎ প্রশ্নটি সামনে এলো তাই উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলাম।
প্রথমত, প্রশ্নে একটা ভুল আছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী আর বিএসএফ ভারতের দুটি আলাদা বাহিনী। ভারতীয় সেনাবাহিনী দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধীন, অন্যদিকে বিএসএফ দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি আধাসামরিক বাহিনী যাদের প্রধান এবং একমাত্র দ্বায়িত্ব ভারতের সাথে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের সীমান্ত পাহারা দেওয়া।
অন্যদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হচ্ছে বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি আধাসামরিক বাহিনী যাদের প্রধান কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পাহারা দেওয়া, সীমান্তে চোরাচালান, মাদক প্রতিরোধ সহ বিভিন্ন অপরাধ দমন করা। আর যুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অধীনে থেকে শত্রুর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করা। একারণে সেনা কর্মকর্তারা প্রেষণে বিজিবিতে নিযুক্ত হন এবং বিজিবিকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেন এবং সামরিক বাহিনীর মতই কমান্ড করেন।
এখন ২০০১ এবং ২০০৫ সালে বিএসএফ কেন বিজিবির হাতে মার খেয়েছে? এর কারণ তিনটি
১. বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা নীতি হচ্ছে রক্ষণাত্বক। অর্থাৎ শত্রুর আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে মাতৃভূমিকে হেফাজত করা। সেসময়ে বিএসএফ ছিল আক্রমণকারীর ভূমিকায় আর বিডিআর প্রতিরোধকারীর ভূমিকায়। সুতরাং নৈতিকভাবে বিডিআর এগিয়ে ছিল। তার উপর, সে যুদ্ধগুলো বাংলাদেশের মাটিতে হয়েছিল এবং এদেশের মানুষ বিডিআরকে সাহায্য করেছিল যা বিএসএফের মার খাওয়ার বড় একটি কারণ।
২. বিএসএফের দ্বায়িত্ব শুধু সীমানা পাহারা দেওয়া। তাদের ট্রেনিং অনেকটা পুলিশের মত, তাদের নিজস্ব অফিসার আছে। অন্যদিকে বিজিবির দ্বায়িত্ব সীমানা পাহারা দেওয়ার পাশাপাশি যুদ্ধকালীন সময়ে যুদ্ধ করা। যে কারণে তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ আছে (এ কারণে বিএসএফ কিন্তু বিজিবিকে প্রচন্ড ভয় পায়, বিশ্বাস না হলে বাংলাদেশী আর্মি অফিসারদের জিজ্ঞাসা করে দেখুন)। প্রত্যেক বাহিনীই তাদের দ্বায়িত্ব অনুযায়ী পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ পায় কিন্তু অসামরিক প্রশিক্ষণের সাথে সামরিক প্রশিক্ষণের কি তুলনা হয়??? এটাও বিএসএফের পরাজয়ের একটি কারণ।
৩. বিএসএফের অতিরিক্ত আত্ববিশ্বাস। অধিকাংশ ভারতীয় বাংলাদেশকে ছোট করে দেখে। সেদিন বিএসএফও বাংলাদেশকে ছোট করে দেখেছিল, ভেবেছিল এক তুড়িতে বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিবে। আর এটাই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় ভুল। এবং একারণেই তারা মার খেয়েছিল।
২০০১ এ বড়াইবাড়ি যুদ্ধে বিএসএফের ১৬ জন নিহতের দাবি করা হলেও আসলে এ সংখ্যা অনেক বেশি। এছাড়াও ২০১৯ এ রাজশাহী সীমান্তে তারা বিজিবির উপর গুলি চালালে তাদের একজন বিজিবির পালটা গুলিতে পটল তুলেছিল। এজন্যই হয়ত মার খাওয়ার ভয়ে সশস্ত্র বিজিবির উপর গুলি চালানোর চেয়ে নিরস্ত্র মানুষের উপর গুলি চালানোকেই বিএসএফ বেছে নিয়েছে।
riyazulislam publisher