ভাগ্য বলে আসলেই কি কিছু আছে, নাকি সব আমাদের হাতেরই কামাই?

1 Answers   10.3 K

Answered 2 years ago

এমন প্রশ্নের উত্তর আগেও দুই তিনবার দিয়েছি।


হ্যাঁ, সবকিছুই ভাগ্য দ্বারা নির্ধারিত হবে। এটা আমার নয় স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের বলা কথা, অর্জুনকে। কিন্তু তার সাথেই এই কথাও বলেছেন যে প্রত্যেক কে কর্ম করতে হবে।


সহজ কথায়, প্রতি পদে শুধু কর্ম করে যেতে হবে। কারণ তা আপনার অধীন। তাকেই শুধু আপনি পরিকল্পনা করতে পারেন, আরম্ভ করতে পারেন, আরো ভালো করে করতে পারেন, আবার করতে পারেন, নতুন ভাবে করতে পারেন, করা বন্ধ করে দিতে পারেন। একজন মানুষ হয়ে এটিই আপনার আয়ত্তে।


ভাগ্য আপনার সঙ্গে সঙ্গে চলবে। আপনার পরিকল্পনা সঠিক হতে পারে বা ভুল হতে পারে। কারণ আপনি উপলব্ধ তথ্যের ধারণার তা তৈরী করেছিলেন। সেটা ঠিক বা ভুল হতে পারে। আপনি ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল করতে চাননি।


আপনি কাজটা তখন শুরু করলেন যখন সেটা শুরু করার সঠিক সময় ছিলো না। সেটা আপনি অজান্তেই করবেন। হয়তো আপনি সঠিক সময় চয়ন করবেন।


আপনি কাজটা যেই ভাবে করবেন, তা ভুল বা ঠিক হবে। কারণ আপনি যেমন বুঝেছেন, তার অনুরুপ করবেন। আপনি ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল কেন করতে চাইবেন। কিন্তু সেই কাজটি সংক্রান্তে আপনার ভুল ধারণা তৈরী হওয়ার পরিস্থিতি, পরিবেশ তৈরী হবে। তার কারক বা ঘটক এসে জুড়ে বসবে।


ধরুন একজন বার বার একটি পরিক্ষা দিচ্ছেন, কিন্তু সফল হচ্ছেন না। আর একবছর উনার প্রস্তুতি তেমন ভালো না, শরীর ঠিক নেই, তারপরেও তিনি পরিক্ষায় সফল হলেন, চাকরী পেলেন। তা তার ভাগ্য। কিন্তু এই ভাগ্যের সাথে তার বিগত দুই তিন বছরের প্রস্তুতি, চেষ্টা, অসফলতা সব রকমের কর্ম উপলব্ধি জড়িত। এবার ধরুন কেউ তাকে আগেই বলে দিলো যে আপনার চাকরী নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, আপনি ভালো চাকরী করবেন, তাহলেও তাকে পরিশ্রম করতে হলো। কিন্তু তিনি উপলব্ধি করলেন যে ভাগ্য বলেও একটা কিছু আছে। কারণ যখন তিনি সবথেকে বেশী চেষ্টা করে আশা করছিলেন, তখন কিছুই হয়নি। যখন আশা কম করছিলেন, তখন হয়ে গেল।


এবার এটা কি তিনি পরিকল্পনা করতে পারেন বা করতে চাইবেন? না। তার হাতে শুধু পরিশ্রম করা ছাড়া আর কিছুই নেই। তাকে আগে থেকে বলে দেওয়া যেতে পারে যে কখন হবে, বা হবে না। কিন্তু তারপরেও তাকে শ্রম, কর্ম করতেই হবে। এবার যদি তাকে আগে থেকে কিছুই না বলা হয়, তাহলে ব্যক্তিটি কি মনে করবেন। তিনি নিজেই ফলকে ফলীভুত করেছেন। এতে তার নিজের মুল্যবোধ, আত্মসম্মান বৃদ্ধি পায়। নিজেকে কেউ কেটা ভাবতে সুবিধা হয়। আমি, আমি করতে খারাপ লাগে না। অন্যদের কাছে সম্মান পাওয়া যায়, প্রশংসা পাওয়া যায়। ইত্যাদি, ইত্যাদি।


ধরুন আপনার জন্মের বিবরণ দিয়ে, আমি আপনাকে বলে দিলাম যে ২৭টি নক্ষত্রের মধ্যে কোন চারটি নক্ষত্রের মধ্যে আপনার জীবণ সঙ্গিনীর নক্ষত্র হবে। এবং সে যখন আপনার জীবনে প্রবেশ করবে, তারপর আপনি কি রকমের কর্ম উপলব্ধি করবেন। সে নিজের সাথে কি রকম কর্ম নিয়ে আসবে। এবং তা আপনি মিলতে দেখবেন। এটা হলো ভাগ্য। মানে আমার আগে থেকে বলা হলো ভাগ্য সংক্রান্তে বলা। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হতে, আপনাকে কর্ম করতে হবে। বিবাহ করতে হবে। আপনি আপনার পছন্দের মানুষের সাথেই করবেন। তখন আপনি বুঝতে পারবেন। এটা আপনার মা বাবা ভাই বোন সন্তান সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আপনার প্রারব্ধ কর্ম আছে, তাই চারটি নক্ষত্র আপনার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাদের সংক্রান্তে কর্ম সর্বাধিক। তাই তাদের সঙ্ক্রান্তের মানুষ আপনাকে সর্বাধিক চালিত করবে, এবং তাই আপনার সব থেকে কাছের মানুষ জন সেই সংক্রান্তেরই হবে। এই ৬৫০ কোটি মানুষেরও বেশী মানুষের মধ্যে মাত্র গুটি কয়েক মানুষ তাই আপনার কাছে দাবী দাবা করছে, আপনাকে সুখ দুঃখ দিচ্ছে।


এই নক্ষত্র হিসাবের পদ্ধতি একটু লম্বা ও জটিল। মানে তা ধরিয়ে দিতে হলে তার আগা গোড়া বুঝিয়ে দিতে হবে। তাই এর উল্লেখ এখানে করলাম না। তারপরেও মজার কথা হলো, আপনি ২৭ টি নক্ষত্র নিয়ে বিস্তারিত ভাবে লেখা পড়া করুন। কিন্তু যেই নয়টি নক্ষত্রে আপনার গ্রহরা অবস্থিত তাদের বিষয়ে এবং আরো বিশিষ্ট ভাবে এই নয়টির মধ্যে চারটি নক্ষত্র সম্পর্কে আপনি যা বুঝবেন, তাতে ভুল থাকবেই। হাজার চেষ্টা করেও আপনি তা সহজে বুঝতে পারবেন না।যখন সেই নক্ষত্র সঙ্ক্রান্তে পরিস্থিতি আসবে, তখন আপনার মনে পড়বে না, বা মনে থাকবে না। এরকম কেন? কারণ তা আপনাকে কর্ম করে-ই উপলব্ধি করতে হবে। আমি এমন জ্যোতিষের নিজের সাথেও তা হতে দেখেছি, যাকে আপনি সন্যাসীর পর্য্যায় ধরতে পারেন।


তাহলে, বক্তব্য শুধু এইটুকু যে আমরা সবাই কর্মকে এই জীবন পর্য্যন্ত সীমিত করে দেখছি। এই জীবনে আমি আপনি যা করবো, তার ফলাফল এখানেই নির্দিষ্ট হবে, নিশ্চিত হবে, ফলিত হবে, আর তার হিসাব নিকাশ শেষ হবে।


আর শ্রীকৃষ্ণ আমাদের বলছেন যে সবকিছুই কর্ম ও কর্মফল। এবং কর্ম, এই জীবন ও জন্ম জন্মান্তর পর্য্যন্ত চলছে, চলবে যতক্ষণ না তা শুদ্ধ রুপে উপলব্ধি করা হচ্ছে।


যাকে আমি আপনি বা কেউ ভাগ্য বলে সম্বোধন করছি এবং কেউ মানছে, বা মানছে না। আগের থেকে বলে দেওয়ার বিধায় আপনি পারঙ্গত হতেও পারেন, নাও হতে পারেন। আপনি জানতে পারেন, নাও জানতে পারেন। কিন্তু কর্ম ফলের প্রবাহ তো সর্বদাই প্রবাহমান এবং তা-ই ভাগ্য।


Rocky Khan
Rocky Khan
547 Points

Popular Questions