বেগুনকোদর, পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলায় একটি গ্রাম। পরিচিতির দিক থেকে গ্রাম হিসেবে পরিচিতির চাইতেও, অধিক পরিচিতি, বেগুনকোদর রেল স্টেশনটির। এই রেলস্টেশনে, ভূতেদের বিচরণ করতে দেখা যায় বলে নানা কাহিনী লোকের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায়।
শুরুটা বহু বছর আগে। শোনা যায় কোনো একদিন রেল স্টেশনের রেল লাইনে একজন মহিলা কাটা পড়েন। আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা, কিছু একটা হতে পারে। পরবর্তী সময়ে স্টেশন মাষ্টার রাতের দিকে ওই মহিলাকে সাদা কাপড় পড়ে ট্রেন লাইনে ঘোরাঘুরি করতে দেখতে পান। তো সেই তেনাকে দেখার পর, ক'দিনের মধ্যে স্টেশন মাষ্টার ও তার পরিবারকে কোয়ার্টারে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এই ঘটনার সাথে সাথেই গ্রামের লোকেরা স্টেশনটিকে ভুতুড়ে স্টেশন বলে স্ট্যাম্প মেরে দেন। শোনা যায়, পরবর্তী সময়ে ও গ্রামের বিভিন্ন লোক রাতের দিকে স্টেশনে, তেনাদের দেখতে পেয়েছেন, তার ফলে স্টেশন মাস্টারের ভূত দেখার কাহিনী একটি বিশ্বাসযোগ্যতায় পর্যবসিত হয়। সৃষ্টি হয়, ভূতের ভয়।
এসব ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার ফলে, স্টেশনটি ভুতুড়ে স্টেশন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
ক্রমে ক্রমে, এই স্টেশনটি একটি পরিত্যক্ত স্টেশন হয়ে পড়ে। প্রায় চল্লিশ বছরেরও বেশী সময় ধরে, স্টেশনটি, রেল স্টেশনের স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে সরে যায়।
পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী, কেন্দ্রীয় সরকারে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন স্টেশনটিকে আবার চালু করার জন্য উদ্যোগ নেন। চালু হয় স্টেশন, তবে ওই অনেকটা হল্ট স্টেশনের মতোই। সন্ধ্যের পর সেখানে কোনো ট্রেন থামে না, কারণ, সে সময়টা তেনাদের পছন্দের সময় বলে, স্টেশনে লোকজনও থাকেন না।
এ নিয়ে যুক্তিবাদী সংস্থার অনেকেই স্টেশনে গিয়ে রাত কাটিয়ে এসেছেন এবং ভূতটুতের কোনোরূপ অস্থিত্ব নেই বলেই জানিয়েছেন। তাঁদের ধারণা, কিছু সমাজবিরোধী লোকজন, তাঁদের কুকর্ম সাধনের জন্য স্টেশনটিকে ব্যবহার করে এবং বিভিন্ন রকম কায়দা করে, ভূতের ভয়কে জিইয়ে রাখে, যাতে স্টেশনে জনসমাগমের জন্য, কুকর্ম সাধনে অসুবিধে না হয়।
সরকারীভাবেও জনসচেতনতা প্রচার করা হয়েছে, তবু ও সেরকম বিশেষ কোনো পরিবর্তন দেখা যায় নি।
ভূত আছে কি নেই, সেটা বিতর্কিত বিষয়। কিনতু, শুধুমাত্র ভূতের ভয়েই একটি স্টেশন চল্লিশ বছর ধরে, পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিলো, এ নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশই নেই।
বেগুনকোদর রেল স্টেশনের কোড BKDR। ওখানে যেতে হলে, ট্রেনে যাওয়াই সুবিধে হবে। হাওড়া স্টেশন থেকে চার পাঁচটি ট্রেন, অন্য স্টেশন যাওয়ার পথে বেগুনকোদরে থামে। দূরত্ব প্রায় একশো চল্লিশ কিলোমিটার, ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যাবে।
অনেকে আবার ভূত চতুর্দশীতে, তেনাদের দর্শন লাভের আশায়, বেগুনকোদর চলে যান।
তেমন জরুরী কাজ না থাকলে, আপনি কেন যেতে চাইছেন ?
একা গেলে, বলা তো যায় না, ভয় ও তো পেতে পারেন। অবশ্যই আমাকে সাথে নিয়ে যাবেন। কারণ, সন্ধ্যে নামার পর থেকেই আমি, ভূতের ভয়ে সিঁটিয়েই থাকি।
talhauddin publisher