বজ্রবাহি মেঘ উর্ধ্বমুখী বায়ুপ্রবাহের ফলে যখন বায়ুমন্ডলের অত্যন্ত শীতলতর স্থানে প্রবেশ করে তখন পানির কণাগুলো ধীরে ধীরে বরফে পরিণত হয়। একপর্যায়ে এই বরফের টুকরোগুলো বৃষ্টির সাথে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়, একেই শিলাবৃষ্টি বলে।
আমাদের দেশে (ভারত-বাংলাদেশ) গ্রীষ্মকালে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বেশি হয় বলে, তখন শিলাবৃষ্টি হতে দেখা যায়; বিশেষ করে কালবৈশাখীর সময়। এর সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে চৈত্র-বৈশাখের প্রচণ্ড গরম এর একটি কারণ বলে ধরে নেওয়া হয়।
এবার আসেন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় আসা যাকঃ
ঝড়ো আর সংকটপূর্ণ আবহাওয়াতে যখন শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ উপরের দিকে উঠতে থাকে, তখন শিলা তৈরী হয়। যখন 'Convective Cell' [পাদটীকা দ্রষ্টব্য] তৈরী হয়, তখন উষ্ণ বায়ু উপরের দিকে উঠতে থাকে, আর শীতল বায়ু নিচের দিকে নামতে থাকে। যখন সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ খুব শীতল পানির উৎস পাওয়া যায়, তখন মেঘে বরফ জমতে থাকে ঐ শীতল পানির দানা আর শীতল বায়ুর সংমিশ্রণে।
উর্ধ্বমুখী বায়ু এমন একটা অবস্থানে পৌছায় যেখানে তাপমাত্রা শূন্যের নিচে চলে যায়, অর্থাৎ যেখানে পানি বরফ হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে ঊর্ধ্বমুখী বায়ুতে সৃষ্ট বরফ খণ্ডগুলো ঐ বায়ুর প্রবাহ থেকে ছুটে গিয়ে নিচের দিকে পড়তে থাকে। এই ঊর্ধ্বমুখী বায়ুর উপরে উঠে যাওয়ার পরে বরফ কণা সৃষ্টি হয়ে নিম্নগামী হওয়ার প্রক্রিয়া পুনঃ পুনঃ চলতে থাকে এবং বরফ কণার উপর বার বার আস্তরণ জমা হয়ে তা বরফ খণ্ডের আকার নেয়। এই ঊর্ধ্বমুখী বাতাসের কিন্তু বেশ ভালোই গতি থাকতে হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই গতি ৬০ মাইল/ঘন্টাও হতে পারে।
আপনি যদি একটা শিলা খন্ড-কে অর্ধেক করে কেটে নিতে পারেন , তাহলে এর ভেতরকার কেন্দ্রিভূত স্তরগুলো আপনার কাছে দৃশ্যমান হয়ে উঠবে। যখন শিলা ঊর্ধ্বাকাশ থেকে পতিত হতে থাকে, তখন এটি পতনশীল অবস্থায় কিছুটা গলে যায়। আর এমন তাপমাত্রায় গলে, যার কারণে এটা আবার ঊর্ধ্বমুখী বায়ুর সাথে উপরে উঠে যায়। সুতরাং, এর থেকেই বোঝা যায় যে খুব বড় আকারের শিলাখন্ড আসলে অনেক বারের পুনঃ প্রক্রিয়ার ফসল।
এই শিলাখন্ডগুলো বৃষ্টির পানির কণা বা মেঘ কে আশ্রয় করে ক্রমশ ভারি হয়ে উঠে। এবং, ঊর্ধ্বগামী বায়ু যখন আর এতটা ভারি কণা বহন করতে পারে না, তখন শিলাখন্ড বৃষ্টির সাথে ভূমিতে পতিত হতে থাকে। যাকে আমরা শিলাবৃষ্টি হিসেবে দেখতে পাই।
শিলাবৃষ্টির সাথে আসলে কোন দেশের তাপমাত্রার সরাসরি সম্পর্ক নেই। শিলাবৃষ্টি হয় ঝড়ের সময়। শীতপ্রধান দেশেও উপরোক্ত সকল ক্রাইটেরিয়া পূর্ণ হলে, সেখানেও শিলাবৃষ্টি হয়—যেটাকে তারা 'Hail Storm' বলে থাকে। যদিও তাদের এটাকে ঠিক ঝড় বলা যায় না, এটা আসলে বজ্র- বৃষ্টির মত বড় কোনো ঝড়ের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া । শিলাবৃষ্টি তৈরী-ই হয় ঝড়ের মেঘ থেকে।
এই শিলাবৃষ্টির প্রতিটি শিলার গড়ে ব্যস হয় ৫ থেকে ১৫০ মিলিমিটারের মধ্যে। পুরো পৃথিবীর আবহাওয়া অধিদপ্তরগুলোর সূত্রে, কোনো শিলার ব্যস যদি ন্যুনতম ৩/৪ ইঞ্চি না হয়, তাহলে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না। শীতপ্রধান দেশগুলোর তুলনায় পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে শিলাবৃষ্টি বেশি হয়। সাধারণত শিলাবৃষ্টির স্থায়িত্ব ১৫ মিনিটের বেশি হয় না।
~পাদটীকাঃ
Convection cell
প্রবাহী পদার্থের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়, যখন তরল অথবা গ্যাসীয় পদার্থের ঘনত্বে পার্থক্য দেখা দেয়। যখন নির্দিষ্ট প্রবাহীকে তাপ প্রয়োগ করা হয়, এর আয়তন বেড়ে যায় এবং ঘনত্ব হ্রাস পেতে থাকে এবং ঐ আয়তনের তরলের প্লবতা এর আশেপাশের অঞ্চলের প্রবাহীর তুলনায় বেড়ে যায়। তখন শীতলতর ও কম ঘন প্রবাহী, উষ্ণ ও ঘন প্রবাহীর নিম্ন অঞ্চলে আশ্রয় নেয় এবং একে উপরের দিকে উঠার জন্য বল প্রয়োগ করে। গতীয় এ প্রক্রিয়াকেই বলে convection এবং চলমান প্রবাহী পদার্থটিকে বলে convection cell.
ধন্যবাদ।।
ritukhatun publisher