Answered 2 years ago
১। বিবর্তন কি শুধু একটা তত্ত্ব যেটি এখনো প্রমাণিত হয়নি?
উত্তরঃ বিবর্তন প্রমাণিত কিনা সেটা জানার আগে প্রমাণ ব্যাপারটা একটু ক্লিয়ার করে নেওয়া ভালো। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রমাণ সবসময় গাণিতিক নাও হতে পারে। উদাহরণস্বরুপ, বিশ্ব সৃষ্টি বিগ ব্যাং তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়। বিগ ব্যাং ঘটেছে প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর আগে। একে কোনো গাণিতিক সমীকরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই। কিন্তু বিং ব্যাং এর পর থেকে মহাবিশ্ব কিভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে, কিভাবে মহাবিশ্বের বিভিন্ন গ্যালাক্সি, নক্ষত্র ইত্যাদি কাজ করে এসবের বিভিন্ন গাণিতিক মডেল আছে। মহাবিশ্বে ঘটে যাওয়া ঘটনা সমূহ বিগ ব্যাং দিয়ে চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। এখন পর্যন্ত এমন কোনো ঘটনা বা বস্তু পাওয়া যায়নি মহাবিশ্বে যেটা বিগ ব্যাং দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবেনা।
বিবর্তনের ব্যাপারটা তেমনি। জিনতও্ব, ফসিল রেকর্ড, বিভিন্ন উদ্ভিদ এবং প্রাণীর শারীরিক পরিবর্তন ইত্যাদি সবকিছু বিবর্তন দিয়ে খুব চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। ল্যাবরেটরিতে সীমিত পর্যায়ে বিবর্তনকে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত বিবর্তন তত্ত্বের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া যাওনি।
বিজ্ঞানের কোনো সম্ভান্ত জার্নালে বিবর্তনের বিরুদ্ধে কোনো লেখা কখনো ছাপা হয়নি, বরং নেচার, সায়েন্টিফিক আমেরিকান, এবং জীব বিজ্ঞানের প্রায় সব জার্নালে বিবর্তন এর পক্ষে অহরহই লেখা ছাপানো হয়।
২। বিবর্তন এর প্রমাণ কী?
উত্তরঃ বিবর্তন নিয়ে করা সব ধরনের পর্যবেক্ষণ এবং এক্সপেরিমেন্ট বিবর্তনকেই সাপোর্ট করে। শত কোটি বছর আগে থেকে শুরু করে সাম্প্রতিককালের সব ফসিলগুলোকে কালানুক্রমিকভাবে সাজালে পরিষ্কারভাবে বংশ থেকে বংশে ঘটে যাওয়া শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রানীর মধ্যে শারীরিক এবং জিনগত সাদৃশ্য এবং পার্থক্য থেকেও বিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া যায়। ফসিল রেকর্ড দেখে যেসব প্রাণীকে অতীতে একই পুর্বপুরুষ থেকে আগত মনে করা হয়েছিলো পরবর্তীতে জিন বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে তাদের মধ্যে জিনগত মিল প্রচুর। এর মানে ফসিল রেকর্ড সঠিকভাবে বিবর্তন এর প্রক্রিয়াকে সাপোর্ট করে।
৩। বিবর্তন কি প্রমাণ করে ঈশ্বর এর অস্তিত্ত্ব নেই?
উত্তরঃ বিবর্তন আর দশটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মতোই একটি তত্ত্ব। বিগ ব্যাং তত্ত্ব, মধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব ইত্যাদির সাথে যেমন ঈশ্বর এর কোনো সম্পর্ক নেই বিবর্তন এর সাথেও ঈশ্বর এর কোনো সম্পর্ক নেই।
৪। কিন্তু বানর থেকে মানুষ এসেছে এতে আমাদের মর্যাদা ছোট হয়ে যাচ্ছে না?
উত্তরঃ প্রথমত, মানুষ বানর থেকে আসে নাই। মানুষ এবং বানর জাতীয় প্রাণী লক্ষ কোটি বছর আগে শিম্পাঞ্জীর মতো দেখতে একটি প্রজাতি থেকে বিবর্তিত হয়েছে। আর এতে আমাদের মানুষ হিসেবে মর্যাদা কমে যাওয়ার কিছু নেই। মানুষ সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী, মানুষের সংস্কৃতি অনেক সমৃদ্ধ, মানুষের চিন্তা-চেতনা অনেক উন্নত – এগুলোর কিছুই তো মিথ্যা হয়ে যাচ্ছেনা বিবর্তনের কারণে।
৫। বিবর্তন কিভাবে সত্যি হতে পারে? প্রাণহীন নির্জীব বস্তু থেকে মানুষের মতো এতো জটিল প্রাণী কিভাবে তৈরি হতে পারে? এটা কি ঝড়ের কবলে পড়ে লোহা আর প্লাস্টিকের স্তুপ থেকে একটা বোয়িং প্লেন তৈরি হওয়ার মতো না?
উত্তরঃ ব্যাপারটা আপাত দৃষ্টিতে তাই মনে হতে পারে। একটা জিনিস চিন্তা করে দেখুন, আমরা সবাই কিন্তু মায়ের পেটে একটা নির্জীব অণু থেকে মাত্র নয় মাসে একটা জটিল মানব শিশুতে পরিণত হই! সেখানে বিবর্তন ঘটেছে কয়েক বিলিয়ন বছর ধরে। আর প্রাকৃতিক নির্বাচন সবসময় উপকারী পরিবর্তনটি গ্রহণ করার ফলে বিবর্তন আরো ত্বরাণ্বিত হয়। সব ধরণের পর্যবেক্ষণ যেখানে বিবর্তনকে সমর্থন করছে সেখানে শুধু “সত্যি ভাবতে কষ্ট হয়” ভেবে একটা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে ফেলে দেওয়ার কোনো মানে হয়না।
Mamun Khan publisher