পৃথিবী একটি বিশালাকার তড়িৎ পরিবাহী গোলক। অন্যান্য বস্তুর সাপেক্ষে পৃথিবীর বিভব আমরা 0 ধরে নিই। দুটি বস্তুর মধ্যে বিভবের পার্থক্যই যে তড়িৎপ্রবাহের কারণ, এটা আমরা প্রায় সবাই জানি। এখন, কোনো প্রাণী যদি তড়িদাহিত বস্তুকে স্পর্শ করে, তখন সেই বস্তু এবং পৃথিবীর মধ্যে থাকা বিভব পার্থক্যের কারণে তড়িৎ প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ পায় (প্রাণীদেহ মধ্যস্থ তরলের মধ্যে বিভিন্ন আয়ন থাকায় প্রাণীদেহ তড়িৎ পরিবাহী)। প্রাণীদেহ একটি সর্বোচ্চ মাত্রার তড়িৎপ্রবাহ সহ্য করতে পারে, যদিও এই সর্বোচ্চ মাত্রা প্রাণীবিশেষে পরিবর্তনশীল। আহিতবস্তু ও পৃথিবীর মধ্যে বিভব পার্থক্য যদি অত্যন্ত বেশি হয়, যার ফলে প্রাণীদেহের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ সর্বোচ্চ মাত্রার চেয়ে বেশি হয়ে পড়ে, তখন প্রাণীটির মৃত্যু ঘটবে।
মানুষের ক্ষেত্রে মোটামুটি 1 mA current প্রবাহিত হলে শরীরে সামান্য ঝাঁকুনি হয়। এর চাইতে বেশি মাত্রায় শক খেলে অস্বস্তি বা ব্যাথা হয়। আরো তীব্র শকের প্রভাবে শরীর অনৈচ্ছিক পেশী সংকোচনের দ্বারা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট অঙ্গটিকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করে। 500 থেকে 1000 ভোল্টের কারেন্ট লাগলে স্থানটি পুড়ে যায়, এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গেরও ক্ষতি হয়।
অতি উচ্চ মাত্রার current shock এর ফলে ঘটতে পারে tissue damage, fibrillation of heart, cardiac arrest এর মত ঘটনা, অবশেষে মৃত্যু।
ঘরোয়া বৈদ্যুতিক লাইনের AC কারেন্ট 30 mA-এর মত কম মাত্রাতেও ঘটাতে পারে চরম বিপদ! এক সেকেন্ডেরও কম সময় ধরে এই কারেন্ট লাগলে ঘটতে পারে ventricular fibrillation। Fibrillation সচরাচর প্রাণঘাতী হয়ে থাকে কারণ এই ঘটনায় হৃৎপিণ্ডের পেশীতন্তুগুলি ছন্দবদ্ধ সংকোচনের পরিবর্তে যার যার নিজের মত অর্থাৎ স্বাধীনভাবে সংকুচিত হয়ে যায়, ফলে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়। Ventricular fibrillation ঘটলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়, ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না। উচ্চমাত্রার বৈদ্যুতিক শক স্নায়ুতন্ত্রের চরম ক্ষতিসাধন করে।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলেই প্রাণীরা মারা যাবে এমনটা নয়, কিন্তু নিরাপদ মাত্রার বেশি তীব্রতার কারেন্ট শক খেলে বিষয়টি serious দিকে মোড় নিচ্ছে!
Maruf Alam publisher