Answered 2 years ago
লুই পাস্তর
বিজ্ঞানী লুই পাস্তর যে কারণে হ্যান্ডসেক করতে ভয় পেতেন করোনাভাইরাসকে দূরে রাখতে তার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখে আসছি প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে।
বিগত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে হ্যান্ডসেক প্রথা প্রায় উঠে গিয়েছিল। চিকিৎসকরা ২ ঘন্টা পর পর জীবাণু নাশক পদার্থ হাতে মেখে উত্তমরূপে হাত ধুয়ে ফেলার জন্য সাবধান বাণী শোনাতেন। বলতেই হয়, আমাদের হস্তদ্বয় যেমন একদিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের একটি, তেমনি রোগ ব্যাধি টেনে আনতেও পয়লা নম্বর আসামিদের দলভুক্ত।
বেশিরভাগ রোগব্যাধির মূলে রয়েছে রোগ জীবাণু। বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর আবিষ্কার করেন যে অণুজীবগুলি গাঁজন প্রক্রিয়ার (fermentation) মাধ্যমে রোগ সৃষ্টি করে। তা রোধ করতে খাদ্যদ্রব্য ও পানীয় পাস্তুরিত (pasteurization) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোগ বালাই নির্মল করে ব্যবহার করে যেতে পারে।
লুই পাস্তুর গবাদি পশুর অ্যানথ্রাক্স রোগের উৎস এবং তা থেকে রক্ষার উপায় হিসেবে ভ্যাকসিন তৈরি করেন। জলাতঙ্ক রোগ যা যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করেছিল তা রোধ করার জন্য ভ্যাকসিন এবং ঔষধ তৈরি করেন।
মানব কল্যাণে আবিষ্কৃত কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে জীবাণু তত্ত্বের জনক বলে অভিহিত করা হয়। জীবাণুকে তিনি যত অন্তরঙ্গভাবে জানতেন এবং তা থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে সমসাময়িক কারো জানা ছিল না।
ল্যাবরেটরীতে কর্মরত লুই পাস্তর
লুই পাস্তুর নিজে চিকিৎসা ছিলেন না। তিনি ছিলেন কেমিস্ট। চিকিৎসকদের এক সম্মেলনে বলেন, আমি যদি সার্জন হতাম তাহলে প্রতিটি অপারেশনের পর হাত মুখ ধুয়ে নিতাম এবং অস্ত্রপাতিগুলো সিদ্ধ করে জীবাণুমুক্ত করতাম।
যদিও তিনি রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন, জীবাণুকে সযত্নে দুরে রাখতে সব সময় সচেষ্ট ছিলেন। তিনি মানস চক্ষে দেখতে পেতেন কোন কোন সম্ভাব্য ক্ষেত্রে রোগ জীবাণু কিলবিল করছে। এ কারনে একান্ত প্রয়োজন না হলে তিনি কারো সঙ্গে করমর্দন করতেন না। করলেও সঙ্গে সঙ্গে হাত ধুয়ে ফেলতেন। একে জীবাণুভীতি না বলে জীবাণু থেকে সাবধানতা বলাই যুক্তিযুক্ত। কারণ, তিনি রোগ জীবাণুর আক্রমণ ঠেকাতে সচেতন থাকলেও সাহসের সাথে পাগলা কুকুরের মুখে হাত ঢুকিয়ে লালা সংগ্রহ করতেও ভয় পেতেন না।
আজ থেকে ঠিক ২০০ বছর আগে ১৮২২ সালে জন্মগ্রহণকারী ফরাসি বিজ্ঞানী লুই পাস্তর হাতের মাধ্যমে রোগ বিস্তার প্রতিরোধ করার যে কায়দা কানুন শিখিয়ে গিয়েছেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও পদপ্রদীপের আলোয় এনে তার গুরুত্ব নতুন করে প্রমাণ করা হলো।
shuvo publisher