Answered 2 years ago
আসসালামু আ'লাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু!
প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
পোষা প্রাণী আর বাচ্চাদের প্রতি লাফিজার দারুণ আকর্ষণ মাহির বিয়ের পর থেকেই টের পেয়ে আসছে। বিশেষত বিড়াল। মনে মনে মাহিরের ইচ্ছা ছিল একটা সাদা বিড়ালছানা ধরে এনে স্ত্রীকে দেবে।
সেদিন ক্লাস শেষে দুজনে রিকশায় চড়ে কাঁটাবনের পশুপাখির দোকানগুলোর পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। লাফিজা বিড়াল দেখে বলে উঠল, “কী সুন্দর! একটা কিনে দাও না”।
ক্লান্ত মাহির বউয়ের উৎসাহের সাথে তাল মেলাতে পারলো না। আকাশের দিকে উদাস দৃষ্টি দিয়ে শুধু বলেছিল, “বিড়াল কেনাবেচা হারাম” [১]। লাফিজা আর কোনও কথা বলে নি। অভিমান কি না কে জানে।
বিড়াল উপহার দেবার সুযোগ আজ হলো। একটা কাজে বাসা থেকে বেরিয়েছিল মাহির। ফেরার পথে এক পাঁচিলের নিচে ধবধবে সাদা একটা বিড়ালছানা চোখে পড়লো। সুবহানাল্লাহ! আশ্চর্য সুন্দর দেখতে। মাহির কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো বিড়ালছানাটার মা আশেপাশে আছে কি না। এরপর বুঝল বাচ্চাটা মায়ের ওপর নির্ভরশীলতা ত্যাগ করেছে। মাহির চুকচুক করে ডাকতেই পায়ের কাছে এল। কোলে তুলে সে কিছুক্ষণ আদর করলো। এরপর ওটাকে নিয়েই বাসায় ফিরল।
মাহিরের হাতে বিড়ালছানা দেখে লাফিজা বেশ খুশি। বিড়ালটাকে হাতে নিয়ে অনেক্ষণ আদর করলো। হঠাৎ ছানাটাকে হাত থেকে নামিয়ে নিচে রাখলো। এক হাত দিয়ে আরেক হাত মুছতে মুছতে বললো, “আচ্ছা আমি তো একটুপর নামাজ পড়বো। এখন বিড়ালকে নাড়াচাড়া করলাম। বিড়াল নাপাক কি না বুঝতে পারছি না”।
মাহির হেসে বললো, “আমি এটা জেনেই একে বাসায় এনেছি”।
লাফিজা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে জানতে চাইলো, “বিড়াল কি পবিত্র প্রাণী নাকি অপবিত্র?”
মাহির বললো, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বিড়াল অপবিত্র প্রাণী নয়। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, তিনি এবং আয়েশা (রা) একই পাত্র থেকে ওযু করেছেন, যা থেকে এর আগে বিড়াল পানি পান করেছে”[২]।
মাহিরের কথা শুনে লাফিজা ভরসা পেলো। তার মানে বিড়াল পোষা যাবে।
এবার মাহির জিজ্ঞেস করলো, "আচ্ছা লাফিজা, বলো তো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম–এর কোন সাহাবী তাঁর সবচেয়ে বেশি হাদীস বর্ণনা করেছেন?"
লাফিজা বললো,“আবু হুরায়রা (রা)”।
- হুরায়রা মানে কী, জানো?
- জানি। বিড়াল। আবু হুরায়রা মানে বিড়ালের বাবা।
- আবু মানে কিন্তু কেবল বাবা-ই হয় না। মালিক বা সঙ্গী অর্থেও ‘আবু’ ব্যবহার হয়।
- হুম। আচ্ছা, আবু হুরায়রা (রা)–কে এই নামটা আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই দিয়েছিলেন না?
- না। জাহিলি যুগে আবু হুরায়রার নাম ছিলো আবদু শামস। ইসলাম গ্রহণের পরে...
লাফিজা মাহিরের কথার মাঝখানে বলে উঠল, “আবদুশ শামস? মানে সূর্যের বান্দা? শির্কি নাম বটে!”
“হ্যাঁ”–বললো মাহির, “এজন্য ইসলাম গ্রহণের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নাম রাখেন আব্দুর রহমান। আবু হুরায়রা উপনামটা তাঁর ছোটবেলাতেই পাওয়া। সেসময় একটা বিড়াল ছানার সাথে তিনি সবসময় খেলতেন। তা দেখে উনার বন্ধুরা তাঁর নাম দেন ‘আবু হুরায়রা’। আস্তে আস্তে এ নামেই তিনি সকলের মাঝে পরিচিত হন এবং তাঁর আসল নামটা ঢাকা পড়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম–সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বাড়লে তিনি তাকে ‘আবু হিররিন’ নামে ডাকতেন” [৩]।
লাফিজার অনেকদিন ধরে একটা বিষয় জানার কৌতূহল ছিলো। লজ্জার কারণে অনেককেই জিজ্ঞেস করতে পারেনি। বিড়াল প্রসঙ্গ উঠায় আজকে আবার মনে পড়লো।
মাহিরকে জিজ্ঞেস করলো, “বাসর রাতে বিড়াল মারা”–এই বাগধারাটা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। এটার মানে কী, জানো?”
লাফিজার প্রশ্ন শুনে মাহির হাসলো। হাসি থামিয়ে বললো, “এটার মানে কী সেটা আমারও জানার আগ্রহ ছিলো। কয়েকদিন আগে জানলাম”।
লাফিজা বললো, “বলো তো ঘটনাটা”।
মাহির বলা শুরু করলো, “এক রাজা বাসর রাতে ঘরে ঢুকলেন। রাণীর পোষা একটা বিড়াল ছিলো। বিড়ালটা রাণীর পাশে থাকতো সবসময়। রাজা যখন রাণীর সাথে কথা বলা শুরু করলেন তখন বিড়ালটি ‘মিয়াও’ করে উঠলো। প্রথমবার মিয়াও করার পর রাজা বললেন 'এক'। তারপর আবার রাণীর সাথে কথা বলা শুরু করলেন। বিড়ালটা আবার 'মিয়াও' করে উঠলো। রাজা বললেন 'দুই'। তৃতীয়বার যখন বিড়ালটি 'মিয়াও' করে উঠলো রাজা তখন 'তিন' বলে তলোয়ার দিয়ে বিড়ালটাকে মেরে ফেললেন। রাজার এমন আচরণ দেখে রাণী ভয় পেয়ে যান।
সকালে রাজা রাণীকে বললেন, এক গ্লাস পানি এনে দিতে। রাণী তখন পানি এনে দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। রাজা তখন বললেন 'এক'। রাণী ভয় পেয়ে রাজার 'তিন' বলার আগে পানির গ্লাস দিয়ে গেল”।
বাসর রাতে বিড়াল মেরে বউকে বশ করার কথা শুনে লাফিজা হাসছে।
বিড়াল মেরে বউ কন্ট্রোল করার এমন এপ্রোচ শুনে লাফিজা বললো, “এরকম রূঢ়ভাবে বউয়ের সাথে আচরণ তো ইসলামও সাপোর্ট করেনা”।
মাহির লাফিজার কথা সমর্থন করে বললো, “তা তো বটেই। নারীদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড় থেকে” [৪]।
- আচ্ছা এই হাদীসটা আমিও পড়েছিলাম। পাঁজরের হাড়ের সিগনিফিক্যান্সটা ভুলে গেছি।
- পাঁজরের হাড় হলো বাঁকা হাড়। নারীদের মধ্যে স্বভাবগত বক্রতা আছে। এই বক্রতা তাদের সৌন্দর্য। এই হাদীসে বলা হয়েছে মেয়েদের সংশোধনে জোর করা যাবে না। কারণ বাঁকা হাড়কে সোজা করতে চাপ দিলে তা ভেঙ্গে যাবে। আবার যেভাবে আছে সেভাবে একেবারে ছেড়ে দিলেও সমস্যা। কারণ তাহলে শোধরাবে না। এজন্য নসীহত করতে হবে। ধৈর্যের সাথে, আদরের সাথে।
- সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ্র রাসূলের কী অপূর্ব উপমা! আচ্ছা জানো, পাঁজরের হাড় নিয়ে আরেকটা হাইপোথিসিস আমার মাথায় এসেছিল কিছুদিন আগে। এইমাত্র মনে পড়লো।
- কী হাইপোথিসিস, শুনি।
লাফিজা বললো, “মানুষের পাঁজরের হাড় দিয়ে যে খাঁচাটা তৈরি হয় এটাকে বলে বক্ষপিঞ্জর। এই বক্ষপিঞ্জরের কাজ কী? এর কাজ হলো ফুসফুস, লিভার, হার্ট–এসব অতি সেনসিটিভ এবং মহাগুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আছে সেগুলোকে বাইরের আঘাত থেকে বাঁচানো। মেয়েরা যখন মায়ের ভূমিকায় যায়, তখন তারাও একইভাবে নিজেদের সন্তান, বাড়ি ও পরিবারের অন্যান্যদের আগলে রাখে। নিজের জীবন দিয়ে আগলে রাখে”।
লাফিজার হাইপোথিসিস শুনে মাহির মুগ্ধ চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইল। লাফিজা কোলের বিড়ালটাকে মাহিরের কোলে দিয়ে বললো, “ধরো এটাকে। আমি নামাজ পড়ে আসি”। মাহিরের মুগ্ধতা তবু কাটছে না। সে মনে মনে স্ত্রীর ইলমের বারাকাহর জন্য দু’আ করল।
ছুটির সময় ঢাকার বাসা থেকে যাওয়ার সময় মাহির বিড়াল ছানাটা তার বন্ধুর বাসায় রেখে যায়। তার বন্ধু আগে থেকেই চারটা বিড়াল পালে।
সেই হাদীসটির কথা মাহির জানে যেখানে, একজন মহিলাকে জাহান্নামে প্রেরণ করা হয় এই অপরাধে যে, সে একটি বিড়াল বেঁধে রেখেছিলো এবং বিড়ালটি না খেয়ে মারা যায় [৫]।
Khaled publisher