বাংলাদেশের সেরা ১০ জন শিক্ষিত ব্যাক্তিদের নাম বলবেন কি?

1 Answers   2 K

Answered 2 years ago

প্রশ্নটা দেখে ভালো লাগলো। তবে শিক্ষিত বলতে প্রশ্নকর্তা একাডেমিক শিক্ষাকে বুঝিয়েছেন নাকি নন একাডেমিক শিক্ষাকে বুঝিয়েছেন তা পরিস্কার নয়। আবার স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে আজ পর্যন্ত সকল বাংলাদেশির মধ্যে সেরা ১০ জন শিক্ষিত মানুষকে বুঝিয়েছেন নাকি বর্তমানে জীবিত এমন দশজন সর্বোচ্চ শিক্ষিত মানুষ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন তাও বুঝা যায়না।

যাই হোক আমি স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের এযাবতকালের সেরা দশজন (একাডেমিক ও নন একাডেমিক) শিক্ষিত মানুষের তালিকা করলাম। এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত পছন্দ ও জানাশোনার উপর ভিত্তি করে করা। দয়া করে এটাকে জেনারেলাইজ করবেন না।

১) জ্ঞানতাপস অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক। তার শিষ্য আহমদ ছফা'র তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক লেখা -'যদ্যপি আমার গুরু' বই থেকে তার পড়াশুনার রেঞ্জ সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। গত শতাব্দ শ্রেষ্ঠ দার্শনিক অক্সফোর্ড এর প্রফেসর হ্যারল্ড লাস্কি'র অধীনে পিএইচডি করার সময় লাস্কি'র মৃত্যু হলে তার পিএইচডি থিসিস যথাযথ মূল্যায়ন করার মতো কেউ নেই মনে করে পিএইচডি অসমাপ্ত রেখে অক্সফোর্ড ছেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। তার পড়াশুনা, চিন্তা দর্শনের পরিধি দেখে সত্তর আশির দশকের ঢাকার শিক্ষিত মহলের অনেকেই তাকে গ্রিক দার্শনিক ডায়োজিনিস এর সাথে তুলনা করে 'ডায়োজিনিস অব ঢাকা' নামে ডাকতেন। ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় অধ্যাপক। পাকিস্তানি শাসনামলের শেষ দিকে বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি'র নেপথ্য কারিগরও অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকই ছিলেন বলে পরবর্তীতে জানা যায়। দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ও এই মহান জ্ঞানসাধককে সম্মানজনক ডি'লিট ডিগ্রী প্রদান করে।

২) প্রফেসর ডঃজামাল নজরুল ইসলাম। বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী। তার লেখা বইসমূহ 'দ্যা আল্টিমেট ফেইট অফ ইউনিভার্স', 'ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি, 'রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি, 'এন ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল কসমোলজি' বিশ্বের অনেক নামকরা কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য। ক্যাম্ব্রিজে ছিলেন স্টিফেন হকিং এর সহকর্মী। ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে ক্যাম্ব্রিজ ছেড়ে শুধুমাত্র দেশের ভালোবাসার টানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শিক্ষকতা শুরু করেন। নোবেল জয়ী পদার্থবিজ্ঞানী প্রফেসর আব্দুস সালাম এক সাক্ষাৎকারে বলেন 'আমার পরে দক্ষিণ এশিয়ার কেউ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলে তিনি হবেন প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম'।

৩) অধ্যাপক ডঃ হুমায়ুন আজাদ। প্রচন্ড মেধাবী হুমায়ুন আজাদ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপুরুষ। আধুনিক বাংলা কবিতা এপার বাংলায় তার মতো করে আর বুঝতেন কেবল কবি শামসুর রাহমান। বাংলাভাষার উতপত্তি ও ক্রমবিকাশ নিয়ে তার সুবিশাল রচনা 'বাক্যতত্ত্ব' বাংলা ভাষার জন্য একটা বিরাট মাইলফলক। তার 'ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল', 'আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম' প্রভৃতি রচনাবলি স্বাধীন বাংলাদেশের নিরপেক্ষ ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল।

৪) আহমদ ছফা। পড়াশুনা ও জ্ঞানার্জনে তার ত্যাগ স্বীকার কিংবদন্তিতুল্য। একাধারে কবিতা, উপন্যাস, অনুবাদ (বাংলা ভাষায় জার্মান কবি ফাউস্ট এর কবিতা তিনি প্রথম অনুবাদ করেন), রাজনৈতিক কলাম প্রভৃতি লিখেছেন।


৫) বদরুদ্দিন উমর। আমাদের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে সবচেয়ে এলিট পরিবারের সন্তান। তার পিতা, পিতামহ,প্রোপিতামহ পর্যন্ত খ্যাতিমান বিদ্বান ও সমাজ সংস্কারক ছিলেন। জনাব উমর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতক সম্পন্ন করে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন,রাজনীতি ও অর্থনীতি (PPE) তে পিএইচডি করেন। প্রচন্ড ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন উমর পাকিস্তানি শাসকদের থেকে শুরু করে মুজিব,জিয়া,এরশাদ,খালেদা, হাসিনা- সব সরকারকেই নিজের বিবেচনা মত কঠোর সমালোচনা করেছেন। সারাজীবন সমাজের নিচুশ্রেণীর মানুষদের পক্ষে কলম ধরে নব্য বেনিয়া- মুতসুদ্দী শ্রেণির সুবিধাবাদ ও শোষণের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। মার্ক্সবাদকে নিজের রাজনৈতিক দর্শন হিসেবে ধারণ করে আজীবন পড়াশুনা, লেখালেখি করে চলেছেন।

৬) ফরহাদ মজহার। ব্যক্তিগতভাবে তার চিন্তা দর্শন আমার অপছন্দ। কিন্তু শিক্ষা ও পড়াশুনার মাপকাঠিতে তিনি অবশ্যই সেরা দশজন বাংলাদেশির তালিকায় আসার যোগ্য। তার 'কর্তৃত্ব গ্রহণ করো নারী' এখন পর্যন্ত আমার পড়া বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা। পুজিবাদের নোংরা থাবা থেকে বাংলাদেশের কৃষিজ পণ্য, কৃষককে রক্ষা করতে তার 'নয়াকৃষি' আন্দোলনের আমি একজন শুভাকাঙ্ক্ষী। তার লেখালেখিতে বাম রাজনীতি ও মৌলবাদের জয়গান থাকলেও তার লেখাপড়ার পরিধি বিশাল।

৭) ডঃ জাফর ইকবাল। মূলত তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক হলেও তার পড়াশুনার ব্যাপ্তি অনেক। বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিজ্ঞানকল্পকাহিনী লেখক। পিএচডি করেছেন বিশ্ববিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন থেকে। এরপর আরেক বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যালটেক থেকে পোস্ট ডক করেন। বেল কমিউনিকেশনস এন্ড রিসার্চ সেন্টারে গবেষক হিসেবে থাকাকালীনই সেখানকার চাকুরি ছেড়ে দেশে চলে আসেন। সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করছেন।

৮) অভিজিত রায়। পড়াশুনা প্রকৌশল বিদ্যায় হলেও জ্ঞানের নানান শাখায় তার বিচরণ। সেটা বুঝা যায় তার লেখা বিভিন্ন বইয়ের বিষয়বস্তু দেখে। ছিলেন মুক্তমনা ব্লগ এর প্রতিষ্ঠাতা। ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী লেখালেখির কারণে মৌলবাদীদের দ্বারা নিহত হন। তার লেখা 'বিশ্বাসের ভাইরাস' বইটি আধুনিক বাংলাদেশের ধর্মান্ধতার এক বিশিষ্ট উপাখ্যান।

৯) সলিমুল্লাহ খান। চিন্তা দর্শনে কিছুটা ধর্মঘেষা হলেও তার পড়াশুনার ব্যাপ্তি অনেক। আমার দেখা বাংলাদেশের অন্যতম শিক্ষানুরাগী মানুষ।

১০) যেহেতু প্রশ্নকর্তা দশজন সেরা শিক্ষিত বাংলাদেশির নাম জানতে চেয়েছেন, তাই দশ নম্বরে কার নাম উল্লেখ করবো ভেবে পাচ্ছিনা, কারণ একই সাথে চার পাচজনের নাম মাথায় আসছে। যারা কষ্ট করে এই দীর্ঘ উত্তরটা পড়লেন তারা উপরের তালিকার নয়জনকে দেখে অনুমান করুন তো দশ নম্বরে আমার মাথায় আসা ব্যক্তিগণ কে/ কারা হতে পারেন? দেখি কার অনুমান শক্তি কেমন !

Jakir Rana
jakirrana
379 Points

Popular Questions