বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি খনিজ সম্পদসমূহ হচ্ছেঃ প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, চুনাপাথর ।
এছাড়া, কঠিন শিলা, নুড়িপাথর, গন্ডশিলা (Boulder), কাচবালি, নির্মাণকার্যে ব্যবহূত বালু, চীনামাটি, ইটের মাটি, পিট এবং সৈকত বালি ভারি মণিক (Beach Sand Heavy Minerals)।
তেল ও গ্যাস বাংলাদেশে এ পর্যন্ত বিভিন্ন আকৃতির ২২টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এদের মধ্যে ২০টি গ্যাসক্ষেত্রে পরিমাপকৃত গ্যাসমজুতের পরিমাণ প্রায় ২৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। অধিকাংশ গ্যাসক্ষেত্রের গ্যাসে কন্ডেনসেটের উপস্থিতি অল্প বা অতি অল্প বিধায় এদেরকে শুষ্ক গ্যাস (dry gas) বলা হয়। অল্প কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কন্ডেনসেট পাওয়া যায় এবং এদেরকে ভেজা গ্যাস (wet gas) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ ভেজা গ্যাসক্ষেত্রসমূহ হচ্ছে: বিয়ানীবাজার (প্রতি মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসে ১৬ ব্যারেল কন্ডেনসেট), জালালাবাদ (প্রতি মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসে ১৫ ব্যারেল কন্ডেনসেট) এবং কৈলাশটিলা (প্রতি মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসে ১৩ ব্যারেল কন্ডেনসেট)। বর্তমানে দেশে ব্যবহূত মোট বাণিজ্যিক জ্বালানির ৭০ ভাগই প্রাকৃতিক গ্যাসের দ্বারা মেটানো হচ্ছে এবং ভবিষ্যত জ্বালানি চাহিদার সিংহভাগ এ খাত থেকেই পূরণ হবে। প্রাকৃতিক গ্যাসের সর্বাধিক ব্যবহার হচ্ছে বিদ্যুৎ খাতে যার পরিমাণ মোট ব্যবহারের ৪৪ শতাংশ, যার মাধ্যমে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৬৮ শতাংশ পাওয়া যায়। এর পরেই রয়েছে সার উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার যার পরিমাণ মোট ব্যবহারের ২৮ শতাংশ এবং শিল্প, গৃহস্থালী, বাণিজ্যিক ও অন্যান্য খাতে গ্যাসের ব্যবহার ২২ শতাংশ। সরকারি ও বেসরকারি খাতে ১২টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে বর্তমানে গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে এবং দৈনিক উৎপাদনের পরিমাণ ৯০০ থেকে ৯৩০ মিলিয়ন ঘনফুট।
তৈলকূপ, হরিপুর, সিলেট
দেশের একমাত্র খনিজ তেলক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত হয় ১৯৮৬ সালে সিলেটের হরিপুরে। এ তেলক্ষেত্রে তেলের মোট মজুতের পরিমাণ প্রায় ১০ মিলিয়ন ব্যারেল যার মধ্যে উত্তোলনযোগ্য মজুতের পরিমাণ প্রায় ৬ মিলিয়ন ব্যারেল। ১৯৮৭ সালের জানুয়ারি মাসে হরিপুর তেলক্ষেত্র থেকে তেল উৎপাদন শুরু হয়। উৎপাদন শুরুর পরবর্তী সাড়ে ছয় বছরে এ তেলক্ষেত্র থেকে ০.৫৬ মিলিয়ন ব্যারেল খনিজ তেল উৎপাদন করা হয়। ১৯৯৪ সালের জুলাই মাস থেকে তেল উৎপাদন স্থগিত হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞগণের মতে, হরিপুর তেলক্ষেত্রটিকে যথার্থভাবে মূল্যায়ন করা হয় নি এবং সঠিক উপায়ে মূল্যায়নকার্য পরিচালনার পর পূর্ণমাত্রায় তেল উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে।
গ্যাসক্ষেত্র, ফেঞ্চুগঞ্জ
কৈলাশটিলা ও ফেঞ্চুগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রে আরও দুটি তেলবাহী শিলাস্তরের সন্ধান পাওয়া গেলেও অর্থনৈতিকভাবে এ দুটি ক্ষেত্র থেকে তেল উৎপাদন লাভজনক হবে কিনা সে বিষয়ে এখনও সম্পূর্ণ জরিপকার্য পরিচালনা করা হয় নি। সাম্প্রতিককালে দেশে একাধিক সংখ্যক আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধানে নিয়োজিত রয়েছে। এ সকল কোম্পানির সঙ্গে পেট্রোবাংলার আওতাভুক্ত এবং দেশের একমাত্র তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স সফলভাবে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে নিয়োজিত রয়েছে।
কয়লা ১৯৫৯ সালে ভূ-পৃষ্ঠের অত্যধিক গভীরতায় সর্বপ্রথম কয়লা আবিষ্কৃত হয়। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জি.এস.বি)-এর অব্যাহত প্রচেষ্টায় ৪টি কয়লাক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার যৌথ কোম্পানি বি.এইচ.পি-মিনারেলস আরও একটি কয়লাখনি আবিষ্কার করলে দেশে কয়লাখনির মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৫টিতে। আবিষ্কৃত সকল কয়লাখনিই দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। নিচের সারণিতে এ সকল কয়লাখনির বিস্তারিত তথ্য ও কয়লার গুণাগুণ উপস্থাপন করা হয়েছে। আবিষ্কৃত পাঁচটি কয়লাখনির মধ্যে অন্যতম বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি উন্নয়নের কাজ শুরু হয় ১৯৯৬ সালে এবং ২০০১ সালের মে মাসে তা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও খনির নকশাজনিত কিছু পরিবর্তন আনয়নের দরুন তা শেষ হতে আরও কিছু সময় লাগবে। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উত্তোলনযোগ্য মজুত ৬৪ মিলিয়ন টন এবং বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ মিলিয়ন টন। উত্তোলিত কয়লা ব্যবহার করে ৩০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র খনির অদূরে স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
কয়লা, বড়পুকুরিয়া, দিনাজপুর
বি.এইচ.পি- মিনারেলস নামক কোম্পানি ফুলবাড়ী কয়লাক্ষেত্র আবিষ্কার করে। পরবর্তীতে এ কয়লাখনির উন্নয়নের দায়িত্ব অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি এশিয়া এনার্জি কর্পোরেশন (এ.ই.সি)-এর কাছে অর্পণ করা হয়। এ.ই.সি বর্তমানে খনিটিকে একটি উন্মুক্ত কয়লাখনিতে (open-pit mine) রূপান্তর করার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। এ কয়লাখনি থেকে প্রারম্ভিক পর্যায়ে বছরে ২.৯ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যা পরবর্তীতে ৯ মিলিয়ন টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করে প্রধানত ইটখোলা ও অন্যান্য শিল্প কারখানায় ব্যবহার করা হচ্ছে।
চুনাপাথর, সিলেট
চুনাপাথর ১৯৬০-এর দশকের প্রথমভাগে দেশের উত্তর-পূর্বভাগে অবস্থিত টাকেরঘাট এলাকায় ইয়োসিনযুগীয় চুনাপাথরের একটি ক্ষুদ্র মজুত থেকে চুনাপাথর আহরণ করে তা একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরীতে সরবরাহ করা হয়।
প্রকৃতপক্ষে এটিই ছিল দেশের প্রথম খনি যেখান থেকে খনিজ সম্পদ আহরণ করা হয়। একই সময় জিওলজিক্যাল সার্ভে অব পাকিস্তান (জি.এস.পি) জয়পুরহাট জেলায় ভূ-পৃষ্ঠের ৫১৫ থেকে ৫৪১ মিটার গভীরতায় ১০০ মিলিয়ন টন মজুতবিশিষ্ট চুনাপাথরের অন্য আরেকটি খনি আবিষ্কার করে। প্রতিষ্ঠানটি তুলনামূলকভাবে অল্প গভীরতায় চুনাপাথরের মজুত অনুসন্ধানের লক্ষ্যে তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। জি.এস.পি-এর উত্তরসূরী প্রতিষ্ঠান জি.এস.বি ১৯৯০-এর দশকের মধ্যভাগে নওগাঁ জেলার জাহানপুর ও পরানগর এলাকায় যথাক্রমে ভূ-পৃষ্ঠের ৪৯৩ থেকে ৫০৮ মিটার ও ৫৩১ থেকে ৫৪৮ মিটার গভীরতায় চুনাপাথর আবিষ্কার করে। চুনাপাথরের এ মজুত দুটির পুরুত্ব যথাক্রমে ১৬.৭৬ মিটার এবং ১৪.৩২ মিটার।
উৎস ঃ খনিজ সম্পদ - বাংলাপিডিয়া
raju007 publisher