Answered 2 years ago
পর্যটক এভিলিয়া চেলেবির বর্ণনা থেকে পাওয়া যায় সপ্তদশ শতকে ১৬৩৩ সালে লায়ারি হাসান চেলেবি অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান চতুর্থ মুরাদ-এর কন্যার জন্মের সময় ইস্তাম্বুলে একটি রকেট উৎক্ষেপণ করেন। এটির ৭ টি ডানা ছিল এবং ৫০ ওক্কা (১৪০ পাউণ্ড) গানপাউডার অর্থাৎ বারুদ ব্যবহার হয়েছিল। তিনি নিজেই রকেটটির সাহায্যে কিছুটা উচ্চতা পর্যন্ত গিয়েছিলেন, তারপর আবার পাশের সমুদ্রের জলে নেমে আসেন।
তবে এর প্রায় ৬০০ বছর আগে চীনের যুদ্ধশাস্ত্র 'উজিয়াং ঝংইয়াও' নামক গ্রন্থে সর্বপ্রথম বারুদ ও আগ্নেয় তীরের কথা পাওয়া যায়। একেই সভ্যতার ইতিহাসে রকেটবিজ্ঞানের আদিতম রূপ মনে করা হয়। তবে হাসান চেলেবির রকেটকে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম আকাশগামী রকেট বলা যায়।
তবে এই ঘটনা নিয়ে মতভেদ আছে। এটাকে বিজ্ঞান না ধরে কিংবদন্তী হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। আধুনিক বিজ্ঞানীরা মনে করেন সপ্তদশ শতাব্দীর একজন মানুষের পক্ষে আধুনিক ইস্পাত সংকর, ঝালাইপ্রযুক্তি এবং জেট ইঞ্জিনের প্রযুক্তি বিনা এই জিনিস বাস্তবে নির্মাণ করা অত্যন্ত কঠিন হত। বর্তমানের অত্যুন্নত প্রযুক্তির সাহায্যেও যথেষ্ট থ্রাসট উৎপন্ন করা বা স্পেস ক্যাপসুলকে ধীরগতিতে সমুদ্রে নামিয়ে আনা রীতিমত কঠিন। মানববাহী রকেট হলে তো কথাই নেই- মানববিহীন অভিযানের তুলনায় মানববাহী অভিযান অন্তত ১০০ গুণ বেশী কঠিন।
বর্তমানেও কেবল তিনটি অতি শক্তিধর দেশের সরকারী মহাকাশ সংস্থা এই কাজে সক্ষম (আমেরিকা, রাশিয়া, চীন)। তার মধ্যে কেবল একটি দেশের (আমেরিকা) তিনটি বেসরকারী সংস্থা (স্পেসএক্স, ব্লু অরিজিন, ভার্জিন গ্যালাকটিক) এই কাজে সক্ষম। মনে রাখতে হবে, এই প্রত্যেকটি সংস্থার ক্ষেত্রে হাজার হাজার বিজ্ঞানীর বহু বছরের পরিশ্রমে, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে, অসংখ্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সামগ্রিক সহায়তায় মহাকাশে মানব অভিযান বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়েছে।
অতএব সপ্তদশ শতাব্দীতে জন্ম নেওয়া একাকী একজন মানুষের পক্ষে মহাকাশে পৌঁছানো সম্পূর্ণ অসম্ভব ছিল বলা যায়।
তাই যদি বা এই কিংবদন্তীটি সত্যও হয় (খুবই অসম্ভাব্য) তবুও তিনি সম্ভবত খুব সামান্য উচ্চতা পর্যন্তই গিয়েছিলেন। অন্তত ১০০ কিলোমিটার উচ্চতায় না উঠলে তাকে 'মহাকাশ' বলা যায় না। আমার ধারণা তিনি এক কিলোমিটারেও কম উচ্চতায় গিয়েছিলেন। যদি এটাও হয়ে থাকে তাহলেও সেই যুগের হিসেবে এটাকে খুব বড় সাফল্য বলতে হবে। তবে এটা বেলুন বা গ্লাইডারজাতীয় কিছুও হয়ে থাকতে পারে- সেক্ষেত্রে আরও বেশী উচ্চতা পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব ছিল।
তবে যেহেতু নিশ্চিত কোনও প্রমাণ নেই তাই রকেট বিজ্ঞানের ইতিহাসে এর সেরকম কোন গুরুত্ব নেই। রকেটবিজ্ঞানের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ধরা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জার্মানির আবিষ্কার V-2 রকেটকে। ১৯৪৪ সালে এই রকেট ১৭৬ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত গিয়েছিল। একেই মহাকাশে পৌঁছানো মানুষের তৈরি প্রথম বস্তু হিসেবে মেনে নেওয়া হয়।
আর ইতিহাসের প্রথম মানববাহী মহাকাশযান হল সোভিয়েত ইউনিয়নের ভস্তক-১ যা ভস্তক-কে রকেটে করে উৎক্ষেপিত হয়েছিল। এতে করেই ১৯৬১ সালে সোভিয়েত মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন ৩২৭ কিমি উচ্চতায় যান এবং পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে ফিরে আসেন। ইউরি গ্যাগারিনই হলেন মানবসভ্যতার ইতিহাসে মহাকাশগামী প্রথম মানব।
Sagor Ahmed publisher