Answered 2 years ago
বিশ্বকাপে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনাকে নিয়ে বাংলাদেশে বেশি মাতামাতি হওয়ার কারণটা হচ্ছে আশির দশকে বাংলাদেশের শহর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে টিভির প্রচলন বাড়তে শুরু করে। সে সময় রঙিন এবং সাদাকালো উভয় টিভিই দেখা যেতো। তখন একক পরিবার বা নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির প্রচলন খুব একটা ছিল না। যৌথ পরিবারই ছিল সমাজের মূল ভিত্তি। এমন পরিবেশে যখন বাড়িতে নতুন টিভি আসতো তখন টিভিই পরিবারের প্রতিটি সদস্যের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে থাকতো। অন্যদিকে সে সময় বাংলাদেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। শহর হোক কিংবা গ্রাম গঞ্জে ফুটবলের প্রতি মানুষের আবেগ আর ভালবাসা ছিল অন্যরকম।
🛑ঠিক এই সময়টাতেই আসে ৮৬'র বিশ্বকাপ। একেতো ফুটবল পাগল বাঙালি তার উপর পরিবার কিংবা পাড়া মহল্লার সবাই মিলে বসে বিশ্বকাপের মধ্যে একটি বৈশ্বিক আসর স্বচোখে উপভোগ করার সুযোগ সেবারই প্রথম আসে। ৮৬'র বিশ্বকাপ ছিল ম্যারাডোনাময়। যেসময়ে সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া কোন কিংবা ভার্সিটি পড়ুয়াদের কথা শুনলে বোঝা যায় আর্জেন্টাইন ফুটবলের কতটা ভক্ত ছিলেন তারা। আর ভালো করে বললে ম্যারাডোনার কতটা পাগল ভক্ত ছিলেন তারা।
ম্যারাডোনার অতি মানবীয় হয়ে ওঠা, ইংল্যান্ডের সাথে সেই হাত দিয়ে করা গোল এবং ফাইনালে জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওঠা সব মিলে ম্যারাডোনা নামটিই বাংলাদেশের মানুষের কাছে অন্যরকম ভালোবাসার সৃষ্টি করেছিল। আমার বিশ্বাস আজ বাংলাদেশে যত আর্জেন্টাইন ফ্যান তৈরি হয়েছে তার মূল ভিত্তি ছিল সেই ৮৬'র বিশ্বকাপ।
🛑 ১৯৭০ সালের পর ব্রাজিল প্রায় ২৪ বছর আর কোনো বিশ্বকাপ পায়নি। যদিও ৮২র ব্রাজিলের বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পরা একরকম দুর্ঘটনায় বলা চলে। এর মধ্যে মাদক গ্রহণের দায়ে ম্যারাডোনা ৯৪ সালের বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায়। রোমারিও, দুংগাদের নিয়ে গড়া সেই টিম বিশ্বকাপের হট ফেবারেট না হলেও একেবারে ফেলনা ছিল না।
অবশেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২৪ বছরের শিরোপা খরা কাটিয়ে ব্রাজিল চতুর্থ বারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। পুরো আশির দশক ধরে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার প্রতি যে একক উন্মত্ততা ছিল ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হওয়াতে তার অনেকাংশেই ভাটা পড়ে গেলো। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ব্রাজিল- আর্জেন্টিনা তো সমানে সমান। কেউ কাউকে যে এক চুল ছাড় দেয় না। আর সেই থেকে ফুটবল পাগল বাঙালিও দুই ভাগ হলো।
ujjolahmed publisher