Answered 2 years ago
এই বিষয়ে আমার ছোটবেলা থেকেই অনেক কৌতূহল ছিলো। কেনই বা থাকবে না বলুন? একটি পাখিকে যখন নীল আকাশে স্বাধীনভাবে উড়ে বেড়াতে দেখা যায় তখন কার মনে না ইচ্ছা জাগে একবার পাখির মতো উড়তে পারার… আচ্ছা যাই হোক আমি দেখি চেষ্টা করে উত্তর দিতে পারি কিনা…
প্রথমত, একটি পাখির উড়তে পারার পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান থাকে তাঁর দৈহিক কাঠামোর। একটি পাখির এমন সব দৈহিক সুবিধা আছে যা তার উড়তে পারার জন্য আশীর্বাদসরূপ। এইক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখে তার পালক। পাখির পালকগুলো অনেক হালকা হলেও এরা খুবই নমনীয় ও স্থিতিস্থাপক। এদের পালকের ক্রমবিন্যাস এদের হালকা হয়ে উড়তে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে । এদের পালক কাইটিন দিয়ে তৈরি হওয়ায় এতোটা হালকা হয়ে থাকে। এছাড়া এদের পালকে বার্ব নামের একটি পদার্থ থাকে যা প্রচুর পরিমান বাতাস ধরে রাখতে পারে। এছাড়া এদের ভারী চোয়াল ও দাঁত না থাকায় এদের জন্য অনেক ভালো হয়েছে;এতে কোনো অতিরিক্ত ওজন তাদের দেহে থাকে না। পাখিদের লেজও এইক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা রাখে।
পাখিদের উড়তে পারার পিছনে মূল যেই অঙ্গ দায়ী সেটা হলো তার ডানা। পাখি যখন উড়ে আর এর ডানা বাতাসে নড়াচড়া করে বাতাস তখন বাতাস এর গা ঘেসে উপরে নিচে বাহিত হয়।
ডানার দুই প্রান্তে এক-ই সময়ে ২ ধরনের বাতাস বাহিত করার জন্য ডানার উপরের পৃষ্ঠের বাতাসকে নিচের পৃষ্ঠের অপেক্ষা অনেক দূরতর ও দ্রুততর হতে হয়। যার ফলে উপরের পৃষ্ঠের বাতাস ডানার উপর অধিকতর কম চাপ প্রয়োগ করে এবং নিচের পৃষ্ঠের বাতাস অনেক বেশি চাপ প্রয়োগ করে। ফলসরূপ, পাখিটি উপরের দিকে উঠে যায়। ডানা ঝাপ্টানোর বেগ যত বেশি হবে পাখি তত দ্রুত উপরে উঠে যেতে পারবে।পাখি উড়তে পারার পিছনে মুলত এইসব ব্যাপারই কাজ করে।
এবার আমরা আসি গানিতিক ব্যাখ্যায় । এর পিছনে কাজ করে অনেকখানি পদার্থবিজ্ঞান। মনে করুন একটি পাখি যখন বাতাসে ডানা ঝাপ্টায় তখন এর দুইটি ডানা বাতাসে F1 ও F2 বল প্রয়োগ করে । এবার নিউটনের তৃতীয় সুত্র অনুসারে বাতাসও এর ডানার উপর সমান ও বিপরীতমুখী বল ফিরিয়ে দেবে । মনে করে নেই এই বিপরীতমুখী বলের পরিমাণ যথাক্রমে R1 ও R2 । ব্যাপারটা অনেকটা নিচের চিত্রের মতো হবে।
এখন R1 এবং R2 এই দুইটি বলকে যদি আমরা পিছনের দিকে বর্ধিত করি তাহলে মনে করি বল দুইটি পরস্পর O বিন্দুতে ছেদ করবে এবং সেখানে θ কোন উৎপন্ন করবে ।
এবার R1 এবং R2 এই দুটি ভেক্টর থেকে একটি লব্ধি ভেক্টর পাওয়া যাবে। ধরে নেই সেটা হবে R . .
তো দেখা যাচ্ছে পাখি নিজে F1 এবং F2 বল প্রয়োগ করার দরুন সে নিজে R পরিমান বল অনুভব করছে। এই R বলটি পাখিটির সাথে সম্পুর্ন লম্বভাবে ক্রিয়া করে না। এটি কিছুটা কোন করে ক্রিয়া করে। আমরা আলাদাভাবে চিত্র এঁকে ব্যাপারটি বুঝতে চেষ্টা করি । এখানে R ভেক্টরের দুইটি উপাংশ বিদ্যমান। মনে করি, লম্ব বরাবর এই উপাংশ Y এবং আনুভূমিক উপাংশ X .
এখন ভেক্টরের নিয়ম অনুযায়ী ,
Y=RSinθ
X=RCosθ
এখন এইখানে আরো একটি বল ক্রিয়া করবে । সেটা হচ্ছে পাখিটির ওজন। এবং সেটি ক্রিয়া করবে নিচের দিকে।
তো এখন এই Y = RSinθ বলটি যেহেতু উপরের দিকে ক্রিয়া করে এবং পাখিটির ওজন এর বল যেহেতু নিচের দিকে ক্রিয়া করে তাই Y এর মান অবশ্যই W এর চেয়ে বড় অথবা সমান হতে হবে। যদি সমান হয় তাহলে পাখিটি কেবল ভেসে থাকতে পারবে আর যদি বড় হয় তাহলে পাখিটি ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠতে থাকবে। পাখিটি বাতাসে প্রয়োজনীয় পরিমান বল প্রয়োগ করে এই RSinθ এর মান সবসময় তার ওজনের কারনে সৃষ্ট বল অপেক্ষা বেশি রাখে। এবং এই ভাবেই পাখি আকাশে উড়তে পারে।
fensinahar publisher