পদার্থবিজ্ঞান কী?

1 Answers   13.4 K

Answered 1 year ago

এক কথায়, বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পদার্থবিজ্ঞানে এক মূলগত পরিবর্তন হয়। সেই পরিবর্তনের পরবর্তী পদার্থবিজ্ঞানকে "কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান" বলা হয়। একটু ব্যাখ্যা করে বলি। এর আগে, পদার্থবিজ্ঞানের মূলভিত্তি ছিল গ্যালিলিও-নিউটনের বল-গতি বিজ্ঞান এবং ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েলর বিদ্যুৎ-চুম্বক তত্ত্ব। প্রধানত এই দুই ভিত্তির উপরে দাঁড়ান (প্রায়) সকল বিজ্ঞানকে এখন বলাহয় "চিরায়ত বা সনাতন পদার্থবিজ্ঞান"। খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে, চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞান অনুসারে সকল বস্তুর গতি ও সকল প্রকারের শক্তি হল মূলতঃ অবিভাজ্য যা, অনবরত ও অবিচ্ছিন্ন ভাবে এক স্থান (ও কাল) থেকে অন্য স্থানে (ও কালে) উত্তীর্ণ হয়। ১৯০০ সনে, বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ছিলেন প্রথম যিনি ধারনা করেন যে শক্তির বেলায় সেটা ঠিক না বরং শক্তি হল মূলতঃ বিচ্ছিন্ন শক্তিকণা, বা শক্তির "কোয়ান্টাম", মাত্র। এর সাহায্যে তিনি তথাকথিত "কৃষ্ণ বস্তুর বিচ্ছুরণ" সমস্যাটা, যা সনাতন পদার্থবিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়, সঠিক ভাবে সমাধান করতে পারেন। এই জ্ঞান থেকে উদ্ভূত ২৫ বছরের বিভিন্ন বিজ্ঞানীর বিভিন্ন অবদানের শেষে, ১৯২৫-১৯২৬ সনে, বিজ্ঞানী হাইসেনবারগ, শ্রয়ডিঙ্গার, ডিরাক ও অন্যরা একটা সুদূরপ্রসারী বলবিজ্ঞান বা গতিবিজ্ঞান সৃষ্টি করেন যা, পদার্থবিজ্ঞানকে পূর্ণ যুক্তিসংগত ভাবে কোয়ান্টাম ভিত্তিতে স্থাপন করতে সক্ষম হয়। পদার্থবিজ্ঞানের এই নতুন রূপটাই "কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান" বলে পরিচিত। বস্তুত এটা ছিল চিরায়ত বা সনাতন পদার্থবিজ্ঞানের একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এই বিজ্ঞানের সর্বশেষ রূপ অনুসারে প্রকৃতির ভিত্তি হল (৪ টি) বলক্ষেত্র ও তদ-উদ্ভূত কোয়ান্টাম বা কণা সমূহ। এই কণা গুলির দুইটি রূপ আছে। একটা রূপ কে বিখ্যাত ইতালিয়ান বিজ্ঞানী এনরিকো ফারমি এর সন্মানে বলা হয় "ফারমিওন"। অন্য রূপটিকে, বিখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন বোস এর সন্মানে বলা হয় "বোসন"। (১৯২৪ সনে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিভাগের তৎকালীন তরুণ অধ্যাপক সত্যেন বোস* ই প্রথম তাঁর আবিষ্কৃত "কোয়ান্টাম স্ট্যাটিস্টিকস" এর সাহায্যে "প্ল্যাঙ্ক বিতরণের" সার্বজনীন ও সুদূরপ্রসারী ব্যাখ্যা দান করেন।) বর্তমানে, একমাত্র মধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব (অর্থাৎ আইনস্টাইনের "সাধারণ" বা বড় আপেক্ষিক তত্ত্ব) ছাড়া, সমগ্র পদার্থবিদ্যার ভিত্তি হল কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান। এ মুহূর্তে পদার্থবিজ্ঞানীরা গভীর প্রচেষ্টা করছেন কি করে মধ্যাকর্ষণ শক্তিকেও একটা যুক্তিসংগত ও পূর্ণ কোয়ান্টাম তত্ত্বের আওতায় আনা যায়। সেটা সম্ভব হলে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের তিনটা বড় সমস্যার সমাধান হবে বলে অনেকেই আশা করেন। সেই সমস্যা তিনটি হল, ''বিগ ব্যাং সিঙ্গুলারিটি" যা স্থান-কালের সৃষ্টি, ''অন্ধকার বস্তু'' যা গ্যালাক্সির স্থিতি, ও ''অন্ধকার শক্তি'' যা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ত্বরণ-বর্ধন সম্পর্কে বিদ্যমান ধাঁধাগুলির সাথে ওঁতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। *Bose at Dhaka University in the 1930s (source, Wikipedia)
Imon Rana
imonrana
477 Points

Popular Questions