নিজেকে কতটা সুখী মনে করেন? আপনার সুখের রহস্য কী?

1 Answers   11.5 K

Answered 2 years ago

আমি বেকার। না আছে চাকরি, না আছে পড়াশোনা। খাই আর ঘুমোই। তবু আমি সুখি কারণ-


আমার মাথার ওপরে ছাদ আছে। রেল স্টেশনে, ওভারব্রিজের নিচে ঘুমোতে হয়নি এই জন্মে, তাই আমি সুখি।

এই বেলা খেতে পেলে ওবেলা কী খাব তার চিন্তা করতে হয় না তাই আমি সুখি।

হাঁটতে পারছি, কথা বলতে পারছি, স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে পারছি তাই আমি সুখি।

আমি শিক্ষার আলো দেখেছি তাই আমি সুখি।

আমি নিজে যা চেয়েছি তাই করেছি। আমার মা বাবা আমায় সবসময় আশীর্বাদ করেছেন, আমার ইচ্ছের মর্যাদা দিয়েছেন তাই আমি সুখি।

সুখি হতে প্রাথমিকভাবে যা দরকার তা সবই আমার আছে। তাই আমি সুখি। কিন্তু এগুলো তো ঈশ্বরের দান, আমি নিজে থেকে ঠিক করতে পারিনা যে আমি কোন পরিবারে জন্ম নেবো। তবু আমার কাছে যখন সুখের রহস্য জানতে চাওয়া হয়েছে তাহলে কিছু লিখতেই হয়। কথাগুলো আমার অন্যান্য উত্তরের কিছু কথার পুনরাবৃত্তি হবে, তবু আমি লিখছি।


আমি একটা কাজ করার সময়ে তার আগে পরের দিকগুলো ভেবে কাজ করি- পাঁচ মিনিটের ভালো লাগার জন্য বা কাউকে খুশি করার জন্য এমন কিছু করবো না বা বলবো না যাতে সারা জীবন আফসোস করতে হয়। আরেকটা ব্যাপার হতে পারে। এই ধরুন কারো নিন্দে করতে ইচ্ছে হল খুব। কিন্তু তার আগে যখন ভেবে দেখবো যে সেই মানুষটি আমার প্রিয় মানুষ, বা তার নামে নিন্দে করার যোগ্যতা আমার নেই তখনই থেমে যাবো।

ভুল করলে ক্ষমা চেয়ে ফেলি- আমি যতই ভেবে কাজ করি, মানুষমাত্রেই ভুল হয়। আমারও ভুল হয়। কিন্তু নিজের ভুল বুঝলেও একজন মানুষ দুটো কাজ করতে পারে- নিজের ভুলটা ঢাকতে গিয়ে অন্যকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করতে পারে বা ক্ষমা চেয়ে নিতে পারে। আমি দ্বিতীয়টা করি। ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নেই। আমি আমার এক বন্ধুর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলাম বেশ কয়েক বছর আগে। এরকম হয়েছিল কয়েকদিন আগে, যে যার সাথে যত রুক্ষ ব্যবহার করেছি তার জন্য অনুশোচনা হচ্ছিল। তখন তাকে মেসেজ করে ক্ষমা চেয়ে নিলাম, অনেকদিন পর সেও আমাকে তার অনেক কথা বলে দিলো, দুজনেই হালকা হলাম।

অন্যের কথায় আমল দেই না- যতক্ষণ না আমার মা বা কাছের মানুষ আমার কাজে কিছু বলছেন ততক্ষণ কারো কথায় আমল দেই না। সবাই তো সবার কাজে খুশি হয় না, সবার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা।

স্বার্থপর হয়ে নিজের ভালোটা বুঝি- কোন কোন ক্ষেত্রে স্বার্থত্যাগ করে হয় না। যদি দেখি এখানে কাউকে সাহায্য করলে সে তার মুল্য দেবে না তাহলে তার ভালো করতে যাই না।

নেতিবাচক কথা বলা ও নেতিবাচক কথা বলা মানুষের সাথে থাকা এড়িয়ে চলি- Emotional contagion[1]বলে একটা শব্দ আছে যার মানে হচ্ছে যে আপনার ইতিবাচক বা নেতিবাচক কাজ ও কথা আপনার চারপাশের মানুষকে প্রভাবিত করে। যে মানুষ আমাকে সবসময়ে মনে করিয়ে দেবে যে আমি ভালো নই তার সাথে কথাবার্তা কম বলি। আমি নিজেও চেষ্টা করি positive vibe নিয়ে চলতে। কেউ দুঃখ পেলে যদি নিগেটিভ চিন্তা করে তাকে পজিটিভ দিকে নিয়ে আসতে চেষ্টা করি।

যেটা ভালো লাগে সেটা করি- সবার তো হবি বা প্যাশন বলে কিছু থাকে। আমিও সেভাবে দিনের অন্তত আধ ঘন্টা সময় নেই যখন আমি সময়টা কাটাই বই পড়ে, লিখে, গান শুনে বা সেলাই করে।

বাস্তব জীবনে বন্ধু ও পরিবারকে প্রাধান্য দেই- সারাদিন মোবাইলে এতটাই মগ্ন যে বাড়িতে কবে ভালো করে বাবা মায়ের সাথে কথা বলেছি মনেই পড়ে না? এরকম করি না। ভার্চুয়াল দুনিয়া থেকে বাস্তব জগতটা বেশি জরুরি। সবার সাথে কথা বলতে হয়, সমস্যা থাকলে মাকে বলি, কোন বন্ধুকে বলি। বিপদে পড়লে ফেসবুকের ১০০০ জন ফ্রেন্ড নয়, বরং পরিবার ও বন্ধুরাই এগিয়ে আসে।

অন্যের ব্যাপারে নাক গলাই না- কে কাকে কী বলল, কে সোশ্যাল মিডিয়ায় কী লিখলো তাতে বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাই না। এর কথা ওকে বলে ঝগড়া লাগিয়ে দেওয়ার অভ্যাসটাকে খুবই ঘৃণা করি। এইজন্য আমি অনেক উটকো ঝামেলা থেকে দূরে থেকে সুখি আছি।

রোজ পড়তে বসি- নিজের যে প্রধান কাজ, সেটা পড়াশোনা বা চাকরি যাই হোক, মন দিয়ে করলে মনে প্রশান্তি আসে।

আমি লিখতে পারতাম যা আমার চাকরি নেই, আমাকে কেউ পাত্তা দেয় না তাই আমি সুখি নই। কিন্তু লিখতে বসে মনে হচ্ছে আমি খুব সুখি। মানে অনেক কিছু না থাকলেও মনের দিক থেকে পরিষ্কার তাই সুখি। শেষ করার আগে ইউটিউবে দেখা শ্রী গৌর গোপাল দাসের কিছু কথা ভাগ করে নিতে চাই-


Shariar Anu
shariaranu
179 Points

Popular Questions