Answered 2 years ago
সঠিক লিখলেও, দুর্ভাগ্যবসত কারো লেখাতেই "কায়েম" জিনিসটা পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়নি। আজকে আমি এই "কায়েম" এর অর্থ বুঝিয়ে দিব ; ইনশা-আল্লাহ।
কোরআনে বারবার নামাজের ব্যপারে বলা আছে - আকিমুস সালাত (وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ)। অর্থাৎ - নামাজ "কায়েম" করো। আরবী "কায়েম" শব্দটির অর্থ - প্রতিষ্ঠা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করা, বুঝি। কিন্তু, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে কিভাবে?
একটি ১০ বছর বয়সের শিশু। খুব ভালো ছেলে। কিন্তু, সে স্কুলে যায় না। সে কি সমাজে মিশতে পারবে? প্রতিবেশীরা তাদের বাচ্চাদের শিখিয়ে দিবে - ওই ছেলেটির সাথে মিশবে না। ছেলেটি যদি খারাপ ছাত্র বা ফেল করা ছাত্রর হতো, তাহলে হয়তো মেনে নিত। কিন্তু ছেলেটি একেবারেই লেখাপড়া করে না। যত ভালো স্বভাব হোক না কেন, সমাজে সেই ছেলেটির জায়গা নেই।
১৫ বছরের কম বয়সের যে কোন বালক-বালিকাকে মানুষ প্রথম যে প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করে, সেটা হলো - তুমি কোন ক্লাসে পড়? পাস ফেল, যাই করুক, কোন একটা ক্লাসে পড়তে হবে। স্কুল-কলেজে না পড়লে, সমাজে তাকে কেউ গ্রহণ করবে না। এটাকে প্রতিষ্ঠা বলে। এটাকেই "কায়েম" করা বলে।
একইভাবে, একটি ৩০+ বয়সের ছেলেকে, মানুষ প্রথমেই জিজ্ঞাসা করে - আপনি কি (কাজকর্ম) করেন? কেউ যদি কোন কাজকর্ম না করে, তাকেও সমাজ মেনে নেয় না। বেকার ছেলেটি কাজ খোঁজে ; সেটাও একটা কাজ। একজন মানুষ ছোট চাকুরী করুক, ছোট ব্যবসা করুক, বেকার হলে কাজ খুঁজতে থাকুক, গরীব হোক, সেটাও ভালো। কারণ সমাজে গরিবের জায়গা আছে। কিন্তু, কাজকর্ম না করা মানুষের জন্য সমাজে কোন জায়গা নেই। এটাকে প্রতিষ্ঠা বলে। এটাকেই "কায়েম" করা বলে।
বোঝা গেলো, আমাদের সমাজে লেখাপড়া আর কাজকর্ম এই দুটি জিনিস কায়েম (প্রতিষ্ঠা) হয়েছে। এবার আরো একটি কায়েম (প্রতিষ্ঠা) দেখুন:
এলাকার নেতা, স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপ করছেন - অমুক ফাঁকা জায়গায় কিভাবে একটা মসজিদ বানানো যায়। সবাই কথা বলেছে, এর মধ্যে, ওই এলাকার একজন লোক, হঠাৎ ওখানে এসে বসে পড়লো। লোকটা শুধুমাত্র জাঙ্গিয়া পরে বসে আছে। তার পরনে আর কোন কাপড় নেই।
এর পরের ঘটনাটা, সবাই অনুমান করতে পারবেন। ওই লোকটিকে ওখান থেকে এই বলে তাড়িয়ে দেওয়া হলো - যাও, জামা কাপড় পরে এসো।
ভালো লোক, বড় লোক, শিক্ষিত, ধনী, ক্ষমতাবান, বয়স্ক, যেই হোক না কেন - জামা কাপড় না পরলে, তাকে কেউই গ্রহণ করে না। প্রথমেই বলে - যাও, জামা কাপড় পরে এসো। এটাই হলো আসল কায়েম (প্রতিষ্ঠা)।
আল্লাহ আমাদেরকে এভাবেই নামাজ কায়েম করতে বলেছেন। যে নামাজ পড়বে না, সমাজে তার জায়গা হবে না। সমাজের লোকজন বেনামাজিকে তাড়িয়ে দিয়ে বলবে - যাও, নামাজ পড়ে এসো।
দ্রষ্টব্য: অনেকে জামাতে নামাজ পড়াকে কায়েম (প্রতিষ্ঠা) বলেন। হ্যাঁ, তারা ঠিকই বলেন। জামাত কথাটির অর্থ - দল। লেখাপড়া কায়েম করতে দল (স্কুল) লাগে। চাকুরী বা ব্যবসা কায়েম করতে দল (অফিস) লাগে। ঠিক তেমনই, নামাজ কায়েম (প্রতিষ্ঠা) করতে দল (জামাত) লাগে।
riponahmed publisher