দেশ ভাগের সময় জমিয়ত উলামা হিন্দ ও জামায়াত ইসলমীর মধ্যে মত পার্থক্য হয়েছিল কেন?

1 Answers   2 K

Answered 1 year ago

ক্বওমী ও জামায়াতে ইসলামীর মাঝে দ্বন্দ্ব কোন জায়গায়? শায়খ মাসউদুর রহমান (হাফাযাহুল্লাহ) বন্ধুরা, আমি আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কাউকে ছোট করা আমার উদ্দেশ্য নহে। সঠিক ইতিহাস ধরে তুলাই আমার উদ্দেশ্য। ক্বওমী মাদ্রাসার মূল শিকড় বা হেড কোয়ার্টার হলো,দেওবন্দ মাদ্রাসা। দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শিক্ষাদানের পাশাপাশি মোজাহিদ বা বিপ্লবী লোক তৈরি করার জন্য। ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনে তাদের অবিস্মরণীয় ভূমিকা রয়েছে। দেওবন্দ ওলামায়ে হযরাতদের জমিয়ত নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন ছিল। তারা আল জমিয়ত নামে একটি পত্রিকা ও বের করেছিল,যার এডিটর বা সম্পাদক ছিলেন আল্লামা মওদূদী। ব্রিটিশ চলে যাওয়ার পর মুসলমানরা দ্বি জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পৃথক আবাস ভূমি গড়ে তুলার জন্য আন্দোলন করতে থাকে। মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও হুসাইন আহমদ মাদানী পরিবার মুসলমানদের জন্য আলাদা আবাস ভূমি গড়ে তোলার বিপক্ষে প্রকাশ‍্যে অবস্থান করে এক জাতি তত্ত্বের যুক্তি ধরে তুলতে থাকেন। অবশেষে মাদানী পরিবার সদল বলে কংগ্রেসে যোগদান করলেন। আল্লামা মওদুদী মনের দুঃখে আল জমিয়ত পত্রিকার সম্পাদকের পদ থেকে এ হিসেবে পদত্যাগ করলেন যে, যারা দেওবন্দ মাদ্রাসার মূল উদ্দেশ্য বে মালুম ভূলে কংগ্রেসের লেজুড়বৃত্তি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে, তাদের সাথে একমত হতে পারলাম না। উল্লেখ্য যে তখন হুসাইন আহমদ মাদানী সাহেব ছিলেন দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল। ঐ সময় থেকে মাদানী পরিবার কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে যে জড়িত হয়ে পড়েছেন,আজো তারা কংগ্রেসের সঙ্গেই লীন হয়ে আছেন। আমাদের দেশে যত ক্বওমী মাদ্রাসা রয়েছে,দেওবন্দ মাসলাকের অনুসরণেই গড়ে উঠেছে। বিশ্বাস করুন দেওবন্দ মাদ্রাসা কংগ্রেসের পলিসির বাইরে যাওয়ার কোন ক্ষমতা নেই। দেওবন্দ মাদ্রাসার শত বছর পূর্তি উপলক্ষে তারা কংগ্রেস প্রধান সেই গান্ধীকেই প্রধান অতিথি হিসেবে অভিষেক দিয়েছিলেন। বাবরি মসজিদ যখন ধ্বংস করা হয়, তখন মাদানী পরিবারের লোক কংগ্রেসের এমপি ছিলেন। ইচ্ছে করলে তিনি তার প্রতিবাদে পদত্যাগ করতে পারতেন কিন্তু তিনি পদত্যাগ করেননি। ইদানিং কাশ্মীর নিয়ে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যখন উত্তেজনা চরমে, শতকরা নব্বই ভাগ কাশ্মীরী মুসলমানদের পক্ষে কথা না বলে উল্টো তাদেরকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দিলেন এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্লোগান তুললেন। আমি আগেই বলে রাখি ক্বওমী জগতের ইসলামকে আন্তরিক ভাবে মানার ক্ষেত্রে কোন কার্পন্য নেই। আমি ক্বওমী জগতকে তিন ভাগে ভাগ করতে চাই। প্রথম সারি, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারি। প্রথম সারি বলতে তাদের নেতৃস্থানীয় লোকদের বুঝাতে চাই। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির লোকজন প্রথম সারির নেতৃবৃন্দ যে দিকে নিয়ে যায়,সে দিকেই যেতে তারা বাধ্য। তাদের স্বাধীন চিন্তা পরিকল্পিত ভাবে হরণ করা হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির লোকেরা কখনোই ঘটনার শিকড়ে যাওয়ার সুযোগ পাননা। উস্তাদ পীরের অন্ধ অনুকরণের ক্ষেত্রে ক্বওমী জগত বিশ্ব সেরা। আমি আগেই বলেছি দেওবন্দ মাদ্রাসা কংগ্রেসের পলিসির বাইরে যেতে পারে না। হেফাজতে ইসলাম যখন নাস্তিকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন তুঙ্গে তুলেন, তখন সারা বাংলাদেশে তৌহিদী জনতার মাঝে অস্বাভাবিক সারা পড়েছিল। এক পর্যায়ে আন্দোলনটি থেমে যায় কংগ্রেসী পলিসির কারণেই। এখন আসা যাক ক্বওমী ও জামায়াতে ইসলামীর দ্বন্দ্ব কোন জায়গায়? আল্লামা মওদুদী রহঃ যখন মনের দুঃখে তাদের আল জমিয়ত পত্রিকার সম্পাদকের পদ ছাড়লেন এবং দ্বি জাতি তত্ত্বের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখলেন, তখন থেকেই মওদূদীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিদ্বেষ মূলক ফতোয়া জারি হতে থাকে,যা আজও তাদের উম্মতেরা মুখস্থ ঝাড়তে আছে। দ্বন্দ্বের আদর্শিক কোন কারণ আমরা নিরপেক্ষ ভাবে খুঁজে পায়নি। মৌলিক কথা হল, হিন্দুত্ববাদী কংগ্রেস চাইনা দ্বীনি ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী জাতীয় দল গড়ে উঠুক। জামায়াতে ইসলামী যেহেতু জাতীয় ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী মযবুত ইসলামী দল গড়ে তুলতে চাচ্ছেন, সেহেতু দেশীয় শত্রু, আঞ্চলিক শত্রু ও আন্তর্জাতিক ইসলাম বৈরী শক্তি সব জামায়াতে খেদাও আন্দোলনে একাট্টা। তবে এ কথা সত্য যে ক্বওমী জগতের কিছু কিছু জাতীয় সমঝদার লোক জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করতেছেন আশা করি সংখ্যা আরো বাড়তে থাকবে। আমি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেছি দীর্ঘ দিন যাচাই বাছাই করার পরই। আমি জামায়াতে ইসলামীর আদর্শে বিমুগ্ধ,আশা করি আপনারা ও নিরপেক্ষ ভাবে যাচাই করলে মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জিন্দাবাদ। আল্লাহ কবুল করুন আমীন। Collected
Harun Khan
Harun Khan
630 Points

Popular Questions