Answered 2 years ago
আমাকে উত্তরের অনুরোধ করার জন্য মিলিন্দ চক্রবর্তী কে ধন্যবাদ, যদিও এই সম্পর্কে আমার নিজের সেরকম জ্ঞান নেই, বরং আমিও এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আগ্রহী। তবে নিজের পরিবারের বিষয়ে যা সামান্য কিছু জানি তা লিখতে পারি।
আমার পদবি দেখে সম্ভবত বোঝা যায় যে আমি এপার বাংলা, মানে, পশ্চিমবঙ্গেরই মানুষ। ('ঘটি' শব্দটির সঠিক অর্থ আমি ভালো বুঝি না, তবে স্থানের ভিত্তিতেই এরকম বিভাজন হয় তাহলে আমার মতে 'রাঢ়ী' শব্দটি বেশি উপযুক্ত।) আমাদের বাড়িতে নিয়ম বলতে সেরকম কিছু পালন করা হয় না। তবে ষষ্ঠীতে মা, জেঠিমা, কাকিমারা ষষ্ঠীর ব্রত পালন করেন, এবং তাঁরা সেই ব্রত অনুযায়ী খাদ্যগ্রহণ করেন, বাকিরা যারা ব্রত পালন করে না, তাদের সেরকম কোনও নিয়ম অনুসরণ করার ব্যাপার নেই। তবে অষ্টমীর দিনে এমনিতে তো পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার আগে উপোষ তো করাই হয়, এছাড়াও আমাদের বাড়িতে পুরো নিরামিষ খাওয়ার প্রচলন আছে, এমনকি কোন চাল থেকে তৈরি কিছু যেমন ভাত, পোলাও, খিচুড়ি, মুড়ি, চিঁড়ে ইত্যাদিও খাওয়া হয় না, ওইদিন মূলত লুচি, পরোটা এসব খাওয়া হয়। নবমীতে মাংস খাওয়ার চল আছে। দশমীতে বিসর্জনের আগে জেঠিমারা সবাই মা দুর্গাকে বরণ করে আসেন। তারপর সকলে কলাপাতার উপরে আলতা দিয়ে "শ্রী শ্রী ৺দুর্গামাতা সহায়" লিখে জলে ভাসায়। তারপর সবাই পরস্পরকে বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় করে, ছোটরা বড়দের প্রণাম করে, গুরুজনরা ছোটদের করেন আশীর্বাদ। আর মিষ্টি খাওয়া ও খাওয়ানো তো আছেই।
আমাদের মায়ের বাড়িরও সবাই 'ঘটি' বলা যায়। আমার মামাদের দেশের বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়, তবে আলাদা প্রতিমাতে করা হয় না, ঘটেই দেবী পূজিত হন। অবশ্য তাদের যে প্রতিষ্ঠিত কুলদেবী আছেন, সেই মা অভয়ার মূর্তিতে সারা বছর পুজো করা হয়, এবং দুর্গাপুজো সেই মন্দিরেই করা হয়। এই পুজো প্রায় দুশো বছরের পুরনো। এখানে প্রতিপদ থেকেই দুর্গাপুজো করা হয়। এবং যেহেতু তারা শাক্ত, তাই সপ্তমী, সন্ধিপূজা ও নবমীতে বলিও দেওয়া হয়, যদিও সেই বলির প্রসাদ পরিবারের কেউ গ্রহণ করে না। সন্ধিপূজাতে মহিলারা (মায়েরা) বীরাষ্টমীর ব্রত পালন করে থাকেন। অবশ্য এখানেও অষ্টমীতে লুচি খাওয়া হয়। নবমীতে মাংস আহার করা হয়।
অবশ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক নিয়ম শিথিল হয়ে এসেছে, যেমন অষ্টমীতে অনেকেই বাইরে ঠাকুর দেখতে বেরোলে এই সব খাওয়ার নিয়ম মানে না, বীরাষ্টমীর ব্রতও এখন সেভাবে কেউ করে না। কথায় আছে, "পরিবর্তনই সংসারের নিয়ম"😊।
শুভ শারদীয়া।
abbas publisher