Answered 2 years ago
বাংলাদেশ পুলিশে ও.সি. কোনো পদ (rank)এর নাম নয়। এটি একটি পদায়ন বা নিযুক্তি (posting বা appointment)। বাংলাদেশ পুলিশের থানাগুলোর ও.সি. হিসেবে বর্তমানে ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) পদবীর কর্মকর্তাগণ পদায়ন পান। সেই প্রেক্ষিতে আপনার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।
প্রথমেই উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ পুলিশের ASP পদের ৩৩℅ পদ (ইন্সপেক্টর পদ হতে) পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করার বিধান রয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশের থানাগুলোয় ও.সি. হিসেবে কর্মরত ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) পদবীতে সাধারণত দুই ধরনের কর্মকর্তা থাকেন। একদল কর্মকর্তা সরাসরি এস.আই. হিসেবে পুলিশে যোগদান করে একটি পদোন্নতি পেয়ে ইন্সঃ হয়েছেন। আরেক দল কর্মকর্তা প্রথমে কনস্টেবল হিসেবে যোগদান করে ধাপেধাপে (৩/৪টি) পদোন্নতি পেয়ে ইন্সঃ হন।
যারা কনস্টেবল হিসেবে যোগদান করেছিলেন, ইন্সপেক্টর হওয়ার পর সাধারণত তাঁদের কর্মজীবন খুব বেশি সময় অবশিষ্ট থাকে না। অন্তত (ASP পদে) পরবর্তী পদোন্নতির জন্য উপযুক্ত হতে বা পদোন্নতির সিরিয়াল আসার আগেই তাঁদের অবসরের সময় চলে আসে। এজন্য এধরণের চাকরিজীবনের শুরুতে কনস্টেবল পদে যোগদানকৃত নিরস্ত্র ইন্সপেক্টরগণ সাধারণত আর পদোন্নতি পান না।
কিন্তু যারা সরাসরি এস.আই. হিসেবে পুলিশে যোগদান করে তারপর ইন্সপেক্টর হয়েছেন, তাঁদের জন্য পরবর্তীতে ASP এবং অতিরিক্ত-এস.পি. পর্যন্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে, হয়ে থাকেন। সবসময়ের মতো বর্তমানেও যথেষ্ট সংখ্যক অতিঃ-এস.পি. বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত আছেন, যারা এস.আই. হিসেবে পুলিশে যোগদান করেছিলেন।
এছাড়া, সশস্ত্র শাখার ইন্সপেক্টরগণও (কনস্টেবল পদে যোগদান করেও) ASP পদে পদোন্নতি পেতে পারেন, পেয়ে থাকেন, পেয়েছেন। তবে এরচেয়ে উপরের পদে তাঁরা আর পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ পান না সাধারণত।
শহর ও যান শাখার ইন্সপেক্টরগণও ASP পদে পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ পান।
তাছাড়া, বিরল হলেও কেউকেউ এস.পি. পদেও পদোন্নতি পেয়ে থাকেন। দীর্ঘকাল পরে সাম্প্রতিক পদোন্নতিতেই এমন উদাহরণ দেখা গিয়েছে, যেখানে এস.আই. হিসেবে পুলিশে যোগদানকৃত কর্মকর্তা ধাপেধাপে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সুপার পদে উন্নিত হয়েছেন। এমনকি অতিরিক্ত-ডি.আই.জি. পদেও এরকম বিভাগীয় কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন— হাতেগোনা হলেও এমন দুয়েকটি উদাহরণ নিকট অতীতেই রয়েছে।
শুভেচ্ছা রইলো।
# সংযোজনীঃ
পুলিশ সহ বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রশাসনের সংস্কারের উদ্দেশ্যে ১৯৮২ সালে গঠিত ব্রিগেডিয়ার এনামুল হক খান নেতৃত্বাধীন কমিশন (যেটি এনাম কমিশন হিসেবে বহুল পরিচিত) প্রদত্ত রিপোর্টের নানাবিধ প্রস্তাবের একটির বাস্তবায়নের অংশ ছিল অফিসার-ইন-চার্জ (ও.সি.) হিসেবে (জি.আর.পি. ব্যাতিত বাকি) সবগুলো থানায় ইন্সপেক্টর পদবীর কর্মকর্তার পদায়ন।
বৃটিশ শাসনামল হতে এই ১৯৮৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত জেলা-পুলিশের অধীনস্হ (একাধিক থানা নিয়ে গঠিত) সার্কেলসমূহের প্রধান হিসেবে ইন্সপেক্টরগণ পদায়ন পেতেন এবং তাঁরা সি.আই. (সার্কেল ইন্সপেক্টর) হিসেবে অভিহিত হতেন। আরও উল্লেখ করা যেতে পারে, এনাম কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতেই ৮৩/৮৪ সাল থেকে সার্কেল সমূহের প্রধান হিসেবে এ.এস.পি.গণ পদায়িত হতেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমানে জেলা পর্যায়ের পুরনো (১২৫টি) পুলিশ সার্কেলগুলোর প্রধানের দায়িত্বে অতিরিক্ত এস.পি. পদবীর কর্মকর্তা পদায়ন করা হচ্ছে। এবং, নবগঠিত (১১৩/১১৪টি) সার্কেলের প্রধান হিসেবে এ.এস.পি.গণ নিযুক্ত হচ্ছেন।
এনাম কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী পুলিশের "সাধারণ" থানাগুলোর প্রতিটির জন্য যে জনবল কাঠামো মঞ্জুর করা হয়েছিল, তা এরূপ ছিলঃ ১-জন ইন্সপেক্টর, ২-জন এস.আই., ২-জন এ.এস.আই., ২০-জন কনস্টেবল। মেট্রোঃ, কোতোয়ালি, সদর সহ গুরুত্বপূর্ণ আরো কয়েকটি থানার জনবল আরেকটু ভিন্ন তথা বেশি ছিল। অবশ্য এই সময়ের (অর্থাৎ ৮৩/৮৪ সালের) আগেও দেশের (শুধুমাত্র) মেট্রোঃ, কোতোয়ালি, [মহকুমা] সদর ইত্যাদি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ইন্সপেক্টরগণও পদায়িত হতেন।
তবে, (কমবেশি) প্রায় ১৫/২০ বছর আগে পর্যন্তও জি.আর.পি. (রেলওয়ে পুলিশ) থানাগুলোর ও.সি. হিসেবে এস.আই.গণই নিযুক্ত হতেন। এবং তখন জি.আর.পি. সার্কেলগুলোর প্রধান হতেন ইন্সপেক্টরগণ। এছাড়া, পুলিশের নৌ-থানাগুলোর (যেমন— বাহাদুরাবাদ) ও.সি. হিসেবেও তৎকালীন সময়ে এস.আই.গণ ও.সি. হিসেবে পদায়ন পেতেন।
আর বলাই বাহুল্য, *বর্তমানে* বাংলাদেশ পুলিশের সবধরনের (অর্থাৎ জেলা-পুলিশ, মেট্রোপলিটন-পুলিশ সহ রেলওয়ে, হাইওয়ে, রিভার ইত্যাদি ইউনিটের) থানাগুলোর ও.সি. হিসেবে শুধুমাত্র ইন্সপেক্টর পদবীর কর্মকর্তাগণ পদায়িত হচ্ছেন।
এস.আই. এর পুরো উচ্চারণ হচ্ছে সাব ইন্সপেক্টর (উপ-পরিদর্শক)।
এ.এস.আই. এর পুরো উচ্চারণ হচ্ছে এসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর (সহকারী উপ-পরিদর্শক)।
জি.আর.পি. এর পুরো উচ্চারণ হচ্ছে গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশ।
riakhatun publisher