ঢাকা শহরে প্রতিদিন ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করলে কত টাকা উপার্জন হতে পারে বলে আপনার মনে হয়?

1 Answers   14 K

Answered 2 years ago

চায়ের হিসবাটা জানিনা, কিন্তু আমি বেশ কয়েকজন বাদাম বিক্রেতার সাথে আলাপ করে ধারণা করেছি যে ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করলে এক দিনে ৮০০ থকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত রুজি করে। বাদাম বিক্রেতাদের বেশির ভাগ ভৈরব বা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোক, কারণ সস্তায় কাঁচা বাদাম পেতে ভৈরব যাওয়া দরকার।

ধানমন্ডিতে এক চা দোকানীকে চিনতাম, তাও ২০০০ সালের আগে। একটা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে ফুটপাথের সাইডে ড্রেনের উপর তক্তা ফেলে চা-বিস্কুট বেচত লোকটা। আমাকে বলেছিলো সেই কালেই তার দৈনিক রুজি এক হাজার টাকার বেশি ছিল। আমি বুঝার চেষ্টা করতাম চা থেকে কত আর কলা-বিস্কুট থেকে সিগারেট থেকে কত পেতে পারে।

তরুণ কেউ যদি খাটাখাটনিকে ভয় না পায়, আর চাঁদাবাজ আর পুলিশের লোককে সামাল দিতে পারে, তাহলে পরামর্শ দেব দুই বন্ধু মিলে মাছ ব্যবসা ধরুন। নগদ চার লাখ টাকা নিন, রাত তিনটার আগে ভৈরব গিয়ে ট্রাক নিয়ে দাঁড়ান, তিন টন মাছ কিনুন চার লাখ টাকায়, ঢাকায় এসে আস্ত ট্রাক বোঝাই মাছ বেচে দিন চার লাখ বিশ হাজার টাকায়, কাওরানবাজারে। ট্রাক ভাড়া চান্দামান্দা এইসব নিয়ে খরচ ১০ হাজার, আর নগদ লাভ ১০ হাজার। বছরে ২০০ রাত এই কাজ করেন।

কোনো ব্যবসাই সহজ না। ভৈরব গিয়ে প্রাণে মারা যেতে না চাইলে আগে থেকেই ওখানকার একজন রক্ষাকর্তা ধরতে হবে। কাওরানবাজারে খুন থেকে বাঁচতে হলে আগে থেকেই গডফাদারদের আশ্রয় নিতে হবে। আর এ ছাড়াও লাগবে পুলিশের একজন বড় কর্তার আশীর্বাদ, আর একজন এম-পি মাপের বস।

এমনকি রাস্তায় বাদাম বেচতে গেলেও মনে রাখতে হবে রাস্তার অঘোষিত মালিক আছে। সেই মালিকের অনুমতি ছাড়া রাস্তায় নামলে বিরাট শক্ত হাড়-ভাঙা মার খেতে হবে। দুনিয়াটা চিরদিন এমন ছিলো: কোন রাজ্যই রাজা ছাড়া নেই। এইসব সংস্কার করতে গেলে নামতে হবে রাজনীতিতে, আর তার ফল যে খুব ভালো হবে সে আশা আমার নেই। ভাসানীর মতো সাধু পুরুষের অনুগামীরা যখন রাজনৈতিক ক্ষমতার স্বাদ পেলেন (বি-এন-পিতে যোগ দিয়ে), তাদের কাণ্ড দেখে আমি একদম অবাক হয়েছি। মনে হয়েছে, যে যায় লঙ্কায়, সেই হয় রাবণ। চাঁদাবাজ আর পুলিশকে তাদের সনাতন পাওনা না দিয়ে কেউ ব্যবসা করে লাভ ঘরে তু্লবে, সে আশা আমি করি না।

হিসাবটা সোজাই। বাজারে ঢুকতে গেলে বাজারের অঘোষিত মালিকদেরকে কিছু দিতে হবে। নীতির কথা নয়, বেঁচে থাকার কথা, আপোশ করার কথা। লড়াই চান? বেশ, করেন লড়াই।

আমার খুব মনে আছে। ন্যাপ, সব কমিউনিস্ট দল, জাসদ, ছাত্র ইউনিয়ন আর জাসদপন্থী ছাত্রলীগের স্লোগান ছিলো: লড়াই, লড়াই, লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই। কিন্তু কাজের বেলায় কি হলো? লড়াই রেখে অনেকেই নেমে পড়লো কাড়ায়, কাড়াকাড়িতে।


Rashed Rimon
rashedrimon
509 Points

Popular Questions