ঢাকা শহরের কিছু হারিয়ে যাওয়া পেশা সম্পর্কে বলতে পারবেন?

1 Answers   5.8 K

Answered 2 years ago

সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে কিছু পেশা। প্রযুক্তির উন্নয়ন কিংবা চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে হারিয়েছে সেসব পেশা। সেসব পেশাজীবীদের ক্ষণিক সময়ের জন্য সমস্যায় নিশ্চয়ই পড়তে হয়েছে, তবে তারা নতুন করে মানিয়ে নিয়েছেন অন্য কোনো পেশায়।

১.বাইজি:

বাইজিদের সম্পর্কে সাধারণ ঢাকাবাসীদের মধ্যে কৌতুহল ছিল। বাইজিদের বিশেষ ধরনের জীবনযাপন,কঠোর পর্দার মধ্যে বসবাস এবং প্রহরীদের প্রহরায় ঘোড়াগাড়ীতে যাতায়াতের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের সম্পর্কে অনেক কৌতুহল ছিল। পাটুয়াটুলীর বাইজিরা সঙ্গীদের নিয়ে হেঁটে খুব সকালে অদূরে বুড়িগঙ্গা নদীতে গোসলে যেত। তখন বুড়ীগঙ্গা নদীর পানি ছিল খুবই স্বচ্ছ ও সুপেয়। গোসল পর্ব শেষে বাইজিরা যখন ফিরতো তখন লোকজন গলির মুখে দাড়িয়ে থেকে সিক্ত বসনা বাইজিদের দেখে পুলকিত হতো। কারণ এছাড়া সাধারন মানুষের পক্ষে বাইজিদের দেখার আর কোন সুযোগ ছিল না।

ইংরেজ শাসন স্থায়ী হওয়ার পর বাইজি পেশায় ধীরে ধীরে ধস নামে। ঢাকার বাইজি পাড়ায়ও লাগে এর হাওয়া। নবাব,জমিদারদের আয়ের উৎস কমে যেতে থাকে। তাদের পৃষ্টপোষকতা করা আর সম্ভব হয়নি। তখন ঢাকায় নব্য ধনি শ্রেনীর জন্ম হয়,এরা বাইজিদের নাচ-গান উপভোগের চেয়ে শ্বেতাঙ্গ রমনীদের সঙ্গে বলড্যান্স উপভোগ করতে অধিক অর্থ ব্যয় করতে উৎসাহী হয়ে উঠেন। এভাবেই ঢাকা শহর থেকে বাইজিরা হারিয়ে যেতে থাকে।

২.ভিস্তিওয়ালা:

১৮৭৮ সালে ঢাকা শহরে আধুনিক সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয়। এর আগে ঢাকায় খাবার পানির উৎস ছিল পুকুর,কুয়া,নদী।সে সময় কিছু লোক টাকার বিনিময়ে মশক (চামড়ার ব্যাগ)-এ করে ঢাকা শহরের বাসায় বাসায় খাবার পানি পৌঁছে দিতো। এ ধরনের পেশাজীবীদের বলা হত ‘ভিস্তিওয়ালা’ বা ‘সুক্কা’। আর ভিস্তিওয়ালা বা সুক্কা-রা পুরান ঢাকার যে এলাকায় বাস করতো সেটা কালক্রমে ‘সিক্কাটুলি’ নামে পরিচিত হয়।

৩.বাতিওয়ালা

বর্তমানে বাতিওয়ালা ঢাকার বিলুপ্ত পেশাজীবী। একসময় রাত হলেই ঢাকা তখন ঘুটঘুটে এক অন্ধকার শহরে পরিনত হত। ঢাকার রাস্তার পাশে কেরোসিনের বাতি জ্বালানো শুরু হয় ১৮৭৭ সালে। হঠাৎ করেই ঢাকা শহরে এক নতুন পেশাদার শ্রেণির উদ্ভব হয়। বাতিওয়ালারা প্রতি সন্ধ্যায় মই বেয়ে ল্যাম্প পোস্টে উঠে সঙ্গে আনা কেরোসিন ভরে সেগুলোতে আলো জ্বালিয়ে দিয়ে যেত। ঢাকার শেষ বাতিওয়ালার নাম দক্ষিণারঞ্জন রাউত। ১৯৫২- ১৯৫৩ সালের পরে এই ব্যবস্থা উঠে যাওয়ার পর তিনি ওই পেশা থেকে অবসর নেন।

Shuvan Ahmed
shuvanahmed
515 Points

Popular Questions