টিউশনি করতে গিয়ে কখনো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন?

1 Answers   3.6 K

Answered 2 years ago

মনের মতো একটা প্রশ্ন পেয়েছি, উত্তর না দিয়ে থাকতে পারলাম না। তবে এখনো যেহেতু শিক্ষকতা পেশার সাথেই জড়িত, তাই অজ্ঞাতনামাই সই…


আমি এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকা কালীন সময় থেকে বুয়েটের শেষ দিনটি পর্যন্ত প্রথম শ্রেনী থেকে অনার্স স্টুডেন্ট পর্যন্ত ৯১ জন ছাত্র-ছাত্রীর প্রাইভেট টিউটর ছিলাম। কাজেই ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর কিছু বিব্রতকর অভিজ্ঞতা আছে আমার ভান্ডারে।


২০০০ সালে ধানমন্ডি ২৭ এর এক বাসায় স্ট্যান্ডার্ড-২ এর এক ইংলিশ মিডিয়াম পিচ্চিকে পড়াতাম, বাবা রোডস & হাইওয়ের ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন, তবে ভদ্রলোকের সাথে আমার দেখা হতো না বললেই চলে। টিউশনি রিলেটেড যাবতী কথাবার্তা-লেনদেন উনার স্ত্রীর সঙ্গেই হতো। বিকাল ৫ টা থেকে ৬.৩০ পর্যন্ত ছিলো পড়ানোর টাইম, তাই কালে ভাদ্রে ভদ্রলোকের সাথে দেখা হতো, সিড়িতে বা লিফটে। যাই হোক ছাত্রী পিচ্চি ছিলো ভিষন পাকনা এবং ত্যাদর। পড়ার বদলে স্কুলের গল্পেই তার আগ্রহ ছিলো বেশী, তার বাবা ছিলো তার হিরো আর মা কে সে সহ্যই করতে পারে না কারন শাসনটা মাই করতেন। তাই আমিও তার বাদরামী মাত্রা ছাড়ালে তার মা কে ডাকবো বলে ভয় দেখাতাম।


তো একদিন ঐ পিচ্চির পরীক্ষা চলছে কাজেই বাড়তি সময় নিয়ে পড়াতে হচ্ছে, এদিকে পড়ায় তার মোটেও মন নেই, অতএব আমাকে একটু কড়া হতেই হলো। ধমক চলছে সেই সাথে বার বার তার মা কে ডাকার হুমকিও দিচ্ছি। এদিকে মাগরীবের সময় হয়ে গিয়েছে দেখে আমি তার মা কে ডেকে বললাম ভাবি একটু নামাজটা পড়ে নিতে পারলে ভালো হতো, উনি আমাকে উনার প্রেয়ার রুম দেখিয়ে দিলেন (অন্যান্য দিন আমি পড়ানো শেষে ফেরার পথে মসজিদে নামাজ পড়ি, আর ড্রয়িং রুম সহ অন্যান্য রুমে প্রচুর ছবি থাকায় উনারা নামাজের জন্য আলাদা প্রেয়ার রুম বানিয়েছিলেন)। যাই হোক আমি নামাজ পড়ছি, এমন সময় ভদ্রলোক বাসায় ফিরলেন, ভদ্রমহিলা সম্ভবত তখন বাথরুমে ছিলেন। আমার নামাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিলো, আমি নামাজে বসেই তাদের বাবা-মেয়ের কথোপকথন শুনতে পাচ্ছিলাম।


ভদ্রলোক— আমার লক্ষি মামনি এতো কি পড়াশুনা করছে?


ছাত্রী- Ask teacher, he is too much now a days.


ভদ্রলোক— Why? Where is teacher?


ছাত্রী- He is inside, busy with mummy. He is more interested to mummy than my studies….


নামাজে বসে আমার তখন ঘাম ঝড়ছে, দ্রুত নামাজ শেষ করে ড্রইং রুমে দৌড়ে আসলাম, ছাত্রী তখন বাবার কোলে, সে বলেই চলেছে… টিচার পড়ার সময় শুধু মাম্মীকে ডাকে… আমার চেয়ে তার মাম্মীর প্রতি ইন্টারেস্ট বেশী….


ভদ্রলোক দেখি আমার দিকে অগ্নিশর্মা দৃষ্টি দিচ্ছেন, তার মুখ রাগে লাল হয়ে আছে, আমি কিছু বলতে যাওয়ার আগেই তিনি ওয়ালেট থেকে ২ টা ৫০০ টাকার নোট ছুড়ে দিয়ে বলেছিলেন… Just get lost, & never show your face… আমি বাসা থেকে বের হতে হতে শুনতে পেলাম উনি উনার স্ত্রীকে চিতকার করে বলছেন… You Whor.... How long It's going on……. আমি আর দেড়ি করিনি।


২০০২ সাল, বুয়েটে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে কোচিং করাই আর বেছে বেছে পশ এড়িয়াতে প্রাইভেট পড়াই ভালো টাকায়। সদ্য মোবাইল ফোন কিনেছি। ক্যান্টনমেন্টে এক কর্নেল সাহেবের অষ্টমশ্রেণী পড়ুয়া মেয়েকে পড়ানোর দায়িত্ব পড়লো আমার কাধে, অত্যন্ত মেধাবী, ভদ্র এবং সুন্দরী। এক সন্ধ্যায় হঠাৎ মোবাইলে এসএমএস পেলাম "apni jokhon onko koran, tokhon apnar mukh ta dekhle amar khub maya maya lage… bukta khali khali lage" বলা বাহুল্য ঐ মেয়েকে আমি অংক করাতাম, তাই অপরিচিত নাম্বার থেকে এসএমএস টা পেলেও আমার বুঝতে অসুবিধা হলো না যে আমার কোন ছাত্রী এটা পাঠিয়েছে। বয়সটা প্রেমে পরার মতোই ছিলো আর এই বয়সী এক যুবককে প্রেমে ফেলার জন্য এমন একটা এসএমএস যথেষ্ট ছিলো। তবুও টিউশনিতে ততোদিনে অভিজ্ঞতা ভালোই হয়েছে বলে এসএমএস এর কোন রিপ্লাই দিলাম না, তবে রিপ্লাই না দিলেও আমি পুরোপুরি কাইত। পরেরদিন অন্যান্য দিনের চেয়ে একটু বেশী মাঞ্জা মেরে পড়াতে গেলাম, গিয়ে দেখি সুন্দরী কর্নেল কন্যা যথারীতি পড়াশুনায় সিরিয়াস, গভীর মনোযোগ দিয়ে অংকে ব্যস্ত। আমি তখন পুরোপুরি কনফিউজড। এরই মধ্যে বাসার কাজের মেয়ে নাস্তা দিয়ে গেল, আমি চায়ে চুমুক দিতে দিতে অপরিচিত নাম্বারটা দেখিয়ে মিনমিন করে ছাত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম নাম্বারটা কি তোমার? ছাত্রী অংক খাতা থেকে চোখ তুলে নাম্বারটা দেখে বললো "এটা বাবার নাম্বার, ফোন বাসাতেই থাকে, আমরাও প্রয়োজনে ব্যবহার করি"। (বলা বাহুল্য তখনো মোবাইল সবার হাতে হাতে পৌছায়নি, আর খুব ব্যায়বহুলও ছিলো, ১ মিনিট কথা বললে ৭ টাকার মতো যেত, ৩০০ টাকার কার্ড কিনে ২১ দিন চালাতাম)। তো কর্নেল সাহেবের ফোন শুনে আমি রীতিমতো চুপষে গেলাম, তবুও সাহস করে আবার জিজ্ঞেস করলাম "বাবার মোবাইল ব্যবহার করতে সমস্যা হয় না?"… সে অংক থেকে তার অসাধারণ সুন্দর চোখ দুটি তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, " সচরাচর ব্যবহার করি না তো, খুব দরকার হলে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগে গোপনে এসএমএস ব্যবহার করি, তাও যোগাযোগ শেষে সব ডিলিট করে রেখে দেই। আর কেউ তেমন একটা কল করে না আমাকে, বাবা খুব রাগী তো…"। আমি বুদ্ধিমান প্রানী, এটুকু থেকেই যা বোঝার বুঝে নিলাম, যেমন, ১। কল করা যাবে না, ২। এসএমএস যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম, ৩। শুধু সে এসএমএস দিলেই তার রিপ্লাই দেওয়া যাবে, কারন কখন ফোন তার বাবার হাতে থাকবে তা তো আর আমি জানি না…ইত্যাদি।


যাই হোক প্রতি সন্ধ্যায় তার একটা করে এসএমএস পাই আর সেটার রিপ্লাই দেই, কিন্তু পড়ানোর সময় আমরা দুইজনেই খুব সিরিয়াস, বিশেষ করে ছাত্রী ভুলেও কখনো অংকের বাইরে কোন কথা বলে না। এদিকে প্রতি সন্ধ্যায় তার এসএমএস এর অপেক্ষায় থাকি আর সেটা পেলে সাথে সাথে রিপ্লাই দিয়ে সারারাত তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি, ভাবি এই সম্পর্কের ভবিষ্যতটা কেমন হবে, আমাদের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে এই সুন্দরী কিভাবে মানিয়ে নেবে, এতো বড় অফিসারের মেয়ে আমার ঘরে এসে রাধতে পারবে কি?…. এসব আরো কতো কি… এভাবে কেটেছে প্রায় দুই মাস, ততোদিনে দুইজনের পছন্দ-অপছন্দ, খুটিনাটি সব জানা শেষ, চলে এলো ১৪ই ফেব্রুয়ারী। যায়যায়দিন পত্রিকার সুবাদে আমরা সবাই তখন ভালোভাবেই জেনেগেছি যে ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে কি কি করা সম্ভব। কর্নেল কন্যা আগেই জানিয়েছে তার বাড়ির বাইরে যাওয়া মানা। তবে ঐদিন সে লাল শাড়ি পড়বে আর খোপায় দেবে বকুল ফুল, সঙ্গে আমিও যেন জিন্সের সাথে আমার নীল পাঞ্জাবিটা পড়ি সেটার জন্যও ছিলো জোড় আবদার। সে আরো জানিয়েছিলো আমার জন্য একটা গিফটও আছে। কিন্তু আমি কি গিফট কিনব তার জন্য? সে বার বার সতর্ক করে দিলো আমি যেন কিছু না কিনি… আমিও নাছোড়বান্দ, অবশেষে সে অনুরোধে ঢেকি গিলে বললো একটা ছোট মোবাইল ফোন হলে মন্দ হয় না, সেটা এতো ছোট হতে হবে যা বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখা যায়, তবে দাম হতে হবে বাজারের সবচেয়ে কমদামিটা। গরীব প্রেমিকের প্রতি তার এই বিবেচনায় খুশিতে সেদিন চোখে জল এসে গিয়েছিলো আমার।


যথারীতি টিউশনির টাকা থেকে তিন হাজার টাকায় একটা নকিয়া ১১০০ সেট আর সেই সময়ের সাড়া জাগানো "ডিজুস" সিমকার্ড (মাত্র ৩ টাকায় সারারাত কথা বলা যেত) কিনে নীল পাঞ্জাবিময় আমি হাজির ছাত্রীর বাসায়। ছাত্রী যথারীতি অংকে সিরিয়াস, তাছাড়া কথা অনুযায়ী শাড়ি না পরে সে পড়েছে গতানুগতিক তার টিশার্ট আর জিন্স। যাই হোক অভিমানের ভান করে পড়াচ্ছি, ইতিমধ্যে কাজের মেয়ে নাস্তা দিয়ে গেল। আমি চায়ে চুমুক দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলাম আমার গিফট কোথায়? ছাত্রী তার অসম্ভব সুন্দর চোখ জোড়ায় রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে কনফিউজড দৃষ্টিতে আমার দিতে তাকিয়ে থাকলো। আমি সেসবের তোয়াক্কা না করে পকেট থেকে তার জন্য আনা গিফটের প্যাকেটটা তার হাতে দিয়ে তার হাত ধরেই নীচু স্বরে বললাম "Happy Valentine's day, I love u…" আমার কথা শুনে আমার ছাত্রী এক লাফে চেয়ার থেকে ছিটকে উঠে সরে গেল কয়েক হাত দুরে, হাতের গিফটের প্যাকেট টেবিলে ছুড়ে দিয়ে বললো, "এসব কি বলছেন স্যার, বাবা জানলে কি হবে ভেবেছেন?…." ঠিক সেই সময় পর্দার আড়াল থেকে তাদের কাজের মেয়ে এসে আমার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত চলে গেল। আমি এবং আমার ছত্রী দুজনই অবাক হয়ে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম কিছুক্ষন, খেয়াল করে দেখলাম সে সেদিন লাল শাড়ি পড়েছিলো, খোপায় একটা বকুল ফুলের মালাও ছিলো, তার হাতভর্তি কাচের চুড়ি, কপালে একটা লাল টিপও ছিলো কি??….


সেই মূহুর্তে আমার কাছে সব পরিস্কার হয়ে গিয়েছিলো, আমার বুদ্ধিমতি ছাত্রীও মূহুর্তেই সব বুঝে নিয়েছিলো। মেয়েটির দেওয়া সেই প্যাকেটটা হাতে নিয়ে কোন কথা না বলে সে বাসা থেকে চলে এসেছিলাম, আর যাইনি কখনো। আমার পুরো পৃথিবী তখন উলোটপালোট অবস্থা। হোস্টেলে ফিরে প্যাকেটটা খুলে দেখি একটা উলে বোনা সোয়েটা, বুঝলাম মেয়েটার হাতেই তৈরী, সেটার বুকে আবার ইংরেজি অক্ষরে E লেখা। পরে আমার ছাত্রী ফোন দিয়েছিলো কয়েকবার, কিন্তু আমি যাইনি। আমার ছাত্রীর কাছ থেকেই জেনেছিলাম মেয়েটার নাম ছিলো ইতি, বাবা মা নেই, কর্নেল সাহেব তার গ্রামের বাড়ি থেকে এনে তার বাসায় কাজ দিয়েছিলেন, নিজ মেয়ের বয়সী বিধায় মেয়ের সাথে একই ক্লাসে ভর্তি করে দিয়েছিলেন, বাড়ির কাজের পাশাপাশি তার মেয়ের সাথে পড়াশুনাও করতো সে…..

এমন আরো অসংখ্য অভিজ্ঞতা আছে আমার। পরে কোনদিন বলবো সেগুলো। আজ এপর্যন্তই….


Abdul ALi
abdulalii
304 Points

Popular Questions