Answered 2 years ago
জিয়াউর রহমান দেশের ইতিহাসে আলোচিত শাসকের নাম। একই সঙ্গে তিনি নিন্দিত ও নন্দিত।
ব্যক্তিগত ভাবে সৎ ছিলেন । পররাষ্ট্র নীতিতে ব্যাপক সফল ছিলেন ।
তিনি কিছু গণমুখী সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করেন যা জনসাধারণকে আকৃষ্ট করেছিল। খাল খনন কর্মসূচি এর অন্যতম।
ওই সময় তিনি দেড় হাজারের বেশি খাল খনন ও পুনঃখনন করেছিলেন। যার অর্থনৈতিক সুফল জনসাধারণ পেয়েছে।
১৯৭৭-৭৮ সালে খাদ্য শস্য রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদিত হয়। প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এ ছাড়া গণশিক্ষা কার্যক্রম, গ্রাম সরকার, গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনী গঠনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন।
তিনি জনসাধারণকে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদেরও শরিকানা আছে। তৃণমূলকে জাগিয়ে তুলতে পেরেছিলেন তিনি।
তিনি পোশাক রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক পাঠানোরও উদ্যোগ জিয়া সরকারের আমলেই নেওয়া হয়।
পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি তার আমলেই শুরু হয়।
1.তিনি বাকশালের নিগড় থেকে এদেশের মানুষকে মুক্তি দিয়েছিলেন, ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। জিয়াউর রহমান ইচ্ছে করলে বাকশালী সংবিধান বহাল রেখে খুব সহজেই রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটা করেননি।
2.একদলীয় স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনর্বহাল করেন ।
3.জিয়াউর রহমানের আরেকটি মহৎ অবদান এ দেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়া। বাকশাল সরকার চারটি দৈনিক পত্রিকা রেখে দেশের সব পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল। জিয়াউর রহমান সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে সংবাপত্রের স্বাধীনতাকে অবারিত করে দেন। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বহু পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ওগুলোর মধ্যে কিছু পত্রিকা জিয়া সরকারের, এমনকি প্রেসিডেন্ট জিয়াকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে সংবাদ-নিবন্ধ প্রকাশ করলেও তিনি কখনো ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেননি।
4.এ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জিয়াউর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ১৯ দফা কর্মসূচি দিয়েছিলেন।
5. জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা পর্যালোচনা করলে এ সত্যটি প্রতিভাত হয়ে উঠবে। তাঁর সে উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, চিকিৎসা, গ্রামোন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নসহ সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত ছিল।
6.জিয়াউর রহমান এ দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকার আরেকটি কারণ আমাদের জাতিসত্তার উদঘাটন। ‘আমরা বাংলাদেশী’Ñ এ পরিচয়ে বিশ্বসমাজে মাথা উঁচু করে চলার কথা তিনিই বলে গেছেন। ভাষাগত সাযুজ্যের কারণে প্রতিবেশী একটি দেশের একটি অঙ্গরাজ্যের নাগরিকদের সাথে আমাদের জাতীয়তাকে গুলিয়ে ফেলা হয়েছিল।
পররাষ্ট্রনীতিতে : পররাষ্ট্রনীতিতে তাঁর দুটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে ফারাক্কা চুক্তি ও সার্ক গঠন। আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারতকে এককভাবে মোকাবিলা করা দুষ্কর ছিল। এই অবস্থায় তিনি অন্য সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে ভারসাম্য আনতে চেয়েছিলেন। ভারতের বিরোধিতার মুখে সার্কের উদ্যোগ নেওয়া সহজ ছিল না। আর ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে জাতিসংঘের অভিযোগ দাখিল করা ছিল অত্যন্ত সাহসিকতার বিষয়।
জিয়া হলেন ক্যানভাসের মত, যেখানে কোনো শিল্পীর তুলির ছোঁয়া ছাড়াই অঙ্কিত হয়ে আছে কর্মবীর এ রাষ্ট্রনায়ক ও তাঁর কীর্তির ছবি। হাজারো চেষ্টা করলেও সে ছবি মুছে ফেলা কারো পক্ষে কখনোই সম্ভব হবে না।
noyonkhan publisher