Answered 2 years ago
উত্তরটি নাতিদীর্ঘ রাখার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে রহস্যময় ব্যাপারটি নিয়ে উত্তর লিখলে একটু দীর্ঘ হওয়া স্বাভাবিক। তাই, ধৈর্য ধরে পড়ার জন্যে অগ্রিম আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।
১)
১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পরেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাঠামো ভেঙ্গে পড়েছিলো। তখনকার সব অফিসরেরই বিশ্বাস ছিল- একটু ঠিকমতো বুদ্ধির খেলা খেলে বন্দুক চালাতে পারলেই সিংহাসনে আরোহণ সম্ভব।
ক্ষমতার লড়াইয়ে চাতুরতার সাথে জিয়াউর রহমান জয়লাভ করেন। সব প্রতিদ্বন্দ্বীদের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে মেজর জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন।
২)
১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভ্যুত্থান হয়, যেগুলিতে জিয়াউর রহমানকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। জিয়াউর রহমান সবকটি অভ্যুত্থান অত্যন্ত শক্ত হাতে দমন করেন এবং প্রায় দেড় হাজার সেনা সদস্যকে ফাঁসি দেন।
তাই, সেনাবাহিনীতে জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে একটা চাপা ক্ষোভ কাজ করতে থাকে।
৩)
সেনাবাহিনীতে জিয়াউর রহমান সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করতেন দুইজন মানুষকে। একজন হলেন জেনারেল মঞ্জুর এবং আরেকজন হলেন জেনারেল এরশাদ। এরশাদের কূটচালে মঞ্জুরের সাথে জিয়ার দূরত্ব তৈরি হতে থাকে এবং এরশাদ হতে থাকেন জিয়ার প্রিয়ভাজন এবং অত্যন্ত বিশ্বস্ত। এজন্যই, এরশাদকে জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান পদে নিযুক্ত করেন। সেনাপ্রধান হওয়ার পর এরশাদ জিয়ার সাথে পরিকল্পনা করে মঞ্জুরকে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে স্টাফ কলেজে বদলির ব্যবস্থা করেন।
জিয়াউর রহমানের এমন আচরণে অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হন মঞ্জুর।
৪)
১৯৮১ সালের ৩০ মে রাতে জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে অবস্থান করছিলেন বিএনপির এক অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মেটানোর জন্যে। আর এদিক দিয়ে জেনারেল মঞ্জুর ব্যস্ত সেনাবাহিনীর কয়েকজন কমিশনড অফিসারকে সশস্ত্রভাবে সার্কিট হাউজে পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে।
উদ্দেশ্যঃ জিয়াউর রহমানকে জিম্মি করে ক্যান্টনমেন্টে এনে কিছু দাবি আদায় করা। যেমনঃ মঞ্জুরকে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে বদলি না করা, এরশাদের সেনাপ্রধান পদ কেড়ে নেয়া ইত্যাদি।
রাত ৪ টায় সেনাবাহিনীর ১৬ জন অফিসার ১১ টি সাব মেশিনগান, ৩ টি রকেট লাঞ্চার ও ৩ টি গ্রেনেড নিক্ষেপক রাইফেল নিয়ে সার্কিট হাউজ আক্রমণ করেন। কর্নেল মাহবুব ও কর্নেল মতি ছিলেন এই আক্রমণের নেতা।
সার্কিট হাউজে গ্রেনেড লাঞ্চার দিয়ে হামলা করে ভীতির সঞ্চার করে অফিসার দল। এরপর তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের করা হয় রাষ্ট্রপতি জিয়ার রুম। হাঁক ডাক শুনে জিয়াউর রহমান রুম থেকে বেরিয়ে আসলে মেজর মোসলেহউদ্দীন জিয়াকে জানান- "আপনাকে এখন ক্যান্টনমেন্টে যেতে হবে।"
জিয়াউর রহমান কিছু বলার আগেই কর্নেল মতি সাবমেশিনগান দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালান। মর্মান্তিকভাবে পরলোকগমন করেন জিয়াউর রহমান।
জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও বীভৎস। জিয়াউর রহমানকে এত নির্মমভাবে হত্যা করার কারণ সঠিকভাবে কেউ বলতে পারে না।
noyonkhan publisher