জন্ম নক্ষত্র অনুযায়ী সামান্য কিছু কর্ম জীবনে শুভ পরিবর্তন আনবে ?
0
0
2 Answers
6.5 K
0
Answered
1 year ago
আপনার জন্ম নক্ষত্র, এমন একটি নক্ষত্র, যা আপনাকে সব সময় একটু অসুবিধা দেবে। যখন আপনি নবতারা পদ্ধতি অবলম্বন করেন তাতে আপনার জন্ম নক্ষত্র শুভ নক্ষত্রের পর্য্যায় আসে না। যদিও তাকে সরাসরি অশুভ নক্ষত্রের পর্য্যায়ে-ও নেওয়া হয় না। কিন্তু এমন কোনো কর্ম যা আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী আপনি করবেন, তাতে জন্ম নক্ষত্রকে পারত পক্ষে বেছে নিতে নিষেধ আছে। তার কারণ কি হতে পারে..
দক্ষিন ভারতীয় জ্যোতিষ এই বিষয়ে একটি উত্তর দেয়, যা গ্রহণযোগ্য বলে আমার মনে হয়। জন্ম নক্ষত্র এই জন্য আমাদের অসুবিধা দেয়, কারণ আমরা এই নক্ষত্রে জন্মেছি। এর বিষয়ে আমরা জানি না। তাই আমরা নার্ভাস অনুভব করি। এই নক্ষত্র যখনই আমাদের জীবনের ঘটনার মধ্যে আসবে তখন আমরা নার্ভাস হয়ে, কিছু ভুল করবো। আমাদের মন মেজাজ ঠিক থাকবে না। এই নক্ষত্র সংক্রান্ত উর্জা সময়ের সাথে পরিপক্কতা দেবে। যখন আমরা আস্তে আস্তে জেনে জাই তারপর। এই নক্ষত্র আমাদের সংশয় দেয়।
আপনি এই নক্ষত্রকে কোনো দিন বুঝতে পারবেন না। তার কারণ এটি আপনার জীবনে সদাশিব বা সদাজীব নক্ষত্রের মধ্যে একটি। তার অর্থ এটি সর্বদাই ত্বরান্বিত। active। এটির সংক্রান্তে আপনি যতোই জেনে নিন, পড়ে নিন, বুঝে নিন, তারপরেও আপনি ঘটনাচক্রে এর সংক্রান্তে ভুল করবেন। ভুল হবেই। যদি তা না হয় তাহলে আপনি পূর্ণজ্ঞানী। সৎ গুরু।
আপনার কুষ্ঠিতে প্রত্যেকটি গ্রহ/ নক্ষত্রের অবস্থানের একটি ভালো দিক আছে, একটি খারাপ দিক আছে। যে পূর্ণজ্ঞানী শুধুমাত্র সেই ব্যক্তি তার ভালো দিকটা কার্যকর করবে। খারাপ দিকটা সে ক্রিয়ান্বিত করবে না। তাই চারটি সদাশিব/সদাজীব নক্ষত্র সম্পর্কে আপনার তেমন কিছু একটা করার নেই। এই নক্ষত্র গুলি আপনার পারিপার্শ্বিক ব্যক্তিদের মধ্যে পাওয়া যাবে। আপনার বাড়ীতে, স্কুলে, অফিসে, আপনার গাড়ী, তার রং, ইত্যাদিতে। এরা সর্বদাই আপনাকে বিভিন্ন কর্মে লিপ্ত রাখবে।
উদাহরণ, আমার জন্ম নক্ষত্র আর্দ্রা। এটি রাহুর নক্ষত্র। কিন্তু আর্দ্র নক্ষত্র কর্ম বহন করে শুক্র গ্রহের। তাহলে আমার জীবনে শুক্র, মানে মেয়ে মানুষ গুরুত্বপূর্ণ। আমি অনেকটা বয়স পর্য্যন্ত মেয়েদের দেখলে সঙ্কোচ করতাম। পরবর্তী কালে মেয়ের প্রেমে পড়ে দেশ ছেড়ে দিই। সেখানে মেয়ের সম্পর্কে এসে চাকরি বদল করে, দেশ বদল করে দিই। এই প্রত্যেক জন মেয়ে কোনো না কোনো ভাবে বিদেশী ছিলো( রাহু element)। এদের সাথে প্রচন্ড প্যাশানেট সম্পর্ক, অনেক মন মালিন্য, দুর্নিবার আকর্ষণ, তারপর হুট করে শেষ। তাহলে রাহু, শুক্র, অষ্টম ঘর, আর্দ্রা, মানে রুদ্র তাদের সবার গুন বৈশিষ্ট্য যোগ হয়ে গেল। আমার স্ত্রী মানে প্রকৃত অর্থে আমার জীবনে শুক্র, সে আসলো অনেকটা পরে। তার সাথে জড়িয়ে পড়ে দেশে ফিরলাম।
আর্দ্র নক্ষত্রে চন্দ্র। মাতার নৈসর্গিক কারক। মাতার সাথে সব কিছুতে মত ভেদ। মাতা রেগে গেলে ‘রুদ্র’মূর্তি ধারণ করতেন। বেদম পিটানি। আর আমি নটরাজের মতন বাচবার জন্য নাচতাম 🙈।তাহলে বুঝতেই পারছেন, যে আপনার কিছু করার নেই। এখন রুদ্র যদি আপনার ইষ্ট দেবতা, তাহলে আপনাকে তার আরাধনা করতে হবে। রুদ্র একা থাকেন, বনে জঙ্গলে থাকেন, তিনি পশু প্রাণীদের রাজা। মানে রক্ষক। তাহলে আমার পশু প্রাণীদের কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। আর আমি যে কত রকমের মাংস খেয়েছি আমি নিজেও গুনতে পারবো না। আপনার লগ্ন থেকে অষ্টম, চন্দ্র থেকে অষ্টমে যেই প্রাণী আছে, তাকে খাওয়া উচিত নয়। আমি কাউকেই ছাড়িনি। রুদ্রের কোমরে একটি পুটলি থাকে। তাতে কিছু প্রাকৃতিক ঔষধি আছে। তার মানে কিছু রিমেডি করার সাধন।
এবার এই নক্ষত্র আমার তৃতীয় ঘরে। আমার সাহস, আমার সায়কোলজী, আমার হাত, ঘাড়, আমার শ্রবণ ক্ষমতা। এখানে চন্দ্র অবস্থিত। এ-কি আমাকে খুব সাহসী করতে পারতো? কিন্তু রাহু লগ্নে। তাও বর্গোত্তম ডিগ্রিতে। বিধায় দুঃসাহসী করে দেয়। বিদ্রোহী। তাও মেষ রাশিতে। লগ্নে মেষ রাশিতে রাহু। শুক্র অষ্টম ঘরে। তৃতীয় ঘর অষ্টম থেকে অষ্টম। তাহলে heavily karmic কিছু একটা হতে হবে। শারীরিক সম্পর্ক প্রথম সময়ে স্থাপন করতে বিভিন্ন ঘটনাক্রম ছিলো। তা ও এক রকমের নিজেকে জানবার বুঝবার উপলব্ধি।
কি্ছু জ্যোতিষের এডভান্সড কন্সেপট: কুষ্ঠিতে, আপনার জীবনে যা প্রবেশ করবে, একাদশ ঘর থেকে করবে, আর যা বেরিয়ে যাবে তা তৃতীয় ঘর থেকে বেরিয়ে যাবে। তাই তৃতীয় ঘরের আরো বিভিন্ন কারকত্ব আছে। আর আমার ক্ষেত্রে সেখানে অতীব গুরুত্বপূর্ণ গ্রহ চন্দ্র অবস্থিত। আর সেখানেই জন্ম নক্ষত্র। তাও রাহুর নক্ষত্র যে শুক্রের কর্ম বহন করছে, আর তা অষ্টমে।
এবার, আমার যোগ ইন্দ্র/মহেন্দ্র/ ঐন্দ্র (বিভিন্ন নামে ডাকা হয়)।এই যোগ তাদের হবে যাদের পূর্বজদের কর্ম বাকি আছে। মানে শ্রাদ্ধ, তর্পন ইত্যাদি নিয়ম মতন করা আমার প্রধাণ কাজ। তাদের স্মরণ করা, তর্পণ করা আমার কর্তব্য। আমার বৃহস্পতি বক্রি হয়ে মঘ নক্ষত্রে। এই কর্ম আমার সন্তানের কাছেও পৌছাবে। যেহেতু তা পঞ্চম ভাবে। কাকতালীয় বলতে পারেন, এমনই হলো যে আমার সন্তানের নামে ‘ইন্দ্র’ শব্দটিই এসে গেল।যা হোক- এই এর দরুন রাহু হলো যোগকারক গ্রহ। আর অবযোগী হল শুক্র। কিন্তু আমার করণ হলো বনিজ। তার গ্রহ হলো শুক্র। তাই আমি বেচে গেলাম। কারণ যদি পঞ্চাঙ্গে কোনো গ্রহ কিছুর স্বামী, তাহলে তার সেই dignity প্রাধান্য পাবে। কিন্তু বসেছে তো সে অষ্টমে, জীবনে তার ভাবের কর্ম তো আনতেই হবে। তাই সে জীবনে অনেক এমন ঘটনা দিল যা সুখকর নয়, কিন্তু শিক্ষাপ্রদ এবং জ্যোতিষ শাস্ত্রও এনেছে, এবং তার সূত্রপাত এক জন প্রেমিকার বিরহে। শুক্রের কর্ম বহন করছে রাহুর নক্ষত্র। তাই তা ট্রিগার হলো বিদেশে। এই প্রেমের ঘটনায় আমার মা আপত্তিতে ছিলেন, তারপর মেনেছিলেন। যাক, এর আরো অনেক গভীর ভাবে অনেক ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে পারি, কিন্তু আমি শুধু এমন ঘটনা বলছি যা সবার সামনে বলা যায়, অথবা যাকে বলছি সে কি কতটা জানে, ইত্যাদি না জেনেও বলা যায়।
নক্ষত্র জ্যোতিষ নিয়ে বেশীর ভাগটাই খুব গূঢ়, এবং তাতে সবাইকে বলতে নিষেধ করা হয়।এমন কি আপনার শিক্ষক কিছু কথা আপনাকে বিশেষ করে বলে, আপনার কাছে প্রতিশ্রুতি নেন, যে আপনি এর ব্যবহার করবেন, কিন্তু এটা সবাইকে বলবেন না। যা সাধারণত সব বইতে পাওয়া যায়, ততটাই বললাম। এই উপরিউক্ত পরিস্থিতিতে করণীয় কি, কোন নক্ষত্রকে আপনি ত্বরান্বিত করবেন, তা হলো একটি পদ্ধতি। কারণ সদাজীব নক্ষত্রের আপনার কাছে কিছু করার নেই। বিশেষ করে সূর্য নক্ষত্রের। এর কর্ম থেকে নিস্তার আপনি পাবেন না। না ইতিবাচক, না নেতিবাচক। এ তো আপনাকে অনুভব করতেই হবে। ভুগতে হবে-ই। এখানে, আপনি বলতে, আপনার কোনো আত্মীয়, পরিজন, স্ত্রী সন্তান, কার উপর দিয়ে বা কার দ্বারা সেই কর্ম আপনার কাছে, আপনার জীবনে আসবে, তা কুষ্ঠিতে দেখতে হবে।
আর অবযোগী নক্ষত্র এবং তার বৈশিষ্ট সারা জীবন আপনাকে আকৃষ্ট করবে। ধরুন মৃগশিরা নক্ষত্র কারুর অবযোগী নক্ষত্র। তাহলে তার জন্য নারকেল বর্জনীয়। কিন্তু দেখবেন তারা নারকেল, নারকেলের সন্দেশ খেতে ভীষণ ভালোবাসেন। গ্রাম্য এলাকায় হলে তাদের বাড়ীতে নারকেল গাছ পাবেন। আর যেটি যোগী নক্ষত্র হবে, তার বৈশিষ্টের বস্তু সে ব্যবহার করে না, তার ভালো লাগে না। এটাই হলো ভাগ্য।
যদিও কন্সাল্টেশন দেওয়ার সময় আমরা বলে দিই, এটা ব্যবহার করবেন, ওটা করবেন না ইত্যাদি। তারপরেও উপযুক্ত পদ্ধতি হলো, জীবনের পূর্বার্ধে যোগী নক্ষত্রদের সাহায্য নিন, তার অনুরুপ কর্ম করুন, তার বস্তু ব্যবহার করুন, আর জীবনের শেষে অবযোগী নক্ষত্রদের কর্ম করুন। সেটাও আপনাকে করতে হবে। বা করে নেওয়া উচিত। তবে আমরা সবাই করি তার উল্টো।
যাক, এটি একটি দীর্ঘ বিষয়।
munnikhatun publisher