Answered 2 years ago
জীবনানন্দ দাসের শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলোর মধ্যে এইটা একটা। নিচে এই কবিতার কয়েকটা লাইন দেয়া হলো -
এক গাছা দড়ি হাতে গিয়েছিলে তবু একা-একা;
যে-জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের— মানুষের সাথে তার হয়নাকো দেখা
আমি সাহিত্য বিশারদ নই। তবে প্রশ্নটা আমার মনে ধরেছে। আর কবিতাটাও আমার খুব পছন্দের একটা, কতবার পড়েছি আর ভেবেছি। আহারে জীবন, আহা। এই কবিটা পড়ে আমার যা মনে হয়েছে -
একজন ব্যক্তি, যিনি বিবাহিত। তার স্ত্রী আছে, সন্তান আছে। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা আছে। কেন যেন মনে শান্তি নেই ব্যক্তিটির। কোন কারনে ব্যক্তিটি ডিপ্রেশনে চলে গেছে। তিনি হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি আত্মহত্যা করবেন। সে উদ্দেশ্যে তিনি চুপিসারে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন।
এরপর কবি বর্ণনা করেছেন আমাদের আশেপাশে ছোট ছোট কীট পতঙ্গও কেমন করে জীবন প্রবাহিত করে, তারা এতো হতাশা, দূরাশার ভেতরও আশার আলো দেখে। তারা জীবন ভালোবাসে। সকল ব্যথা, সকল কোলাহলের ভেতরেও চুপিসারে জীবনকে ভালোবাসে। দিনশেষে না পাওয়ার পাল্লাটা ভারি হলেও তারা ভেঙে পড়ে না, রাত শেষে যেমন সকাল হয়। তেমনই সকল কীট পতঙ্গ আশা করে একদিন সকল ঠিক হয়ে যাবে। এই আশায় তারা বাঁচে, বাঁচতে চেষ্টা করে।
এরপর কবি হতাশা কাটিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, চারেদিক কেবল হতাশা নয় আশপাশে ছোট্ট ছোট্ট কত সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে,খুব কাছেই, হয়তো চোখের সামনেই তবু অদেখা কত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। একটু খেঁয়াল করলেই যেন তা ধরে দেয়৷ একটু ভালো করে অবজার্ভ করলেই সেই সুন্দর সুন্দর জিনিসগুলো চোখে পড়ে।
এতোকিছুর পরেও ব্যক্তিটি পরাজয় বরণ করে। তিনি চুপিসারে আত্মহনন করে। তার স্ত্রী, যিনি ছিলেন ওই ব্যক্তিটির সবচেয়ে কাছের একজন, তিনি প্রকৃতি, পরিবেশের সকল সুক্ষ সুক্ষ লক্ষ্য করেন তিনি আশা বাচিয়ে রাখেন অথচ তারই এতো কাছে থেকেই ব্যক্তিটি সকল কিছু অনুধাবন করেন নাই। জীবন যুদ্ধে পরাজিত, ক্লান্ত শরীর বয়ে বেড়াতে বেড়াতে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে মাথানত করেন মৃত্যুর কাছে।
এই কবিতাটা মাত্র ক'টা লাইনের অথচ এর ভেতর লুকিয়ে আছে কি বিশাল একটা গল্প তা সহজেই অনুমেয়। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত জীবনানন্দ মৃত্যুকে নিয়ে অনেক ভাবতেন। জীবন যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক জীবনানন্দ সংসার জীবনে তেমন একটা সুখি ছিলেন না। দাম্পত্য কলহের জের ধরে মাঝে মধ্যে অশান্তি হত। এর মাঝেও তিনি শুধু কবিতা লিখতেন, কোথাও ছাপা হতো না, কোন আয় হতো না। অভাব অনটনে তিনি দিনকে দিন জীবন থেকে সরে যাচ্ছিলেন। তার পরের গল্পতো সবারই জানা, ট্রামে চাপা পড়ে আগেও কেউ মারা যায়নি জীবন বাবু ছাড়া। ধারনা করা হয় সংসার যাত্রায় আনাড়ি জীবন বাবু স্বেচ্ছায় জীবন ত্যাগ করেন। ট্রামের নিচে ঝাঁপ দিয়ে স্বেচ্ছা মৃত্যু বেছে নেন।
কি অদ্ভূত, জীবনে কোন আনন্দ না থাকা না পাওয়া, হতাশার সাগরে ডুবে মরা একটা লোকের নাম জীবনানন্দ। যেন শান্ত নামের ছেলেটা এলাকার সবচেয়ে বখাটে।
dolnakhatun publisher