ছোটবেলার একটি ঘটনা বলবেন যা আপনাকে আজও শিহরিত করে?
0
0
1 Answers
7 K
0
Answered
1 year ago
অভাবের যন্ত্রণা কঠিন বাস্তবের সত্যি ঘটনা।। একান্তই ব্যক্তিগত জীবনের সত্যি ঘটনা।মানুষের কাছে সহানুভূতি আশা করছি না।শুধু টাইম পাস বা হাস্যকর ঘটনা না ভাবলে খুশি হব।এরকম কোন কিছু কোন মানুষের সঙ্গে না ঘটে ঈশ্বরের কাছে এই কামনা রইল।=আমার কাছে কেউ কিছু পায় বলে সকলের সামনে প্যান জামা খুলে বাড়ি চলে যেতে বলা মানে অনুভব করতে আশা করি আপনাদের কিছু অসুবিধে হচ্ছে না!
পায়ের নিচে মাটিটার অনুভব পাচ্ছিলাম না সেদিন!পাশে রেললাইন দাঁড়িয়ে অনুভব করছিলাম মৃত্যুটা কেমন হবে আমার!মায়ের মুখটাও মনে পড়ছিল!কিন্তু এভাবে বাড়ি যাওয়াটা কি সম্ভব হয়ে উঠবে?লাজ লজ্জা মান সম্মানের বাঁধ ভেঙে কি করে বাড়ি পর্যন্ত যাব এভাবে,বাড়ি যাওয়া যায় কি? সেদিন হৃদয়ের বেদনার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মনের আওয়াজটাই শুনেছিলাম।কেউ আমাকে আওয়াজ দিয়ে বলছিল তোর মরণটাই সোজা হবে।
তাই রেললাইনে ছুটে আসা মেলটেনটার .. গতি অনুভব করছিলাম।প্ল্যাটফর্মের দিকে ছুটে গিয়ে!এমন একটা মানুষকে দেখলাম প্লাটফর্মে বসে আছে!ঝাঁপ মারতে গিয়ে আটকে গেছিলাম সেদিন।নিজের মৃত্যু সহ্য করতে পারতাম ঠিকি !প্ল্যাটফর্মে বসে থাকা বাবার নয়।কারণ সে আমাকে দেখে ফেলেছিল।…
এসব ঘটনার অনেক আগে ছোটবেলায়।= আমাদের ছোট পরিবার অভাবের কোনো শেষ নেই মা বাবা আমি আর দিদি,আমার দশ বছর বয়স হবে,তখন ভাড়া বাড়িতে থাকতাম। অভাব প্রত্যেকটা দিনই আমাদের পেছন ছাড়তো না।ভাড়া দেয়ার সময় হলে বাবা ঠিকমতো ভাড়া দিতে পারতো না বলে, বাড়িওলা ঘরের জিনিস একটা একটা করে নিয়ে যেত, যে মাসে ভাড়া দিতে পারতোনা বাবা। আমার বাবা একটা ইলেকট্রিকের কাজ করতো।
খুব সাদা সিধে মানুষ ছিল। এতটাই সাদাসিধে ছিল যে। কাজ করে মানুষের থেকে টাকা চাইতে পারত না।সে যা দিত তাতেই সন্তুষ্ট হতো। জীবন সে ভাবে চলতো না তবুও তাকে টেনে হিজরে প্রত্যেকটা মুহূর্ত যাহোক করে চালানো হতো।অভাবে জালায় বাড়িতে অশান্তি মাঝে মাঝে লেগেই থাকতো।কোন কোন সময় বাবা বাইরে থেকে ধার দেনাও করতো। ঠিক টাইমে তাদের পয়সা। না দিতে পারায় বাবাকে তারা বেঁধেও রাখত।
বাড়ির লোক গেলে তবেই ছাড়তো।জীবন সংঘর্ষে ভরা ছিল কিন্তু সংঘর্ষ করার কেউ ছিল না। খুব ভালো মনে আছে বাবা এলে রান্না হবে, সেই অপেক্ষায় আমরা জালন কুড়িয়ে এনে উননের পাশে বসে থাকতাম,রাতে আমাদের কপালে আলু ভাতে ভাত বেশি জুটতো।বাধ্য হচ্ছি বলতে তখন যেন কষ্ট দুঃখ আমাদের প্রচন্ড ভালবেসে ফেলেছিল। তাই জন্য সে সুখের কোন ছিটা ফোটাও রাখতো না।
তখন আমি সবকিছু ভালোভাবে অনুভব করতে পারতাম অভাবে জ্বালায় আমার মা ভুল পদক্ষেপ ফেলতে শুরু করেছিল।মায়ের চোখে মুখে স্বভাবের নয়!অভাবের ছাপ ছিল আমার ভালো মনে আছে।বাড়িওলার সঙ্গে একটু একটু প্রেম ভালোবাসায় লিপ্ত হয়ে গেছিল।এটা ভেবে যে আমার ছেলে মেয়েরা একটু ভালো মন্দ খেতে পারবে একটু হলেও পড়তে পারবে। ঠিক তেমনটাই হল আমরা প্রত্যেকদিন ভালো ভালো খাবার পেতে লাগলাম কিন্তু বেশিদিন কপালে সহ্য হলো না।
একদিন জানাজানি হয়ে গেল।বাবা সুসাইড করতে গেল!আমাদের থাকতে দিল না আমরা আবার অন্য পাড়ায় ভাড়া চলে গেলাম।জীবন আমাদের যাযাবর করে রেখে ছিল,সেদিন যাই হোক এভাবে আমরা অনেক ঘর পাল্টেছি। অভাবের সীমা ছাড়িয়ে গেলে মা আমাদের মামার বাড়িতে রেখে আসতো। তিনটে মামা মাইমা,ফাই ফরমার্চ শুনতে শুনতে কখন জীবনটা চাকোরে পরিণত হয়ে উঠেছিল বুঝে উঠতে পারিনি।
যখন বুঝতে পারলাম অনেক অনেক দূরে সবাইকে ছেড়ে চলে গেলাম।সেদিনগুনো অনুভব আজও মনে পরে,বাবার কথা বেশি করে মনে পড়ে।কিন্তু সংঘর্ষ আজও চলছে!কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে,এখনো অনেকটাই বাকি আছে। জীবনের সবটাই ইতিহাস!কোনো পাতায় লেখা হবে না হয়তো,কেউ শুনবেও না। এভাবেই লিখে যাবো মনের কথা! সময় যখন হয়ে উঠবে।সকলের ভালো থাকার কামনায় শেষ করলাম।
runalaila publisher