গুগলের সিইও হতে কোন কোন বিষয়ে দক্ষতা থাকা দরকার? বিস্তারিত বলবেন কি?

1 Answers   2.2 K

Answered 2 years ago

একটি প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় পদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (Chief Executive Officer) বা সিইও (CEO)। প্রতিষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেবার দায়িত্ব থাকে তার উপর। মূলত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ পদ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।


এক নজরে একজন চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার


সাধারণ পদবী: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, সিইও

বিভাগ: ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা

প্রতিষ্ঠানের ধরন: সরকারি, বেসরকারি, প্রাইভেট ফার্ম/কোম্পানি

ক্যারিয়ারের ধরন: ফুল-টাইম

লেভেল: টপ

টপ লেভেলে সম্ভাব্য অভিজ্ঞতা সীমা: প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ

টপ লেভেলে সম্ভাব্য গড় বেতন: প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ

টপ লেভেলে সম্ভাব্য বয়সসীমা: প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ

মূল স্কিল: ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কিত জ্ঞান, নেতৃত্ব দানের দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, বিশ্লেষণী ক্ষমতা, নেটওয়ার্কিংয়ের দক্ষতা, যোগাযোগের দক্ষতা, মানসিক চাপ সামলানোর ক্ষমতা

বিশেষ স্কিল: কর্মী ব্যবস্থাপনা


একজন সিইও কী ধরনের কাজ করেন?


প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা;

পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত বিভাগীয় প্রধানদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া;

প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেয়া;

প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক গঠনে পরিবর্তন আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা;

প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা;

বিভাগীয় প্রধান ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কর্মকাণ্ডের উপর নিয়মিত আপডেট নেয়া;

প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বোর্ডের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা;

প্রতিষ্ঠানের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে পরিচালনা বোর্ডকে অবহিত করা;

প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বোর্ডের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করা;

অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি বা পার্টনারশিপ তৈরিতে নেতৃত্ব দেয়া;

প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য ঝুঁকি আর সম্ভাবনার ক্ষেত্র চিহ্নিত করা ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া;

উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক বা কর্মসূচিতে প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করা।

একজন সিইওর কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?


নিজের ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কিত গভীর জ্ঞান;

নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা;

সমস্যা সমাধানের দক্ষতা;

বিশ্লেষণী ক্ষমতা;

নেটওয়ার্কিংয়ের দক্ষতা;

যোগাযোগের দক্ষতা;

মানসিক চাপ সামলানোর দক্ষতা;

বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা;

আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দ্বন্দ্ব মীমাংসার দক্ষতা;

গতানুগতিক ধারার বাইরে চিন্তা করার ক্ষমতা;

কর্মী ব্যবস্থাপনার দক্ষতা।

গুগলে যেভাবে চাকরি পাবেন


গুগলে চাকরি পেতে পরীক্ষায় বেশি জিপিএ থাকতে হবে, এ ধারণা করা ঠিক নয়। গুগলে চাকরি পেতে জিপিএ কিংবা পরীক্ষায় খুব ভালো নম্বর পাওয়ার বিষয়টির তেমন কোনো গুরুত্বই নেই। কারণ পরীক্ষার ফল দেখে কারও সম্পর্কে ধারণা করা যায় না—এ কথাগুলো নিউইয়র্ক টাইমসকে এক সাক্ষাত্কারে জানিয়েছেন গুগলের মানবসম্পদ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লাজলো বক।


লাজলোর মতে, ধীরে ধীরে প্রচলিত শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় বা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছাড়া গুগলকর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। গুগলের কিছু কিছু টিমে ১৪ শতাংশ কর্মীর প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ডিগ্রি নেই। এ অবস্থায় অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার গুরুত্ব না থাকলে চাকরি মিলবে কীভাবে? এ বিষয়ে লাজলো বকের মুখ থেকেই আমরা শুনব গুগলে চাকরি পাওয়ার শর্তগুলো।


‘আমাকে ভুল বুঝবেন না’ লাজলো শুরু করেন এভাবেই। পরীক্ষায় কেউ ভালো ফল করলে বা ভালো গ্রেড পেলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। তবে গুগলে চাকরি পেতে গণিত ও কম্পিউটিং, বিশেষ করে কোড লেখার দক্ষতা জরুরি। যদি কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষায় ভালো গ্রেড অর্জন করে এবং সত্যিকারের দক্ষতা দেখাতে পারে, তারা গুগলে চাকরির জন্য অবশ্যই আবেদন করতে পারে। গণিত আর কোড এ দুটি দক্ষতা চাকরিপ্রার্থীর জন্য একটা বাড়তি সুবিধা করে দিতে পারে। তবে এ দুটির বাইরে গুগলে চাকরি পেতে আরও অনেক দক্ষতাই অর্জন করতে হবে।

লাজলো বক ব্যাখ্যা করে বলেন, গুগলে চাকরির জন্য পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যদি চাকরির পদটি কোনো কারিগরি বিষয় হয়, তবে জোর দেওয়া হয় কোডিং দক্ষতার ওপর। গুগলে চাকরির প্রায় অর্ধেকই অবশ্য কারিগরি শ্রেণীতেই পড়ে। প্রতিটি চাকরির ক্ষেত্রেই যে মূল বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয় তা হচ্ছে সাধারণ জ্ঞানের দক্ষতা। এ বিষয়টিতে আইকিউয়ের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। এখানে সাধারণ জ্ঞান বলতে বোঝানো হচ্ছে, কোনো বিষয় শেখার দক্ষতা, দ্রুত শেখার ক্ষমতা এবং তা কাজে লাগানোর ক্ষমতা।

এই দক্ষতা হচ্ছে অতিসূক্ষ্ম জিনিসের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা। গুগলে চাকরির জন্য সাক্ষাত্কার নেওয়ার সময় আচরণগত এ বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়।

লাজলো বক মনে করেন, গুগলে চাকরি পেতে হলে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে নেতৃত্বগুণ। প্রচলিত নেতৃত্বের পরিবর্তে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে সমস্যা সমাধান করার নেতৃত্ব গুণকে গুরুত্ব দেয় গুগল। বক উদাহরণ দিয়ে বলেন, দাবা ক্লাবের আপনি একজন প্রেসিডেন্ট ছিলেন কিংবা বিপণন বিভাগের প্রধান ছিলেন? আপনি কত দ্রুততার সঙ্গে সেই পদে উন্নীত হয়েছেন, গুগল সে বিষয়টি দেখে না; বরং প্রয়োজনের মুহূর্তে আপনার টিমকে আপনি কতটা সমর্থন দিয়েছেন এবং আপনার কাজ কতটা টেনে নিয়েছেন, সেটি দেখে। সমস্যায় পড়লে নেতৃত্ব গুণে সমাধান করার বিষয়টি বিবেচনা করে গুগল। সমস্যা জটিল হলে আপনার ভূমিকা কী হয়, সে বিষয়টিও পর্যবেক্ষণ করে গুগল।

গুগলে চাকরি পেতে গেলে আরও দুটি ভালো গুণ অর্জন করা জরুরি। এর একটি হচ্ছে নম্রতা আর অন্যটি কোনো জিনিসকে দ্রুত নিজের করে নেওয়ার ক্ষমতা। গুগলের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা লাজলোর মতে, গুগলে উগ্র স্বভাবের মানুষের চাকরি পাওয়া কঠিন। লাজলো বলেন, দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানের কাজকে নিজের কাজ ভাবতে হবে, নিজের প্রতিষ্ঠান ভাবতে হবে। কোনো কিছুতেই রেগে যাওয়া চলবে না। কোনো কাজ নিজে সমাধান করতে না পারলে ভদ্রভাবে অন্যকে তা ছেড়ে দিতে হবে। অন্যদের ভালো পরামর্শগুলো গ্রহণ করতে হবে। গুগল সব সময় কাজের শেষে কী অর্জন করা হলো, সে বিষয়টি দেখে। কীভাবে একত্রে বা দলগতভাবে সমস্যা সমাধান করা যাবে—এ বিষয়টিকেই গুগল গুরুত্ব দেয়।

বক বলেন, গুগলের কর্মীর দায়িত্ব হলো নিজের কাজটুকু ঠিকভাবে করা এবং অন্যের জন্য তার কাজের সুযোগ করে দেওয়া।

গুগলে ভদ্রতা বলতে অন্যকে কাজের সুযোগ করে দেওয়া নয়; বরং এটিকে বলা চলে বুদ্ধিবৃত্তিক নম্রতা। এই নম্রতা বা অন্যকে সম্মান দেখানোর মানসিকতা তৈরি না হলে কর্মীদের পক্ষে নতুন কিছু শেখা সম্ভব নয়। গবেষকদের প্রসঙ্গ টেনে লাজলো বলেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের আধিক্য দেখা যায়। অধিকাংশ সফল ও মেধাবীর ক্ষেত্রে ব্যর্থতার হার খুব কম থাকে, তাই তারা ব্যর্থতার থেকে কীভাবে শিক্ষা নিতে হয়, সেই বিষয়টিই শিখতে পারে না।

গুগলে চাকরি পাওয়ার জন্য যেসব পরীক্ষায় অধিকতর ভালো ফলাফল করা প্রার্থীরা আবেদন করেন, তাঁরা নিজেদের যোগ্যতা নিয়ে অহেতুক তর্ক করেন। তাঁরা নিজেদের যুক্তি থেকে একচুল নড়তে চান না। তাঁরা একধরনের গোঁড়ামি করেন। তাঁদের সামনে নতুন তথ্য উপস্থাপন করা হলে তখন তাঁরা হয়তো মেনে নেন। তাই গুগলে চাকরি পেতে হলে একজন মানুষের মধ্যে প্রয়োজনে ছোট হওয়া বা প্রয়োজনে বড় হওয়া দুটি গুণই থাকতে হবে।

লাজলো বক বলেন, গুগলে চাকরি পাওয়ার জন্য আরেকটি দক্ষতা থাকতে হবে আর তা হচ্ছে—কোনো কাজের ওপর ন্যূনতম অভিজ্ঞতা। ন্যূনতম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কাউকে কাজে নেওয়া হলে তাঁর শেখার আগ্রহ, যোগাযোগ দক্ষতা, নেতৃত্ব দেওয়ার আগ্রহ থাকে।

বকের কথার সংক্ষেপ করলে দেখা যাবে, মানুষের মেধা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে এবং এই মেধাকে প্রচলিত ধারার বাইরেও নানাভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে। তাই চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান ও নিয়োগকারী হিসেবে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে শুধু নামকরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে চেয়ে থাকলেই হবে না। কারণ, স্কুল থেকে ঝরে পড়া অনেক মানুষই তাঁদের পথ খুঁজে নিয়ে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। যদিও তাঁরা ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচিত হন। এই ব্যতিক্রমী মানুষদেরই আমাদের খুঁজে বের করা উচিত।

বক বলেন, অনেক নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে কিন্তু সেখান থেকে তাদের প্রতিশ্রুতি মতো স্নাতকদের বের করতে পারে না। তারা জীবনের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়। এটা মানুষের কৈশরকেই কেবল বিলম্বিত করে।

গুগল যে কাজটি করে তা হচ্ছে প্রচলিত জিপিএ বা প্রচলিত শিক্ষার বাইরের মেধাগুলোকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। যদিও অধিকাংশ তরুণ এখন স্কুল-কলেজের শিক্ষা নিতে যাচ্ছেন, তার পরও তাঁদের প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার গড়তে যে বিষয়গুলো কাজে লাগবে তা শেখাটাই মূল বিষয়।

বক বলেন, আপনি কতটুকু জানেন এবং আপনার জানার পরিধি কাজে লাগিয়ে কী করতে পারেন, বর্তমান বিশ্ব সে বিষয়টিকেই গুরুত্ব দেবে এবং আপনার সেই মেধার মূল্য শোধ করবে।

বর্তমান উদ্ভাবনী বিশ্বে নেতৃত্ব, নম্রতা, সহযোগিতা ও সহজে গ্রহণ করা, শিখতে ভালো এবং বারবার শিখতে চাওয়ার মতো দক্ষতাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আর এ বিষয়গুলো শুধু গুগলে চাকরি পেতেই নয়, যেখানেই কাজ করতে যান না কেন সেখানেই কাজে লাগবে।

Kalam Biswas
Kalam Biswas
566 Points

Popular Questions