Answered 2 years ago
করিমগঞ্জ যেভাবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হলো —
ব্রিটিশরা যখন সিদ্ধান্ত নিল যে, ধর্মের ভিত্তিতে ভারত এবং পাকিস্তান নামক দুটি দেশকে স্বাধীনতা দিয়ে তারা বিদায় নেবে, তখন এই দুই দেশের সীমানা নির্ধারণের দায়ভার দেওয়া হয় স্যার সিরিল র্যাডক্লিফের হাতে। স্যার র্যাডক্লিফ ছিলেন ভারতবর্ষে একেবারেই নতুন। উপমহাদেশে কোনো কাজের অভিজ্ঞতা তার ছিল না। তার নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন সিলেটের গণভোটের পর থেকেই সীমানা নির্ধারণের কাজে সম্পূর্ণ মনোযোগ দেয়।
অনেক সমীক্ষা ও যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৯৪৭ সালের ১২ই আগস্ট যখন 'র্যাডক্লিফ লাইন' প্রকাশিত হয়, তখন হতাশ ও বিক্ষুদ্ধ হয় মুসলিম লীগ, বিক্ষুদ্ধ হয় পূর্ব বাংলার নেতৃবৃন্দ। কেননা র্যাডক্লিফ লাইনে করিমগঞ্জসহ সিলেটের সাড়ে তিন থানাকে ভারতের সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গণভোটে নিরঙ্কুশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা সত্ত্বেও করিমগঞ্জ কেন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হলো তা আজও বিতর্কিত বিষয়। এটা ঘটেছিল র্যাডক্লিফের বদৌলতে অথবা কারসাজিতে। ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে ষড়যন্ত্রে এ কারসাজি করেন র্যাডক্লিফ- এমন ধারণাও প্রচলিত রয়েছে।
এরপর মুসলিম লীগের নেতারা অনেক দৌড়ঝাঁপ করেও কোনো ফায়দা হলো না। বিতর্কিত র্যাডক্লিফ লাইন অনুযায়ীই ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ই আগস্ট ভারত নামে দুটি দেশ স্বাধীনতা লাভ করল। সেই সময় করিমগঞ্জ মহকুমার এসডিপিও ছিলেন এম এ হক, যিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এম এ হক দেশভাগের পর এক সপ্তাহ পর্যন্ত করিমগঞ্জকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৪ আগস্ট থেকে নিয়ম মেনে প্রতিদিন তিনি করিমগঞ্জ মহকুমা পুলিশ কার্যালয়ে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করতেন এবং সিলেটে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ঘন ঘন তারবার্তা পাঠাতে থাকেন সামরিক সাহায্য পাঠানোর জন্য।
এম এ হক বলেন, প্রতিদিন আমি অপেক্ষায় থাকি, এই এলো বুঝি ফোর্স। না, আসে না। এভাবে একদিন/দুদিন করে সাত দিন কেটে গেল। এ দিকে ভারতীয় বাহিনী চলে এলো করিমগঞ্জ শহরে। আমি তখন নিরুপায়। আর কী-ই বা করতে পারি। মহকুমা পুলিশ কার্যালয় থেকে পাকিস্তানের পতাকাটা নামিয়ে গুটিয়ে নিলাম। তারপর চলে এলাম এপারে অর্থাৎ পাকিস্তানে। এভাবেই অবসান ঘটল এই অধ্যায়ের।
সেই থেকেই করিমগঞ্জ, রাতাবাড়ি, পাথরকান্দিসহ সিলেটের সাড়ে তিন থানা হয়ে গেল ভারতের। কিন্তু সেসময় সিলেটের ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ নবাব আলী কেন এম এ হকের তারবার্তায় সাড়া দিলেন না বা ফোর্স পাঠালেন না তা আজও অজানা। এম এ হকও এ ব্যাপারে কখনো কোনো মন্তব্য করেননি। (সূত্র- রোয়ার বাংলা)
niloyshek publisher