কোন মুসলিম বিজ্ঞানী চিকিৎসা শাস্ত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ?

1 Answers   13.3 K

Answered 2 years ago

ইবনে সিনার পুরো নাম আবদুল্লাহ আল হোসাইন বিন আবদুল্লাহ বিন আবু আলী আল হোসাইন ইবনে সিনা আল বালখি আল বুখারি (৯৮০-১০৩৭), প্রাচীন পারস্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত (বর্তমান উজবেকিস্তান) বুখারার নিকটবর্তী আফসানা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ইউরোপে তিনি ‘আভি সিনা’ নামে পরিচিত।
ছোটবেলা থেকেই ইবনে সিনার অসাধারণ মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হন।

পরবর্তী ছয় বছরের মধ্যে কোরআনের ব্যাখ্যা, ইসলাম ধর্মতত্ত্ব, ফিকহ দর্শন, যুক্তিবিদ্যা ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিষয়ে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। চিকিৎসাবিদ্যা চর্চা শুরু করেন ১৩ বছর বয়সে এবং ১৮ বছর বয়সে একজন প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসাবিদ ও চিকিৎসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এরূপ অসাধারণ মেধা ও প্রতিভার জন্য তিনি ইতিহাসে ‘বিস্ময়কর বালক’ (প্রডিজি বয়) বলে খ্যাত। একদিকে ‘পলিম্যাথ’ অন্যদিকে ‘প্রডিজি বয়’—একই ব্যক্তির পক্ষে এই দুই উপাধিপ্রাপ্তি ইতিহাসে বিরল।

একজন সফল তরুণ চিকিৎসক হিসেবে ইবনে সিনার সুখ্যাতি সবেমাত্র ছড়াতে শুরু করেছে। এমন সময়ে বুখারার তৎকালীন সুলতান নূহ ইবনে মানসুর এক অজ্ঞাত রোগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সম্রাট নূহকে কোনো চিকিৎসক সুস্থ করে তুলতে না পারায় অবশেষে তরুণ চিকিৎসক ইবনে সিনার ডাক পড়ল। ইবনে সিনার চিকিৎসায় সম্রাট সুস্থ হয়ে ওঠেন। সম্মানী হিসেবে ইবনে সিনা কিছুই গ্রহণ করলেন না, বরং তিনি সম্রাটের কাছে তাঁর রাজকীয় গ্রন্থাগার ব্যবহার করার অনুমতি চাইলেন। সম্রাট ইবনে সিনার রাজকীয় গ্রন্থাগার ব্যবহারের আবেদন মঞ্জুর করেন। এই গ্রন্থাগারের বিরল ও দুষ্প্রাপ্য বইপুস্তক অধ্যয়ন করে ইবনে সিনা তাঁর জ্ঞানের পরিধিকে ব্যাপকতর করতে পেরেছিলেন বলে জানা যায়। সম্রাট নূহ ইবনে মানসুরের মতো তিনি হামাদানের শাসক সামশাদ দৌলাকেও চিকিৎসা করে তাঁকে সুস্থ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ভীষণ জ্ঞানপিপাসু ও অনুসন্ধিত্সু ইবনে সিনা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এভাবে জ্ঞান চর্চা করে গেছেন।

ইবনে সিনা গবেষণা ও বই লেখা শুরু করেন ২০-২১ বছর বয়সে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৩৬ বছর সময়ের মধ্যে তিনি ৪৫০টি গবেষণামূলক পুস্তক রচনা করেন। ইবনে সিনার মাতৃভাষা ফারসি হলেও তিনি কবিতা ছাড়া প্রায় সব বই লিখেছেন আরবি ভাষায়। তাঁর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ চিকিৎসাবিজ্ঞানের বই ‘কানুন ফিল তিব্ব’ আরবি ভাষায় লিখিত। এ ছাড়া তাঁর আরো বহু বিখ্যাত প্রকাশনা আছে।

ইবনে সিনা মাত্র ৫৭ বছর বয়সে মারা যান। ইরানের হামাদান শহরে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। সময়ের ব্যাপ্ত পরিসরে ৫৭ বছর খুব একটা দীর্ঘ সময় না হলেও ইবনে সিনা জ্ঞানরাজ্যে, বিশেষ করে চিকিৎসাবিজ্ঞানে যে অবদান রেখে গেছেন তা চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইবনে সিনার জীবন ও কর্ম আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের পরিপূরক, সাংঘর্ষিক নয়। তাই ইবনে সিনা ও তাঁর কর্ম কালোত্তীর্ণ। অতএব পঠনীয়, অনুসন্ধানের যোগ্য।

Hafiz Khan
hafizkhan
308 Points

Popular Questions