কেন ভারতের বাঙালিরা বাংলাদেশে কাজ করতে আসে?

1 Answers   4.7 K

Answered 2 years ago

এর সত্যি উত্তরটা বাংলাদেশীদের পছন্দ হবে না। বরাবরের মতন আরেকটি গালিগালাজ এবং আক্রমণের থ্রেড হবে।

তারপরেও, দেখা যাক বাংলাদেশে কেন ভারতের বাঙালিরা কাজ করতে যান।

বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টরে অত্যন্ত হাইলি স্কীল্ড লোকজনের খুবই অভাব। এ কথা আমি বলছি না, বলছে প্রথম আলো'র বিভিন্ন লিঙ্ক।

১। বিমা কোম্পানিগুলোর দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে মাঠ পর্যায়ে

বিমা কোম্পানিগুলোর দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে মাঠ পর্যায়ে
মানুষের প্রয়োজনীয়তা থেকেই বিমার উৎপত্তি হয়। দেশে স্বাধীনতার আগে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ৪৯টি বিমা কোম্পানি ছিল। স্বাধীনতার পর সংখ্যাটি বাড়তে থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও বিমা পেশায় ছিলেন।

২। ‘পর্যটনশিল্পের প্রসারে দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন। এ খাত থেকে সুফল ঘরে তুলতে হলে বেশি করে দক্ষ পর্যটনকর্মী তৈরি করতে হবে। আমাদের দেশে পর্যটনশিল্পে এখনো প্রচুর বিদেশি কাজ করে, যেখানে আমাদের দেশীয় লোকবলের কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

পর্যটনশিল্পে দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন: প্রতিমন্ত্রী
২০১৮ সালের বাৎসরিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৭ সালে বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প প্রত্যক্ষভাবে ১১ লাখ ৭৮ হাজার ৫০০ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে যা ২০২৮ সালে গিয়ে দাঁড়াবে ১৬ লাখ ৪৮ হাজারে। এ সময় এ দেশে পর্যটন খাতে বিনিয়োগ ২০২৮ সালে ১৬১ দশমিক ৮ বিলিয়ন টাকায় পৌঁছাবে।

৩। ‘শোনেন, মশিউল সাহেব, আমার প্রতিষ্ঠানে কিছু লোক দরকার। এক লাখ, দেড় লাখ টাকা বেতন দেব, দুই মাস ধরে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছি, কিন্তু লোক পাচ্ছি না।’

‘বলেন কী? দেশে লাখ লাখ উচ্চশিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর আপনি এত টাকা বেতন দিতে চেয়েও লোক পাচ্ছেন না?’

‘না, সত্যিই পাচ্ছি না। ইন্টারভিউ দিতে আসে, অনার্স–মাস্টার্স পাস করা তরুণেরা ইন্টারভিউ দিতে আসে, কিন্তু কিচ্ছু জানে না। ঢাকা ভার্সিটি থেকে ইংলিশে মাস্টার্স করে আসছে, দুইটা সেনটেন্স শুদ্ধ করে ইংলিশ লিখতে পারে না। কথা বললে মনে হবে আইকিউ লেভেল এত কম! দুনিয়ার কোনো খোঁজখবরই রাখে না।’

চাকরি নেই, না দক্ষ লোকের অভাব?
র্থাৎ বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা ও দক্ষ শ্রমশক্তির বাজার এক অস্বাভাবিক উভয়সংকটের মধ্যে আছে। এই সংকট দূর করতে হলে উচ্চশিক্ষার গুণগত মান বাড়াতেই হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। সনদের জোরে চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না, যাবে না-এই কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও যদি শিক্ষার্থীদের টনক না নড়ে, তাহলে এই দুর্দশা কোনো দিন ঘুচবে না। লিখেছেন মশিউল আলম

৪। প্রথম আলো: বর্তমানে এ শিল্প কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়?

আর এন পাল: বর্তমানে দক্ষ লোকের অভাব এ শিল্পের বড় সমস্যা। দক্ষ লোকের সংকটে এ খাতে মানসম্পন্ন ফ্রিজ বানানোর কাজ বিঘ্নিত হয়। যেমন কপার ঠিকমতো লাগানো না হলে ভালোমতো কাজ করে না ফ্রিজ। আবার ফ্রিজের জন্য যে ধরনের লোক দরকার, সেই ধরনের দক্ষ লোক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দিতে পারছে না। তাই আমাদের কর্মীদের চাকরিকালীন প্রশিক্ষণ দিতে হচ্ছে। ফ্রিজশিল্পের জন্য প্রতিবছর ১০ হাজার দক্ষ লোক দরকার।

দক্ষ লোকের অভাব এ শিল্পের বড় সমস্যা
দেশে ফ্রিজের বাজারের বর্তমান অবস্থা, সম্ভাবনা ও সমস্যা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাহাঙ্গীর শাহ।

৫। দেশের উচ্চশিক্ষিত যুবদের মধ্যেও দক্ষতার অভাব রয়েছে

দেশের উচ্চশিক্ষিত যুবদের মধ্যেও দক্ষতার অভাব রয়েছে
দেশের উচ্চশিক্ষিত যুবদের মধ্যে দক্ষতার অভাব রয়েছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের (টিভিইটি) শিক্ষকদের মধ্যেও যোগ্যতার অভাব রয়েছে।

৬।ব্যাংকে দক্ষ আইটি কর্মকর্তার অভাব আছে

ব্যাংকে দক্ষ আইটি কর্মকর্তার অভাব আছে
সাইবার হামলার শিকার হলে ব্যাংকের নেটওয়ার্ক, আইটি ও হার্ডওয়্যার বিভাগগুলোর মধ্যে একটিকে আরেকটির দোষারোপ করার সংস্কৃতি আছে। তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধানকে বরখাস্ত করার নজিরও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক আরও বড় নিরাপত্তাঝুঁকিতে পড়ে যায়।

এই লিঙ্কগুলো পর্যালোচনা করলেই দেখতে পাবেন সবার মেইন বক্তব্য একই। বাংলাদেশে দক্ষ অর্থাৎ এক্সপার্ট লোকের সংখ্যা চাহিদার তুলনায় কম, খুবই কম।

এবারে আসি ভারতের বাঙালি এবং অন্যান্য দের কথায়।

১। গুগল, আমাজন এবং ফেসবুকের চাকরির পরীক্ষায় সফল এই বাঙালি যুবক বছরে মাইনে পাবেন ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ইনি সদ্য কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এ গ্রাজুয়েট, এবং টেকনোলোজিতে ভারতের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ আইআইটি কিংবা এনআইটি'র ছাত্রও নন। অতি সাধারণ ঘরের ছেলে। কিন্তু লক্ষ্যটা বিবেচনা করুন।

বিশাখ মণ্ডল বলেন, করোনা মহামারিকালে গত দুই বছর তিনি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করেন। সেই সুবাদে তিনি তাঁর পাঠ্যক্রমের বাইরের জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পান। এই বিষয়ই তাঁকে চাকরির সাক্ষাৎকারে ভালো করতে সাহায্য করেছে।

বিশাখ মণ্ডলের বাড়ি বীরভূম জেলায়। জেলার একটি সাধারণ পরিবারে তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা। বিশাখ মণ্ডলের মা শিবানী। তিনি গ্রামীণ শিশুযত্ন কেন্দ্রের (অঙ্গনওয়াড়ি) একজন কর্মী।

বাঙালি ছাত্র পেলেন ফেসবুকে চাকরি, বার্ষিক বেতন ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা
বিশাখ মণ্ডল গুগল ও আমাজন থেকেও চাকরির প্রস্তাব পেয়েছিলেন। বেশি বেতনের কারণে তিনি ফেসবুকের প্রস্তাবটিই বেছে নেন।

লক্ষ্যটা দেখেছেন? করোনাকালে বাড়ি বসে আপনি যখন সময় কাটানোর জন্য প্রেম করছেন, মুভি দেখছেন, কোরাতে ভারতকে গালিগালাজ করছেন কিংবা ফেসবুকে সময় নষ্ট করেছেন, এই যুবকটি তখন ইন্টার্নশিপ করছে। অর্থাৎ নিজেকে দক্ষ হিসেবে প্রতিপন্ন করছেন, পাঠ্যক্রমের বাইরের জ্ঞান অর্জন করছেন।

তুলনা করুন, এই যুবকের সাথে, এই প্যারাটা, ৩ নম্বর লিঙ্ক থেকে। অনার্স–মাস্টার্স পাস করা তরুণেরা ইন্টারভিউ দিতে আসে, কিন্তু কিচ্ছু জানে না। ঢাকা ভার্সিটি থেকে ইংলিশে মাস্টার্স করে আসছে, দুইটা সেনটেন্স শুদ্ধ করে ইংলিশ লিখতে পারে না। কথা বললে মনে হবে আইকিউ লেভেল এত কম! দুনিয়ার কোনো খোঁজখবরই রাখে না।’

তাহলে, বুঝতেই পারছেন, কেন বাংলাদেশে ভারতের বাঙালি এবং অন্যান্যরা চাকরি করতে আসে।

উল্টোদিকে, ভারতে শ্রমিকের কাজ, রিকশা চালাতে, সাইকেল দোকানে পাংচার সারাতে, দিনমজুরের কাজ করতে আসে কিংবা ঘরের কাজ করতে আসে বাংলাদেশীরা। মূল মন্ত্র হচ্ছে ওই দক্ষতার অভাব।

Aniket
Aniket
260 Points

Popular Questions