কেউ যদি প্রশ্ন করে, আমার দেখা সব থেকে হাসিখুশি মানুষটি কে? তবে নিসন্দেহে নিজের কথা বলব। আমার মনে হয় না আমার চেয়ে বেশি দাঁত ক্যালানো মানুষ কাছে-দূরে কেউ আছে বলে।
এটা না অনেকটা মজ্জাগত। মানে কে কতটুকু হাসিখুশি থাকবে এটা অনেকটা সহজাত। চেষ্টা-সাধনা করে কেউ বেশি বা কম হাসিখুশি থাকতে পারে না। মানুষ যেমন জন্মগতভাবে ফর্সা বা কালো হয়, তেমনি একজন মানুষ কতটুকু হাসিখুশি থাকবে সেটাও অনেকটা জন্মগত বৈশিষ্ট্য।
যাদের হাসিহাসি মুখ করে থাকার স্বভাব, তাদের জীবনে সীমাহীন জটিলতা থাকলেও দেখবেন, তাদের মুখে অকৃত্রিম হাসি। সবাইকে হাসানোর যার স্বভাব, সে চরম সংকটাপন্ন মূহুর্তেও কৌতুক করতে পারে। কঠিন সময়ের এই কৌতুককর্মের জন্য অন্যদের ঝাড়ি খেয়েও সে হাসে।
যার হাসার, সে হেসেই চলে, বুকের গহীনে যতই ঝরাপাতার মর্মর ধ্বনি বাজুক না কেন।
আপনি প্রশ্ন করেছেন, "কীভাবে সবসময় হাসিখুশি থাকা যায়?" আমি বলব, সবসময় হাসিখুশি থাকতে হবে কেন? হাসিখুশি মানুষ মানেই সুখী মানুষ বা বিশেষভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণি— এটা একটা চরম মাত্রায় ভুল ধারণা! বরং আমরা সবসময় হাসি কারণ আমরা না হেসে থাকতে পারি না।
দেখেন, আমাদের হাসিখুশি মানুষের হাসির একটা বড় উৎস হলো আশপাশের মানুষের হাসিমুখ। আমাদের হাসিমুখ দেখলে যে সামনের মানুষগুলোর মধ্যে একটা পজেটিভ এনার্জি কাজ করে, এটা সাবকনশাসলি হলেও আমরা ফিল করতে পারি।
হঠাৎ মনটা খারাপ হয়ে গেলে আমাদের ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন যে আশপাশের মানুষের মধ্যে বড়সড় একটা প্রভাব ফেলে সেটাও আবিষ্কার করি। তাই মন খারাপ হলেও সেটার ছাপ চেহারায় বা আচরণে কিছুতেই ফুটে উঠতে দিতে চাই না আমরা, মনের অজান্তেই।
তাছাড়া আমরা হেসে মরা মানুষগুলো মন খারাপ হওয়াটাকে নিজের দুর্বলতা বলে ধরে নিই, হাসিটাকে ভাবি শক্তি, আর অজান্তেই চলে আমাদের শক্তি প্রদর্শনের খেলা।
এই যেমন আমার কথাই ধরুন, বন্ধু-বান্ধব জানে আমি দিন রাত হাসিয়ে মারি। স্যার-ম্যাডামরা জানে আমি সারাক্ষণ হাসি হাসি মুখ করে ক্লাসে বসে থাকি, তাদের কথা খাতায় নোট করতে করতে কী ভেবে হঠাৎ আনমনে হাসি, একা একাই। পাঠক সমাজও জানে আমি একজন লম্ফবাজ মানুষ।
কেউ জানে না আমার আজকাল সব ভেঙে চুরে ফেলতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে চিৎকার করতে। একা ঘরে নিজেকেই নিজে তিরস্কার করতে থাকা আমাকে কে আবিষ্কার করবে? কিংবা আমার নির্ঘুম রাতের কাব্য কে পড়তে যাবে; কে অনুমান করবে এই অননুমেয় সত্যকে যেখানে দিনভর আমি সব্বাইকে হাসাতে ব্যস্ত?
হাসিখুশি হই আর হই রামগরুড়ের ছানার মতো গোমড়াকমুখো, দিনশেষে বাড়ি ফিরে আমরা সবাই একা। আমরা হাসি, কারণ আমরা না হেসে পারি না৷ তা বলে আপনাকে কেন হাসিখুশি থাকতে হবে যেখানে আপনি না হেসেও বাঁচতে পারেন!
নিজেকে অযথা বদলে ফেলার তাই কোনো মানেই হয় না। তার চেয়ে বরং নিজের গোমড়ামুখো ইতস্তত চলাফেরাকে নিয়েই সুখে থাকুন।
শুভেচ্ছা!
sohag360 publisher