কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং/সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ চারটি বছর পড়ার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করবেন কি?

1 Answers   3.1 K

Answered 3 years ago

সব মিলিয়ে বললে, খুব একটা সুখকর না । অবশ্য এর পিছনে চারপাশের পরিস্থিতিরও ভূমিকা আছে ।


বুয়েটে ক্লাস শুরুর আগেই সি প্রোগ্রামিং আর ডিসি সার্কিট নিয়ে নিজে কিছু পড়াশোনা করেছিলাম । শুরুর দিকে ভালই যাচ্ছিল, হঠাৎ করেই বুঝলাম যে এখানে যেই গতিতে পড়ায়, তার সাথে তাল রাখতে পারছি না কোনভাবেই । সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা দিল মেকানিকাল ড্রয়িং - প্রথম ৩টা ড্রইং এর নম্বর ৬,৯,৬ । পরে বাসায় প্রচুর প্র্যাকটিস করে এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছিলাম । ২য় সেমিস্টারে গিয়ে বুঝলাম যে এখানে সবাই আমার সমান বা আমার চেয়ে বেশি মেধাবী, অনেকেই লেখাপড়ার বাইরেও অনেক কিছু পারে যেটা আমি পারি না । এই inferiority complex এর সমস্যাটা বহুদিন ছিল, আর আগে কখনো এমন অবস্থার মধ্যে পড়িও নাই । পরে আস্তে আস্তে বুঝলাম যে অন্য কারোর সাথে নিজের তুলনা দিয়ে লাভ নাই, আর আমি চাইলেও সবার মত অত efficiently সময় বের করতে পারব না অন্য কিছু করার জন্য । গণিত কোর্সগুলোতে অনেক গাণিতিক সমস্যার step মুখস্ত রাখতে হয়েছে, যেটা কখনোই expected ছিল না । EEE ল্যাব আর কুইজে নিজের অনেক ক্লাসমেট এর performance দেখে অবাক হয়ে ভাবতাম- এরা এইসব জিনিস এত ভাল পারে কেমনে?


এতকিছুর মধ্যেও হাল ছাড়ি নাই । নিজের ডিপার্টমেন্টের মানুষজনকে দেখতাম একেকটা প্রোগ্রামিং কনটেস্ট কাঁপিয়ে দিচ্ছে, আর আমার দৌড় UVA, LightOJ আর Hackerrank এর কিছু প্রবলেম solve করা পর্যন্তই । কিছু কনটেস্ট করার চেষ্টাও করেছিলাম একবার, পরে বুঝলাম যে কনটেস্ট প্রোগ্রামিং আমাকে দিয়ে হবে না । কারণ একে তো এর পিছনে প্রচুর সময় দিতে হবে, আর তাতে গ্রেড sacrifice করতে হবে । ততদিন ধরে যারা contest programming এর পিছনে লেগে ছিল, তারা ইতোমধ্যেই অনেকখানি এগিয়ে গেছে । আমার মনে হচ্ছিল আমি যে কোন প্রবলেম নিয়ে ওদের মত অত দ্রুত চিন্তা করতে পারছি না । ফলাফল- অ্যালগরিদম কোর্সটা অনেক কষ্ট করে পার করেছি । ৫-৬ ঘণ্টা ধরে কোড করার পর সেটার চূড়ান্ত run দিয়ে দেখি কোন জায়গায় infinite loop এ পড়ে যাচ্ছে বা error দিচ্ছে ।


দ্বিতীয় বর্ষের শেষে এসে ক্যারিয়ার ক্লাবের সাথে যুক্ত হই । ততদিনে আমার অনেক ব্যাচমেট বিভিন্ন competition এ অংশ নিয়ে অনেক পুরস্কার নিয়ে এসেছে ।


তৃতীয় বর্ষে সমস্ত কোর্সই ডিপার্টমেন্টাল কোর্স । গ্রেড ভাল আসলেও নিজের সামর্থ্য নিয়ে নিজের কাছেই সন্দেহ হচ্ছিল- আমি কি আদৌ পারব? সবচেয়ে কষ্টকর সেমিস্টার ছিল তৃতীয় বর্ষের ২য় সেমিস্টারটা । একটার পর একটা ল্যাব চলে যাচ্ছে, নতুন নতুন assignment দিচ্ছে, আর আমি প্রায় কোনকিছুরই কোন কূলকিনারা করতে পারছি না । ক্লাসমেটদের কাছ থেকে confusion clear করে নিচ্ছি, আটকে গেলে বুঝে নিচ্ছি- তাও মাঝে মাঝে পুরাটা পারছি না । বুয়েট লাইফের চূড়ান্ত হতাশার সময় ছিল ওটা । তবে টিচাররা সাহস দিয়েছেন বলেই ঐ দুর্যোগের মধ্যেও হাল ছাড়ি নাই ।


প্রথম বর্ষ থেকে শুরু করে তৃতীয় বর্ষের শেষ পর্যন্ত মাঝেমাঝেই মনে হত- I am not fit for here… স্বেচ্ছায় সিএসই নেওয়াটা কোন ভুল সিদ্ধান্ত ছিল কি না- এমনও মনে হয়েছে বহুবার ।


চতুর্থ বর্ষে থিসিস এর জন্য অনেক খাটুনির পর আবিষ্কার করলাম- আমাদের একই topic নিয়ে ইতোমধ্যেই চীনের একটা গ্রুপ পেপার বের করে ফেলেছে আর আমরা সেটা অতদিনে খেয়ালই করি নাই । পরে সেটার উপর আরো অনেক কাজ করে জমা দেবার পর আমাদের paper accepted হয়, আমরা পাস করে বের হবার অনেকদিন পর ।


বিভিন্ন সময় অনেক জায়গায় অনেকভাবে আটকে গেছি, কিন্তু কোন assignment এ না বুঝে একটা লাইনও লিখেছি বলে মনে পড়ে না । হয় নিজের চেষ্টায় বুঝেছি অথবা কোন ক্লাসমেট এর কাছ থেকে বুঝে নিয়েছি অথবা টিচারদেরকে বা সিনিয়রদেরকে বিরক্ত করেছি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। হয়ত এজন্যই এত ধাক্কার পরেও highest possible CGPA নিয়ে বের হতে পেরেছি । যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করার দক্ষতা, পরিশ্রম করার ইচ্ছা আর ধৈর্য ধরে লেগে থাকার মানসিকতা থাকলে সিএসই তে পড়ে কেউ নিরাশ হয় না হয়ত ।


Mohon Ali
Mohon Ali
661 Points

Popular Questions