Answered 2 years ago
এটাই আমার নিজের জীবন সম্বন্ধে একমাত্র লেখা ও সবচেয়ে বড় লেখা। পড়তে ৬-৭ মিনিট সময় লাগবে।
লকডাউনের সময়টাকেই কাজে লাগিয়ে টিউশনিসহ ফ্রিলেন্সিন আরো কিছু করেছিলাম।
এভাবেই আমি বাসা থেকে কম বের হই আর লকডাউনে তো প্রশ্নেই আসে না। তাই টিউশনি করাতাম পাশের ফ্লাটের আংটির মেয়েটিকে। মেয়েটি আমার চেয়ে মাত্র আড়াই বছরের ছোটো। যেহেতু টিউশনি করলে আমারও পুরনো পড়ার চর্চা হবে তাই আমি ওনার কথায় রাজি হলাম। প্রথমে কিন্তু তিনি আমাকে কত টাকা দিবেন বা না দিবেন সে বিষয়ে কিছুই বলে নাইক। প্রতিবেশী আমাদের, দাওয়াতে-টাওয়াতে বেশ সুসম্পর্ক তাই আমার মাথায়ও টাকা টার চিন্তা আসে নাইক।
তো শুরু হলো টিউশনি। মাঝে মধ্যে আমি ওনার বাসায় গিয়ে পড়াতাম মাঝে মধ্যে আমার বাসায় পড়াতাম।
এবার ভালো আর বাজে অভিজ্ঞতার ঘটনাটা বলছিঃ
ভালোঃ
আমি তাকে রোজ পড়াতাম এক-আধা ঘণ্টা। মেয়েটিও খুব বুদ্ধিমান এবং কোনো ধরনের চিল্লা-পাল্লাও করা লাগে নাই। মেয়েটি খুবই ভদ্র ছিল। প্রথম সপ্তাহখানেক পড়ানোর পর আমার দাদা মারা যাওয়ায় আমাকে প্রায় দুই সপ্তাহ দেশে থাকতে হয়েছিল। এসে আবার রীতিমতো পড়ানো শুরু করলাম। ১ মাস গেল……. ওনি আমাকে ডেকে নিয়ে আমার হাতে চকচকা ২ হাজার টাকার নোট দিলেন। আমি বাকরুদ্ধ ছিলাম। দুই সপ্তাহ পড়ানোর জন্যই এতো টাকা তাও আবার এই অভাবের পরিস্থিতিতে। যাই হোক, টাকা যেহেতু হাতে পেয়েছি তাই কোনো রকম ইততস্ত না করে ধন্যবাদ জানিয়ে টাকাটা নিলাম। অনলাইন বাদে আমার জীবনের প্রথম অফলাইন ইনকাম ছিল এটা এবং তা অনেক উপকারেও এসেছিলো।
খারাপঃ
বেশ তিন মাস পড়ালাম। এখনো চলছে। প্রথমে তো মেয়েটি খুবই ভদ্র ছিল। পরেই না তার আসল রূপ বের হতে লাগলো। উচ্চতা ও বয়সের ব্যবধান তেমন না থাকায় আস্তে আস্তে সে আমার সাথে বন্ধুত্ব ভাব গড়তে শুরু করলো। আপনি যেমন কোনো দিনও টের পান নাইক আপনার মাথার চুল বড় হওয়ার ঘটনাটি তেমনি সে য আমার সাথে এতো বড় বন্ধুত্ব করে নিয়েছে তাও আমি টের পায় নি। বেশ তো একদিন,…….
ঘটনা ১ঃ
সে আমার বায়োলজি বই পড়তেছিল। তার তো এই বয়সে বাইলোজি এর 'ব' জানারও প্রয়োজন নেই তাও আবার প্রজনন নামের অধ্যায়টা পড়ছিল। সে আমাকে বিভ্রান্তিকর কোনো কিছু জিজ্ঞেসা করতে পারে এই জন্য তাকে কোনো কিছু না বলেই তার হাত থেকে জোর করে বায়োলজি বইটা নিয়ে ডেস্কে রেখে দিলাম। সে আমাকে মিডল আঙুল দেখিয়েছিল।
ঘটনা ২ঃ
অভিকর্ষজ ত্বরণের বেসিক কনসেপ্ট টা বুঝাতে আমি উদাহরণস্বরূপ লেপ্টপে একটা ভিডিও বের করে দিয়ে তাকে দেখতে বললাম । সে বলছিল সে নাকি পানি খাবে। পানি নিয়ে এসে দেখলাম যে বদমাশটা ভিডিওটাতো দেখল নাই বরং আমার গ্যালারি তে ঢুকে ছবি ইডিট করছে। কার? আমার? নাহ, নিজের! কি দুরন্ত! এতো স্বল্প সময়ে একটা সেলফি তুলে তা ইডিটও করছে। তার হাত থেকে আমার মোবাইলটা নিয়ে বললাম যে কাজটা ঠিক না। সে বললো "সরি"।
ঘটনা ৩ঃ
মেয়ে বন্ধুর আচরণ কেমন হয় বা হওয়া উচিত তা আমার চেয়ে আরো অনেকের হয় ভালো অভিজ্ঞতা আছে। তবে তাদের কী নূন্যতম লজ্জা-সম্মানটা থাকা দরকার নাই? একটা ছোট বিষয়ে বেশ তর্ক হচ্ছিল দুজনের মধ্যে। এটা কোনো নতুন বিষয় নয় আমাদের জন্য। তর্কের এক পর্যায়ে সে আমাকে হাসির ছলেই আমার গায়ের ওপর পা দিয়ে বলেছে আমার বাপের টেকা খাও, অথচ বাপের মেয়েকে একদিনও ট্রিট দেও নাইক। হার কিপটা কোনাকার! বিষয়টিতে খুব অপমানিত হলাম। আমার তখন ইউটিউব চ্যানেলও মনিটাইজ হয়েছিল। ফ্রিল্যান্সিং এও বেশ ভালো পজিশনে ছিলাম। তার আর এই দুই টাকা আমার লাগবে না। আংটিকে এই কথা আর না বলে পড়ালেখার চাপের বাহানায় তাকে পড়ানো বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
বাস্, এটাই ছিল টিউশনির সবচেয়ে মন্দ অভিজ্ঞতাগুলো।
তার পরে ওই মেয়েটা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছে কেন আমি তাকে পড়ানো বন্ধ করে দিলাম, তাই এই মেয়েটা আমার নামে কি বিশ্রী অপবাদ দিল তার মার কাছে আর তার মা আমাকে ডেকে আরো কথা শুনালো। কোনো কথাই বলতে দিল না। এটা অবশ্য আমার কোনো মন্দ অভিজ্ঞতা নয়, এটা আমার কর্মের ফল শুধু। প্রথমেই যদি তাকে পশ্রয় না দিতাম তাহলে এই কষ্টটা ওইদিন আর পেতে হতো না।
tanvirahmed publisher