Answered 2 years ago
শিক্ষা শব্দের অর্থ চর্চা ও উপদেশের মাধ্যমে জ্ঞানের বৃদ্ধি। যে কারণে শিক্ষক ও অশিক্ষক নির্বিশেষে এই চর্চার সাথে জড়িত সকলকেই শিক্ষাকর্মী বলা হয়।
এই নিরিখে "শিক্ষিত" শব্দের একলা কোনো অর্থ হয় না। একজন মানুষ গণিত বিষয়ে শিক্ষিত এবং আইন বিষয়ে অশিক্ষিত হতে পারেন। যে কোনো তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ কোনো না কোনো বিষয়ে অশিক্ষিত। কাজেই, শিক্ষিত বলার সাথে সাথে কোন বিষয় শিক্ষিত তার উল্লেখ করা প্রয়োজন। তবে হয়ত যে কোনো একটা বিষয়ে শিক্ষিত হলেই সেই মানুষকে আমরা শিক্ষিত বলে থাকি।
ঠিক কতটা চর্চা করলে শিক্ষিত বলা যায়? মোটামুটি একটা কলেজ কোর্স বা তার ইকোয়েভ্যালেন্ট পড়া থাকলেই চলে। পাশফেল বা ডিগ্রী ধরছি না, কারণ স্বশিক্ষিত বলেও একটা ব্যাপার রয়েছে। কেউ যদি কোনো বিষয়ে কলেজ কোর্স বা তদনুরূপ পড়ে আত্মীকৃত করে থাকেন, অথচ পরীক্ষা না দেন, তাঁকে সে বিষয়ে শিক্ষিত বলতে আমার আপত্তি নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ডিগ্রীধারী নন, কিন্তু কোনো নিরিখেই কি অশিক্ষিত?
এখানে একটা কথা পরিষ্কার করে নেওয়া ভাল, শক্তি, উচ্চতা, গায়ের রঙ এসবের মতই শিক্ষা একটি বিশেষ এ্যাট্রিবিউট বা গুণ। একজন ঢ্যাঙা মানুষ যদি চুরি-ডাকাতি করে বেড়ায়, তাহলে সে বেঁটে হয়ে যায় না। ফর্সা মানুষ খুন করেছে বলে তাকে কালো বলা ভুল। সেরকমই পদার্থবিদ্যার পি-এইচ-ডি ঘুষ চাইলেই তাকে অশিক্ষিত বলা যায় না। একজন (কোনো বিষয়ে)শিক্ষিত মানুষ অসৎ, দুর্মুখ বা লোভী হতে পারে। সততা, ভদ্রতা বা নিঃস্বার্থতা এবং শিক্ষা এক বস্তু নয়।
আর "অমর্ত্য সেন যদি দরিদ্র ভারতবাসীর উপকার না করে থাকেন তাঁর শিক্ষার মূল্য কি" এ জাতীয় বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে - শিক্ষার মূল্য আছে কি নেই সেটা স্বতন্ত্র প্রশ্ন, এবং এ পরিসরে অপ্রাসঙ্গিক। মূল্য থাক কি না থাক, শিক্ষা বিলক্ষণ রয়েছে, এবং তিনি যে উচ্চশিক্ষিত এ ব্যাপারে দ্বিমত না রাখাই মঙ্গল।
তাহলে শিক্ষা শব্দের অর্থ নিয়ে এমন দিশাহারা অবস্থা কেন?
এককালে আমাদের দেশে - শুধু আমাদের দেশ কেন, সারা দুনিয়াতেই - শিক্ষা একটা বিরল ব্যাপার ছিল। কাজেই প্রচুর মানুষ ছিলেন, যাঁরা চর্চা ও উপদেশের মাধ্যমে জ্ঞানের বৃদ্ধি ঘটান নি। তাঁরা চাষী, সৈন্য, কামার বা মিস্ত্রী ইত্যাদি হয়ে পারিবারিক কাজে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। এমতাবস্থায় শিক্ষিত শব্দটা সাক্ষরের সমার্থক ছিল। অর্থাৎ লিখতে পড়তে জানলেই শিক্ষিত। শিক্ষার এই অর্থ কিন্তু আরোপিত অর্থ। আগেই লিখেছি, বিষয় ছাড়া শিক্ষিত শব্দের নিজস্ব অর্থ নেই।
ইংরেজ আমলে ইংরেজী পড়তে-লিখতে-বলতে পারলে তবেই শিক্ষিত, নইলে নয় এরকম একটা বিচার খানিকটা চলত(আমার জানা নেই, হয়ত সুলতানী আমলেও ফারসী পড়তে পারলে শিক্ষিত, নইলে নয় - এমন ছিল)। সদ্যস্বাধীন দেশেও যে ইংরেজী = শিক্ষা এরকম একটা ধারণা বেশ প্রচলিত ছিল, তা ষাট-সত্তরের বলিউডি সিনেমা দেখলে হামেশাই টের পাওয়া যায়। (আখরী রাস্তা ছবিতে দুই অমিতাভ বচ্চনের অকারণ ইংরিজি কথোপকথন স্মর্তব্য।)
আজকাল শিক্ষা সর্বব্যপী না হলেও বেশ ব্যপ্ত হয়েছে। তাই (কোনো বিশেষ ভাষাতে) সাক্ষর মানেই শিক্ষিত এই অর্থ ছেড়ে আমরা খানিকটা এগিয়েছি। ফলতঃ আর দিশা পাচ্ছি না।
abuhuraira publisher