এমন কোনো প্ল্যাটফর্ম নাই যেটার আবিষ্কারক মুসলিম, এবং মুসলিম দ্বারা পরিচালিত হয়?

1 Answers   11.6 K

Answered 2 years ago

আপনার প্রশ্নের "প্ল্যাটফর্ম" ও "আবিস্কার", এই দুটি কথার জন্যই উত্তর লিখতে আগ্রহী হলাম। মজার ব্যাপার, আমি প্রথমে ওই "প্ল্যাটফর্ম" কথাটি বুঝতে পারিনি। পরে, একজন ইসলাম বিরোধীর লেখা থেকে বিষয়টি বুঝতে পারলাম। "প্ল্যাটফর্ম" বলতে ফেসবুক, ইউটিউব, কোরা, এমন কোন ওয়েব সাইটের কথা বলেছে। এক কথায়, এমন কোন ওয়েবসাইট যেটা কোটি মানুষ ব্যাবহার করে। আর এই "প্ল্যাটফর্ম" কথাটি বোঝার পরে, ওই "আবিস্কার", কথাটিও বুঝতে পেরেছি।

প্রথম কথা হলো - ফেসবুক বা ইউটিউব ইত্যাদি কোন আবিস্কার নয়। এগুলো ব্যাবসা ছাড়া আর কিছুই নয়। ইন্টারনেট হলো বিশ্বব্যাপী একটি বাজার। সেই বাজারে ফেসবুক আর ইউটিউব হলো ভিন্ন দুটি দোকান। সেই দোকানকেই আপনি "প্ল্যাটফর্ম" বলছেন। এগুলো কোন আবিস্কার নয়। এগুলো হলো পন্য, এগুলো হলো দোকান।

এবার আপনার প্ল্যাটফর্ম জিনিসটা দেখি। ছবি আর ভিডিও থাকলেই প্ল্যাটফর্ম হয় না। প্ল্যাটফর্ম হলো সেটি, যেখানে লক্ষ মানুষ জড়ো হয়। সংবাদপত্রের ওয়েব সাইটে কোটি মানুষ জড়ো হয়, অনলাইনে লক্ষ মানুষ বেচাকেনা করে, লক্ষ মানুষ ওয়েবসাইটে চাকরী খোঁজে, এগুলো সবই প্ল্যাটফর্ম।

সারাদিন ফেসবুক আর ইউটিউব না দেখে, দেশের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম দেখুনঃ

    বাংলাদেশে ২০-২৫টি মূল ধারার সংবাদপত্র আছে। সবগুলো সংবাদপত্রেরই ওয়েব-সাইট আছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই অনলাইন নিউজ দেখে। এসব প্ল্যাটফর্ম মুসলিমরা বানিয়েছে, মুসলিমরা পরিচালনা করে।
    বাংলাদেশে অনলাইনে কেনাবেচা করার জন্য, বেশ কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আছে। সেগুলো মুসলিমরা বানিয়েছে, মুসলিমরা পরিচালনা করে।
    অনলাইনে চাকরী খোঁজার জন্য, বাংলাদেশে কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আছে। সেগুলো মুসলিমরা বানিয়েছে, মুসলিমরা পরিচালনা করে।
    উবার ট্যাক্সির মতন, পরিবহনের জন্য মোটর-বাইক অর্ডার করতে বাংলাদেশে আছে "পাঠাও" সার্ভিস। এই প্ল্যাটফর্ম মুসলিমরা বানিয়েছে, মুসলিমরা পরিচালনা করে।
    বাংলাদেশে আছে, মোবাইল ব্যাঙ্কিং/ই-ওয়ালেট বিকাশ, নগদ ইত্যাদি সার্ভিস। এই প্ল্যাটফর্ম মুসলিমরা বানিয়েছে, মুসলিমরা পরিচালনা করে।

প্রশ্নকারী, বাংলাদেশের একটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি উপরে বর্নিত সবকিছুই খুব ভালোভাবে চেনেন। তবুও, তিনি মুসলমানের বানানো কোন প্ল্যাটফর্ম খুঁজে পান না !!

এখানে পাল্টা প্রশ্ন থাকতে পারে - বাংলাদেশের লক্ষ মানুষের প্ল্যাটফর্ম এর চেয়ে অনেক বড়, কোটি মানুষের প্ল্যাটফর্ম হলো ফেসবুক ও ইউটিউব। মুসলমানদের বানানো, এমন কোন বিশ্বব্যাপী প্রচলিত প্ল্যাটফর্ম নেই কেন?

এর উত্তরে, প্রথমেই কিছু ব্যাতিক্রম কথা বলতে হবে। যে তিনজন তরুন ইউটিউব বানিয়েছিলো, তাদের একজন হলেন জাবেদ করিম। তিনি বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত মুসলমান। বিশ্ববিখ্যাত অনলাইন স্কুল "খান একাডেমী" এর প্রতিষ্ঠাতা সালমান খান। তিনি বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত মুসলমান। দুই-একটা দিয়ে কোন উদাহরন হয় না। বিশ্ববিখ্যাত সকল প্ল্যাটফর্ম ইহুদীরা বানায়, ইহুদীরা চালায়। মুসলমানেরা তেমন পারে না কেন?

ইহুদীরা কেন পারে, মুসলমানরা পারে না কেন? বারবার সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। আজকেও বলবো। এর পেছনে একটাই কারন - একতা ও সদিচ্ছা।

তিনজন হুজুরকে একটি হোটেল রুমে রাখুন, রাতভর বিতর্ক করবে - চিত হয়ে শোয়া জায়েজ, নাকি কাত হয়ে শোয়া জায়েজ। তিনজন তরুনকে হোটেলে রাখুন, তারা অমুক গেমস আর তমুক বাইক নিয়ে আলোচনা করবে। তিনজন নারীকে হোটেলে রাখুন, তারা পরচর্চা করবে। তিনজন চাকরীজিবিকে হোটেলে রাখুন, তারা দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে কথা বলবে। তিনজন ব্যাবসায়ীকে হোটেল রুমে রাখুন, তারা ব্যাবসায়ের সুবিধা-আসুবিধার ব্যাপারে কথা বলবে।

তিনজন ইহুদীকে একটি হোটেল রুমে রেখে দেখুন। তাদের আলোচনার বিষয় হবে - নিজ এলাকায় কিভাবে এমন একটি হোটেল বানিয়ে ব্যাবসা করা যায়।

এটাই হলো ইহুদীর একতা ও সদিচ্ছা। তারা একসাথে কাজ করে, সবসময়ই এগিয়ে থাকতে চায়। দুনিয়াতে মুসলিম আছে ১৮০ কোটি, খ্রিস্টান আছে ২২০ কোটি। তবুও, মাত্র এক কোটি ইহুদী সবকিছু দখল করে বসে আছে। এর মূল কারন - একতা ও সদিচ্ছা। কোন কাজ করার যোগ্যতা বা সামর্থ্য, ইত্যাদি তো অনেক পরের কথা। প্রথম যেটা লাগে, সেটা হলো - ইচ্ছা। যতই যোগ্য হোক না কেন, ইচ্ছা না থাকলে, কোনকিছুই করা যায় না।

ইসলাম বিরোধীরা বিভিন্ন ওয়েবসাইট বানিয়ে, ইসলামের বিরোধীতা করে। তারা নিয়মিত ইসলাম বিরোধী ভিডিও বানায়। ইসলামের পক্ষে, সেই একই কাজ আমি শুরু করেছি। ইসলাম সমর্থনে ওয়েবসাইট আছে, সোশ্যাল মিডিয়াতে পেজ আছে। বলতে গেলে, ওটা হলো ইসলামের স্বপক্ষে, আমাদের একটি প্ল্যাটফর্ম। দুঃখের ব্যাপার, ডাকাডাকি করেও, ওখানে মুসলমানদের আনা যাচ্ছে না। সমস্যা একটাই - একতা ও সদিচ্ছা।

Tasnim Ahmed
tasnimahmed
549 Points

Popular Questions