Answered 2 years ago
নীচে যার ছবি দেখছেন আগামীকাল ওঁর বিয়ে৷ প্রতিদিনের মতোই আজও সকালে সব্জী নিয়ে বাজারে বসেছে আকাশ। আকাশ আমার বন্ধু, আকাশ আমার ভাই৷ জঙ্গলমহল, ঝাড়গ্রামের মফঃস্বল শিলদা বাজারে ওঁর দোকান৷ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃতে এমএ পাশ করেছে আকাশ। এমএ-তে ফার্স্টক্লাস রয়েছে আকাশের। এমএ-র পর বিএডও সম্পূর্ণ করেছে ও৷ ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপার প্রাইমারি টেট পরীক্ষায় পাশ করেছিল আকাশ৷ তারপর মাঝে ৭ বছর কেটে গিয়েছে৷ এর মাঝে বার কয়েক কলকাতা এসে এ উকিল সে উকিলের দরজায় দৌড়াদৌড়িও করে গিয়েছে আকাশ৷ জঙ্গলমহলের অধিকাংশ ছেলেমেয়েদের কাছে কলকাতা এখনও অচেনা পৃথিবী। শিলদা, বেলপাহাড়ি, লালগড় সংলগ্ন প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলেমেয়েরা বাড়িতে 'কলকাতা যাবো' বললে, এখনও উদ্বিগ্ন হয়ে বাড়ির মা-রা বলেন
- হ্যাঁ রে কলকাতা যাবি, একা পারবি তো?
আকাশের পক্ষেও একা কলকাতা আসা সত্যি চাপের। প্রতিদিন খুব ভোরে উঠে পাইকারি বাজার থেকে সব্জি কিনে নিয়ে আসা। তারপর ৬ টা থেকে ৮ পর্যন্ত একটা কোচিংয়ে পড়ানো৷ তারপর আবার দোকানে এসে ১১ টা ১২ কখনও আরও দুপুর পর্যন্ত সব্জি বিক্রি৷ বিকেলে আবার টিউশানি পড়ানো৷ কলকাতা থেকে গ্রামে ফিরলে আমার বেশিরভাগ সময় শিলদাতেই কাটে৷ অনেকটা সময়ই আকাশের সঙ্গেও৷ যখনই ওর দোকানে গিয়েছি আড্ডা দিতে কিংবা ও চায়ের আড্ডায় এসেছে, ওর মুখে এই হাসিটা সবসময় অমলিন থেকেছে৷
গত ৩০ ঘন্টার বেশি সময় ধরে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে ২১ কোটি টাকা উদ্ধার নিয়ে রাজ্য রাজনীতি সরগরম৷ শুক্রবার সন্ধ্যেবেলায় যখন এই খবরটা প্রথম ব্রেক হল তখন আমি আমার নিউজ হাউসে। এই খবরটা দেখে প্রথম যার কথা মনে পড়েছিল সেই ছেলেটির নাম আকাশ বিদ। আকাশ বিদ, সংস্কৃতে এমএ ফার্স্টক্লাস, আপার প্রাইমারি টেট কোয়ালিফায়েড৷ আজ গ্রামবাংলার কিংবা কলকাতারই কোনও স্কুলে শিক্ষকতা করার কথা ছিল আকাশের। ওটাই ও করতে চেয়েছিল৷ শুক্রবার সারা গ্রামবাংলার এরকম অগনিত শিক্ষিত শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখা আকাশরা দেখল তাদের স্বপ্নগুলো বিক্রি করে টাকা জমা করা হয়েছে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটের বদ্ধ ঘরে৷
২১ কোটি টাকায় কত কেজি পটল, ঝিঙে, টমেটো, আলু হয়? ঠিক ক'তজনের স্বপ্ন ঠোঙা হয়ে বিক্রি হয়ে যায় রক্ষিতাদের ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে, তা আমার জানা নেই, আমাদের জানা নেই।
এরকম কত আকাশের গল্প অজানা থেকে যায়।
আচ্ছা আকাশের মা-বাবা কিংবা ও নিজে অসুস্থ হলে এসএসকেএম-এ এসি কেবিন পাবে? কার্ডিও, মেডিসিন, অর্থোর তিনজন ডাক্তার? কিংবা একটা গোটা মেডিক্যাল বোর্ড?
বাংলার যুব সমাজের স্বপ্ন-পাচার করছে যারা তাদের জন্য অভিশাপ বরাদ্দ থাকবে না?
শে খ র ভা র তী য়।।
masrafimortoza publisher