Answered 2 years ago
একজন ব্যবহারকারীর ডেস্কটপ কেনা উচিত নাকি ল্যাপটপ ?
কম্পিউটার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটা অংশ বলা যায়, আর আপনি যদি চাকুরি করেন কিংবা পড়াশোনা করেন আপনার একটি কম্পিউটার এর প্রয়োজন হবে। তো একটা কম্পিউটার কেনার আগে আমরা অনেক দ্বিধায় ভুগি ল্যাপটপ নিব নাকি ডেস্কটপ।
যন্ত্র দুইটার কাজ একি হলেও এর মধ্যে পারফমেন্স আর ব্যবহারের ক্ষেত্রে
অনেক পার্থ্যক্য তৈরী করে দেয়, কেনার আগে আমরা অনেক ভাবি কোনটা কেনা উচিত !!
আজকে আমি এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো, সম্পুর্ন বিষয়টি পড়লে হয়ত আপনার বুঝতে সুবিধা হবে, আপনি ডেস্কটপ কিনবেন নাকি ল্যাপটপ।
এক্ষেত্রে আসলে সুবিধা অসুবিধা দুইটাই রয়েছে, আমরা যেমন ডেস্কটপের অনেক সুবিধা/অসুবিধা বের করতে পারবো, ঠিক তেমন ভাবে ল্যাপটপের ক্ষেত্রেও সুবিধা অসুবিধা আছে।
ডেস্কটপ কারা কিনবেনঃ
আপনি যদি লম্বা সময় ধরে কাজ করেন, একজন গেমার হোন বা গেম খেলতে পছন্দ করেন কিংবা ভারী কাজ করেন, আর আপনার বাজেট যদি কম থাকে সেক্ষেত্রে আপনি ডেস্কটপ পছন্দ করতে পারেন। আজকের বাজারে ২৫ হাজার থেকে শুরু করে ৩ লাখের মধ্যে ডেস্কটপ কিনতে পাওয়া যায়। সেখানে আপনি আপনার বাজেট অনুযায়ী ডেস্কটপ কম্পোনেট বাছাই করে একটা ডেস্কটপ তৈরী করতে পারেন। ডেস্কটপে আসলে অনেক বেশি পছন্দ অনুযায়ী নেয়া যায় । আপনি নিজের ইচ্ছা মত,পছন্দ মত কম্পোনেট বাছাই করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে প্রতিটি কম্পোনেন্ট আলাদা করে কিনতে পারবেন।
ধরুন আপনি প্রসেসর এর ক্ষেত্রে ইন্টেল এবং এমডির বাছাই এর সুযোগ পাবেন,
মাদারবোড কিনার আগে গিগাবাইট, আসুস, কিংবা এম.এস.আই , এসরগ ইত্যাদি ইচ্ছা মত নিতে পারবেন, র্যাম কিনার সময় অনেক ব্রান্ডের র্যাম আছে।
সেখানে আপনি বাস স্পিড, র্যাম ফিকোয়েন্সি, এবং ব্রান্ড পছন্দ করার সুযোগ পাচ্ছেন। বলা যায়, প্রতিটি কম্পোনেন্ট আপনি আপনার মন মত করে নিতে পারবেন।
আর সেগুলাও আপনার দাম এর নাগালে , কারন আপনি একটা কম্পোনেট হয়ত দামী কিনতে পারবেন অন্যদিকে আরেকটা অন্য ব্রান্ডের কমদামী কিনে খুব সহজেই সেটা মানিয়ে নিতে পারবেন।
এখন যদি আমরা ডেস্কটপের সুবিধা গুলো দেখিঃ
প্রথমেই যদি আমরা ডেস্কটপের সুবিধার কথা বলি সেখানে আসবে গেমিং,
আপনি যত টাকা দিয়েই ডেস্কটপ কিনেন না কেন আপনি অনায়াসে ডেস্কটপে গেমিং করতে পারবেন। আর সবচেয়ে পাওয়ার ফুল গ্রাফিক্স কার্ড কিন্তু ডেস্কটপের জন্যই আসে। এদিকে নিস্বন্দেহে ডেস্কটপ জিতে যায়।
এরপর যদি আমরা কম্পোনেন্ট এর কথা চিন্তা করি আপনি চাইলেই ডেস্কটপ কেনার সময় অনেক কিছু না ব্যাবহার করতে পারবেন, মনে করুন আপনি বাজেট স্বল্পতার কারনে গ্রাফিক্স কার্ড কিনতে পারেন নাই, যা আপনি পরে যখন তখন কিনে কম্পিউটারে লাগাতে পারবেন।
আপগ্রেডের সুবিধা বেশি, আপনি অনেক কম সময়ে কোনো একটা কোম্পোনেন্ট চেঞ্জ করতে পারবেন কিংবা কোনো একটা পার্টস নস্ট হয়ে গেল,
আপনি যদি একটু অভিজ্ঞ হোন তবে আপনি তা নিজেই খুলে বদলে নিতে পারবেন।
অনেকদিন ব্যাবহার করতে পারবেন, যদি যত্ন করে রাখেন ১৫ বছরের বেশিও একটা ডেক্সটপ সুন্দর মত চালানো যায়।
এখন যদি আমরা ডেস্কটপের অসুবিধা গুলো দেখিঃ
ডেস্কটপের প্রথম সমস্যা আপনি এটি চাইলেই এখানে সেখানে নিয়ে যেতে পারবেন না। বাসাতেই ব্যাবহার করতে হবে,
ডেস্কটপে ইলেক্টিসিটি বিল ল্যাপটপ এর তুলনায় বেশি আসে। কারন একটা ডেস্কটপ তার ক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ শক্তি ব্যবহার করে, যার ফলে ইলেক্টেসিটি বেশি ব্যবহৃত হয়।
অন্যদিকে যারা পার্টস সম্পর্কে না বুঝেন তাদের ডেস্কটপ না নেয়াই ভালো। কারন এখানে কানেকশন দেয়া, সিপিউ ক্লিন করার ঝামেলা রয়েছে।
আর বড় সমস্যা হলো, আপনি চাইলেই ডেস্কটপ কে এখানে সেখানে সরাতে পারবেন না কিংবা বাইরে নিতে পারবেন না। আর এখানে বাসার একটা বড় স্পেস হয়ত ডেস্কটপ দখলে নিয়ে নিবে
ল্যাপটপ কারা কিনবেনঃ
আপনি যদি স্টুডেন্ট হোন, ব্যাংকে চাকুরি করেন, কিংবা অনেক ভ্রমন করেন এখানে আপনি অবশ্যই ল্যাপটপ পছন্দ করবেন। আপনি এখানেও ৩০ থেকে শুরু করে ৩-৪ লাখ এর মধ্যে যেকোনো ল্যাপটপ পেয়ে যাবেন। ল্যাপটপ কিনার এখানে মুল কারন হবে প্রটেবিলিটি, যার কারনেই কোম্পানি এটার চিন্তা করে বাজারে ল্যাপটপ এনেছে। শুধুমাত্র এই কারনেই হয়ত ল্যাপটপের কাছে ডেস্কটপ হেরে যাবে। তবে আপনার ল্যাপটপ কিনতে গেলে অনেক সুবিধার সাথে সাথে অনেকগুলা সমস্যার সম্মুক্ষীন হতে হবে। তার মধ্যে প্রথমত কনফিগারেশন। ডেস্কটপে আপনি যেমন নিজের ইচ্ছা মত যেকোনো ব্রান্ড পছন্দ করে কম্পোনেন্ট কিনতে পারতেন এখানে আপনার এই সুযোগ থাকবেনা, আপনি যে ব্রান্ডের ল্যাপটপ কিনেন না কেন। তাদের নির্দিষ্ট মডেল থেকেই আপনাকে পছন্দ করে নিতে হবে। আপনার বাজেট যদি এখানে কম হয় সেখানে কম বাজেটের মধ্যেই যারা যা দিবে আপনাকে তা নিতে হবে। প্রসেসর বা র্যাম আপনি পছন্দ মত নিতে পারবেন না।
তবে আপনি যদি ঝামেলা না চান সেখানে ল্যাপটপ নিতে পারেন, তবে ল্যাপটপে অনেক সুবিধা রয়েছে যা আপনি ডেস্কটপে পাবেন । তবে আপনি যদি ঝামেলা পছন্দ না করেন এখানে আপনি আপনার বাজেট মত যেকোনো ল্যাপটপ নিতে পারবেন।
এখন যদি আমরা ল্যাপটপের সুবিধা গুলো দেখিঃ
আপনি যদি ব্যবহার এর সুবিধার কথা চিন্তা করেন এখানে ল্যাপটপ বিজয়ী।কারন আপনি চাইলেই আপনার ল্যাপটপ যেখানে খুশি সেখানে নিয়ে যেতে পারবেন।
ল্যাপটপ অনেক কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। কেবল কানেকশন এর ঝামেলা নাই
কারণ ডেস্কটপে অনেক কেবল কানেকশন লাগে যা আপনি না বুঝতে পারলে একটা ঝামেলার কারন হয়ে দাঁড়াবে। আপনাকে জানতেও হবে অনেক কিছু।
আপনি যদি বেশি টাকা দিয়ে দামী ল্যাপটপ কিনেন সেক্ষেত্রে আপনি ডেস্কটপের মত পারফমেন্স পাবেন।
জরুরী কাজে ল্যাপটপ আপনাকে হয়ত কয়েক ঘন্টার ব্যাকাপ দিবে কারন ল্যাপটপে ব্যাটারি সহই আসে। কাজের ফাকে যদি ইলেক্ট্রেসিটি চলেও যায় আপনার কাজ বন্ধ হবেনা যা আপনি ডেস্কটপ থেকে পেতে হলে ইউপিএস ব্যাবহার করতে হবে।
ল্যাপটপে জায়গা কম লাগে, আপনি হয় বাসার যে-কোনো যায়গাতে ড্রয়ারে ল্যাপটপ রেখে দিতে পারবেন, সেখানে আপনি ডেস্কটপ নিলে আপনাকে তার জন্য আলাদা একটা জায়গা বের করতে হবে। আর আপনি যদি পড়াশোনা করেন হোস্টেলে থাকেন সেখানে আপনার জন্য ল্যাপটপ থেকেই বেশি সুবিধা পাবেন।
এখন যদি আমরা ল্যাপটপের অসুবিধা গুলো দেখিঃ
প্রথম অসুবিধা হল আপনি চাইলেই এর কম্পোনেট বদলাতে বা আপগ্রেট করতে পারবেন না। কারণ ল্যাপটপ এর প্রসেসর বদল এর সুযোগ নাই, হয়ত আপনি র্যাম বা হার্ডডিস্ক বাড়াতে পারবেন তাও সীমাবদ্ধতা রয়েছে
ল্যাপটপ থেকে আপনি গেমিং পারফমেন্স খুব বেশি আশা করতে পারবেন নাযেহেতু এটি একটি প্রটেবল যন্ত্র ছোট যায়গাতেই অনেক কম্পোনেট থাকে,যা ভারী কাজ এর ক্ষেত্রে ল্যাপটপ অনেক গরম হয় আর পাফমেন্স ড্রপ করে।সেখানে আপনি চাইলেই একটি কুলিং ফ্যান ল্যাপটপে লাগাতে পারবেন না
আপনি যদি বেশি পাওয়ারফুল ল্যাপটপ নিতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে টাকাও বেশি খরচ করতে হবে
অভারক্লক করতে পারবেন না। ( অভারক্লক হলো এমন একটি পদ্ধতি যা কম্পিউটার থেকে সব সর্বোচ্চ পারফমেন্স পাওয়া যায়)
★আর অবশেষ আপনি যে সিদ্ধান্ত নিবেন এখানে হয়ত আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি।
আপনার বাজেট যদি কম হয় আর আপনি সর্বোচ্চ পারফমেন্স আশা করেন আপনি ডেস্কটপ কিনুন, যদি গেম খেলেন , লম্বা সময় ধরে কম্পিউটার ব্যবহার করবেন এমন ভাবেন অবশ্যই ডেস্কটপ কিনবেন, আর যদি আপনি আস্তে আস্তে আপগ্রেট এর কথাও ভাবেন সেখানে অবশ্যই ডেস্কটপ নিবেন, কারণ এখানে থেকে আপনি সর্বোচ্চ পারফমেন্স পাবেন, আপনি যখন খুশি কিছু বদলে নিতে পারবেন। যদি আপনার কম্পোনেন্ট এর সম্পর্কে ধারনা থাকে , আপনি ডেস্কটপ কে যদি খেলনার মত ব্যবহার করতে চান আপনি ডেস্কটপ নিন। কারন আপনি একটা ডেস্কটপ এর সাথে অনেক সুবিধা পাবেন যা ল্যাপটপ দিতে পারবেনা
আর আপনি যদি পড়াশোনা করেন ব্যবসা করেন, কিংবা বাসা ও অফিস দুই যায়গাতেই আপনাকে কাজ করতে হয় সেখানে টাকা বেশি খরচ হলেও আপনি ল্যাপটপ কিনুন, কারন ল্যাপটপ আপনাকে প্রটেবিলিটি দিবে। যেকারনেই আপনাকে ল্যাপটপ কিনতে বলব। কারণ যে-কোনো কাজেই ল্যাপটপ আপনার প্রাথমিক কম্পিউটার হবে। বাসায় যদি বাবা মা কে কিংবা বয়সে ছোট বাচ্চাদের কিনে দেয়ার ইচ্ছা থাকে ল্যাপটপ কিনে দিতে পারেন। কারন তাদের কাছে একটা ডেস্কটপ এর চেয়ে ল্যাপটপ চালানো অনেক সহজ।
সর্বশেষ সবকিছু যদি বিবেচনা করি ডেস্কটপই জিতে যাবে। কারন যত নতুন টেকনোলজি আসে ডেস্কটপেই আগে দেখতে পাওয়া যায়। যা ল্যাপটপে হয়ত সেভাবে কখনোই আসেনা ,যারা পিসি বিল্ডার তাদের সবসময় পছন্দের তালিকায় ডেস্কটপ থাকবে। কারণ ডেস্কটপকে নিয়ে যতটা খেলনার মত খেলা যায় তা ল্যাপটপের সাথে করা সম্ভব হয়না। ডেস্কটপে অনেক সুযোগ সুবিধা আছে যা ল্যাপটপে আপনি কিছু জিনিসে এগিয়ে থাকলেও কিছু যায়গাতে ল্যাপটপ ডেস্কটপের ধারে কাছেও ঘেষতে পারবেনা।
anafkhan publisher