Answered 2 years ago
১৯৭৯ সালে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র হওয়ার পর থেকে ইরানে ইসলামিক শাসনব্যবস্থা চালু হয়। দেশটিতে ইসলামী নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে পালন করা হয়। রাস্ট্রীয়ভাবে নারীর পোষাক নির্ধারন করা হয়, হিজাব পড়া যাতে চুল দেখা না যায়, ঢিলাঢালা পোষাক পড়া যাতে শরীরের কোন ভাজ দেখা না যায়, লম্বা পাজামা পড়া যাতে পা দেখা না যায়। এবং শুধুমাত্র মেয়েরা পোষাক ঠিকভাবে পড়েছে কিনা তার জন্য একদল পুলিশবাহিনী রাখা হয়েছে যাদেরকে মরালিটি পুলিশ বা "Gasht-e Ershad" (Guidance Patrols) বলে। এসব পুলিশ প্রপার ক্লোথিং এর নামে বা তাদের পছন্দ না হলে যখন তখন যেকোন মেয়েকে জেল, জরিমানা বা মারধর করার ক্ষমতা রাখে।
পুলিশ হেফাজতে মাহশা আমিনীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইরানকে অস্তিতিশীল করার পিছনে সিআইএ এবং মোসাদ জড়িত। পুলিশী হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ইরানে এবারই প্রথমই বিষয়টা এমন না। কিন্তু শুধুমাত্র হিজাব না পারার অপরাধে একটি মেয়েকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যার ঘটনায় ইরান জুড়ে যে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে সেটা অবশ্যই উদ্দেশ্যপ্রসূত। বলাবাহুল্য এর পেছনে যে সিআইএ এবং কলকাঠি নাড়ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। উদাহরণস্বরূপ আমরা আরব বসন্ত এবং তুরস্কে এরদোগানবিরোধী সামরিক ও অভ্যুত্থানের দিকে উদাহরণ দিতে পারি।
২০১০ সালের ১৭ই ডিসেম্বর তিউনিশিয়া থেকে আরব বসন্তের সূচনা হয়েছিল। এরপর তা মিশর, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন সহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে মিশরে প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক এবং পরে মুয়াম্মার গাদ্দাফি পতন হয়। আরব বসন্তের লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র, শাসনতন্ত্রের পরিবর্তন, মানবাধিকার এবং অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এটাই যে অনেকটা ঢাকঢোল পিটিয়ে যে পশ্চিমা গণমাধ্যম তিউনিসিয়ায় শুরু হওয়া বিপ্লবের ঢালাওভাবে প্রচার চালিয়েছিল সে বিপ্লব থেকে কাঙ্খিত কোন সাফল্য পাওয়া যায়নি। উপরন্তু সেই আরব বসন্তের প্রায় এক দশকের মাথায় আমরা দেখছি মধ্যপ্রাচ্যের এক অস্থিতিশীল অবস্থা।
➡️আন্দোলনের ফলে দেশগুলোতে কেবল ক্ষমতার পরিবর্তনই হয়েছে। মিশরে মোহাম্মদ মুরসীকে অপসারণের পর এখন চলছে সামরিক বাহিনীর শাসন এবং ক্ষমতায় বসেছে জেনারেল সিসি। জনগণের স্বাধীনতা হয়েছে খর্ব। আগের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসী জেলেই মারা গেছেন। তার দলের নেতা কর্মীরা জেলেই দিনযাপন করছেন।
➡️লিবিয়ার অবস্থা আরো খারাপ। ন্যাটোর হস্তক্ষেপের ফলে লিবিয়ার কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। গাদ্দাফির শাসনামলে লিবিয়ার জনগণ যে পরিমাণ সুযোগ সুবিধা পেত তার ন্যূনতম এখন আর পাওয়া যায় না। এক সময়কার আরব বিশ্ব এবং আফ্রিকার অন্যতম ধনী রাষ্ট্র লিবিয়া এখন বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন শাসন গোষ্ঠীর শাসনে চলা এক যুদ্ধ বিধ্বস্ত এবং হত দরিদ্র রাস্ট্র। সিরিয়ায় হাজারো নারী-শিশুর আর্তনাদ নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে আজ। বাশার আল আসাদকে পরাজিত করতে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে বিদ্রোহীদের, সেখানে শাসক বাশারকে সহায়তা দিচ্ছে চীন ও ইরান। ফলে দীর্ঘায়িত হচ্ছে গৃহযুদ্ধ। বিশ্বের সুপার পাওয়ারগুলোর যুদ্ধক্ষেত্রের আড্ডাখানা হয়েছে সিরিয়া।
➡️আরব-বসন্তের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য ছিল মিশর, তিউনিসিয়া, লিবিয়া মত কট্টরপন্থী ইসলামিক এবং মার্কিন বিরোধী রাষ্ট্রপ্রধানদেরকে উৎখাত করা এবং সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পুতুল সরকারকে বসানো। যুক্তরাষ্ট্র এই পরিকল্পনায় শতভাগ সফল হয়েছে।
🛑মাহশা আমিনীর মৃত্যুর ঘটনাটাও এই আরব বসন্তের ঘটনারই পুনরাবৃত্তি। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল খুব ভালো মতো জানে ইরান তাদের পরমাণু কার্যক্রম কখনো বন্ধ করবে না।
ইরান খুব শীঘ্রই একটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী শক্তিশালী দেশে পরিণত হবে যেটা ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতার জন্য হুমকি। তাই ইরানের জনগণকে আধুনিকতার দোহাই( হিজাব বিরোধী) দিয়ে রাস্তায় নামানো হয়েছে। কিন্তু তাদের লক্ষ্য একটাই। ইরানের শাসককে সেভাবে উৎখাত করা যেভাবে তিউনিশিয়া, মিশর এবং লিবিয়াকে শাসকদেরকে উৎখাত করা হয়েছে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের লাভ হবে দুটো। প্রথমত ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের পুতুল সরকার বসানো যাবে এবং দ্বিতীয়ত ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লাভটি হল ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। তাতে করে ইরান আর কোনদিনও পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে না। আর সেজন্যই তারা তরুণ প্রজন্মকে আধুনিকতার মিথ্যা ভেলকি দেখিয়ে পথে নামিয়েছে।
abdullahalnafi publisher