ইভ্যালি এত কম দামে মোবাইল কিভাবে সেল দেয়, তারা কোথা থেকে এতো কমে কিনে আনে?

1 Answers   4.6 K

Answered 2 years ago

প্রথমেই একটা বিষয়ে আসি, এইসব ইকমার্সকে কেন এমএলএম এর সাথে তুলনা করা হচ্ছে? এটা বুঝতে হলে প্রথমে আপনাকে এমএলএম সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকতে হবে। বেশি না, শুধু ডেসটিনি বা এইরকম কোন কোম্পানির একটা সেমিনারে গিয়ে থাকলেই হবে। এইসব সেমিনারে ডান হাত - বাম হাত, কোটি কোটি টাকার স্বপ্ন দেখানোর আগে প্রায় সবাই একটা লাক্স সাবানের গল্প বলতেন। বাজারে একটা লাক্স সাবানের দাম কতো? ১৪ টাকা (এখন সম্ভবতঃ ২২ টাকা?), আপনি কি জানেন সেই লাক্স সাবানের উৎপাদন খরচ মাত্র ২ টাকা? তাহলে বাকি ১২ টাকা কোথায় যায়? এগুলা সব বিভিন্ন মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে যায়। সবশেষে আপনি যেটা বুঝবেন এই কোম্পানি উৎপাদকের কাছ থেকে পণ্য এনে সরাসরি আপনার হাতে তুলে দিবে তাহলে এই যে ১২ টাকা আগে বিভিন্ন মধ্যস্বত্বভোগীরা পেতো, সেগুলোই এখন কমিশন হিসেবে **কাস্টমারদেরই** দিয়ে দিবে। এই কথাগুলোর সাথে সাময়িক কোন বিবেকবান "দেশি ই-কমার্স" প্রেমীর কথার সাথে মিল পাচ্ছেন (PingDuoDuo or C2M)? মিল পাওয়াটা আপনার ভুল, কারণ এমএলএম এ তো তারা মার্কেটিং কমিশন পেতো। এখানে তো কোন মার্কেটিং কমিশনের সিস্টেমই নাই। কথা হচ্ছে ঘুরে ফিরে সেই কাস্টমারকেই লাভ দেয়া হচ্ছে, আগে দিতো কমিশন হিসেবে সবার মাঝে ভাগ করে (মাল্টিলেভেল), এখন দেয়া হবে কাশব্যাক হিসাবে শুধুমাত্র প্রোডাক্টের ক্রেতাকে। এখানেই হলো একমাত্র পার্থক্য। যাই হোক, আমি বলছি না, আমাদের দেশের কোন নামধারী ই-কমার্স এই কাজ করছে। আমি শুধু আপনাদের বুঝাতে চাচ্ছি, কেন আমরা তাদেরকে এমএলএম এর সাথে মিলাচ্ছি। কারণ, আমরা বহুদিন ধরে চলে আসা এই কথাগুলোর সাথে তাদের কথার মিল খুঁজে পাচ্ছি।


এবার আসুন, আমরা একটা বিজেনেস মডেল নিয়ে আলোচনা করি। আমি আবারো বলছি, বর্তমান কোন ব্যবসায়ী এই মডেলেই বিজনেস মডেল সাজিয়েছেন কিনা আমার কাছে সেটার ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। আমি শুধু আপনাদের দেখাতে চাই, এই ধরনের একটা বিজনেস মডেল হতে পারি কিনা। বাকিটা আপনারা যার যার নিজ বিবেচনায় বুঝে নিবেন।


আমি চাইছি এই নিউ ডিজিটাল ইনভেনশনের মাধ্যমে আলু বিক্রি করবো। আমরা জানি আলু একটি সর্বজন প্রিয় খাদ্য যা সবসময় পাওয়া যায় এবং প্রায় সবার ঘরেই এটা থাকে। তাই দেশের ১৬ কোটি মানুষকে একটা প্লাটফর্মে আনার জন্য আলুর চেয়ে ভালো পণ্য হতে পারে না। তাই আমরা একটা ই-কমার্স সাইট করবো ই-আলু ডট কম। তো আলুর দাম এখন বাজারে ৩০-৩৫ টাকা, সেদিকে না যাই। হিসাবের সুবিধার্থে ধরে নিই, বাজারে আলুর দাম ২০ টাকা। আমি যেহেতু ভিন্ন একটা মডেল দাড় করাতে চাচ্ছি, আমি ২০ টাকায় আলু বিক্রি করবো না। ক্যাশব্যাকের হিসাবের অনেক মারপ্যাঁচ আছে, এখানে অঙ্কটা সহজ করার জন্য আমি ক্যাশব্যাক এভয়েড করছি। ধরুন ৫০% ডিস্কাউন্ট দিয়ে আমি প্রতি কেজি আলু ১০ টাকায় বিক্রি করবো। বাজারে আলুর কেজি ২০ টাকা, আমি দিবো ১০ টাকা, সাথে আবার বাসায় পৌঁছে দেয়া ফ্রি। মানুষ ভাত খাওয়া ছেড়ে দিয়ে তিন বেলা আলু খাওয়া শুরু করবে দেখবেন। যাই হোক, কথা সেটা না। আমি ২০ টাকার আলু কিভাবে ১০ টাকায় বিক্রি করবো? বাজারে আলু ২০ টাকা হলে পাইকারি বাজারে হয়তো ১৫-১৬ টাকা পর্যন্ত নামতে পারে। হাই ভলিউমে কিনলে হয়তো সেখানে আরেকটু কমে ১৪টাকায় আনা যাবে। তাও তো ৪ টাকা লস? চিন্তা নাই। ম্যাথ জিনিয়াস এর বিশ্ববিখ্যাত ম্যাথ মডেল আছে এর সমাধানের জন্য। খুব বেশি জটিল না বিষয়টা। শুধু দুইটা বিষয় আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে।


১) প্রত্যেক কাস্টমারকে টাকা পাওয়ার এক মাস পরে আলু ডেলিভারি দিবেন।

২) প্রত্যেক মাসে আপনাকে আপনার নতুন অর্ডারের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে হবে। (এটার জন্য আপনাকে প্রাথমিকভাবে মার্কেটিং বাবদ কিছু খরচ করতে হবে। চিন্তা করবেন না, আপনার বিনিয়োগ শুধু এটাই। আর কোন খরচ আপনার করতে হবে না, কথা দিচ্ছি)।


এবার হিসাব শুরু করতে পারেন।


প্রথম মাসঃ

ধরি প্রথম মাসে অর্ডার পড়লো ১০০০ কেজি আলুর (এটা কম বেশি হলে সমস্যা নাই, দেখবেন দ্বিগুণ নিয়মে এটা কতো দ্রুত বাড়বে) । তো আমাদের হাতে চলে আসলো ১০০০০ টাকা, যদিও কোন আলু ডেলিভারি দিতে হচ্ছে না বলে খরচ নেই কোন। এই টাকা দিয়ে কিছু এক্সট্রা বিলবোর্ড কিনে রাখতে পারেন চাইলে।


দ্বিতীয় মাসঃ

নতুন অর্ডার ২০০০ কেজি। টাকা ২০০০০। আগের মাসের অর্ডার ছিল ১০০০ কেজির, সেগুলো কিনতে যাবে ১৪০০০, হাল্কা আর কিছু খরচ আছে, ধরলাম সব মিলিয়ে ১৫০০০। আমাদের হাতে রইলো আর ৫০০০ টাকা। এটা দিয়ে অনলাইনে কিছু মার্কেটিং করুন, পরের মাসে অর্ডার ডাবল করতে হবে না?


তৃতীয় মাসঃ

নতুন অর্ডার ৪০০০ কেজি। টাকা ৪০০০০। আগের মাসের অর্ডার ডেলিভারিতে খরচ হবে ৩০০০০টাকা। হাতে থাকবে ১০০০০। এটা দিয়ে একটা "ফ্রি আলু ক্যাম্পেইন" দিয়ে দিন কোম্পানির প্রচারের স্বার্থে! সমস্যা নাই, আপনার টাকা তো খরচ হচ্ছে না! ;)


এভাবে চতুর্থ মাসে আপনার খরচ হবে ৬০০০০, লাভ ২০০০০।

পঞ্চম মাসে খরচ ১২০,০০০, লাভ ৪০০০০।

৬ষ্ঠ মাসে খরচ ২৪০০০০, লাভ ৮০০০০।

এইভাবে ১২তম মাসে আপনার অর্ডারবাবদ আয় হবে ২ কোটি ৫ লক্ষ টাকা এবং খরচ বাদ দিয়ে লাভ হবে ৫১ লক্ষ টাকা। এবং পরের মাস থেকে আপনি কোটিপতি।


তো এই সহজ অঙ্ক মিলাতে পারলে প্রায় বিনা পুঁজি থেকে শুরু করে আপনি ১২ মাসে কোটিপটিতে পরিণত হতে পারবেন এবং দেশের অনেক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্যের অভাব পূরণে অনবদ্য ভূমিকা রাখার জন্য দেশ বিদেশে সুনাম কুড়িয়ে আনতে পারবেন। তখন যদি কেউ আপনার ব্যবসায়িক মডেল নিয়ে প্রশ্ন তুলতে আসে দেখবেন দেশের আপামর অভাবী লোক বলে উঠবে, পরিণত হতে পারবেন এবং দেশের অনেক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্যের অভাব পূরণে অনবদ্য ভূমিকা রাখার জন্য দেশ বিদেশে সুনাম কুড়িয়ে আনতে পারবেন। তখন যদি কেউ আপনার ব্যবসায়িক মডেল নিয়ে প্রশ্ন তুলতে আসে দেখবেন দেশের আপামর অভাবী লোক বলে উঠবে, অমুক ভাই না থাকলে আমরা দুইবেলা আলু খাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারতাম না।

এই সহজ অঙ্কে একটা বিষয় আপনারা খেয়াল করেছেন হয়তো, এখানে সব কটি অর্ডার নির্ধারিত সময়েই ডেলিভারি হচ্ছে। কারো সাথে কথার খেলাপ হচ্ছে না। তাহলে আপনি ধরে নিতে পারেন, এই বিজনেস মডেল সঠিকভাবে ফলো করলে প্রত্যেকেই লাভবান হবে, কেউ লসে পড়বে না (যতদিন না ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়)। কিন্তু কথা হচ্ছে, বাস্তবে তো আমরা দেখতে পাচ্ছি, অনেক অর্ডার দেরিতে ডেলিভারি হয়, কেউ ছয় মাসেও পণ্য পায় না, ইনভয়েস নাম্বার নিয়ে মার্কেটিং ক্যাম্পেইন করা লাগে ডেলিভারি পাওয়ার জন্য। এটা কেন হচ্ছে? এটার পিছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে, তবে সবচেয়ে বড় কারণ হতে পারে, আমাদের অঙ্কের দুই নাম্বার শর্ত অনুযায়ী প্রতি মাসে অর্ডার দ্বিগুণ করতে না পারা। তাহলে এটার সমাধান কি? এক্ষেত্রে একটা সুবিধা হলো আপনি এমন একটা দেশে বাস করেন যেটাকে বাটপারের স্বর্গ বলা যায়। এখানে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরির অফার দিয়ে অহরহ প্রতারণা করা হয়, দেখার কেউ নেই। রাস্তায় একটা জটলা পাকিয়ে মানুষের পকেট মারা হয়, কেউ কিছু বলার নাই। আপনিও এখানে কৌশলে একটু নিয়মের বাইরে গেলে সেটাও আর সমস্যা হবে না। যেটা করতে হবে, সবাইকে বলবেন এক মাস মানে ৩০ বিজনেস ডে। এরপর ৩০ বিজনেস ডে আপনি আপনার মতো শেষ করবেন। মানে যখন অর্ডার ডাবল হবে তখনই পরবর্তী মাসের অর্ডার ডেলিভারিতে হাত দিবেন, তার আগে না। এভাবে আগালে আপনার আর রিস্ক নাই। যদিও কোটিপতি হতে একটু সময় বেশি লাগবে, এই আরকি! তাও কিছু সমস্যা থেকে যায়। এই যেমন ঘর ভাড়া তো আর এই সাইকেল এ ফেলা যাবে না, মাস শেষে তো বাড়িওয়ালাকে টাকা দেয়া লাগে। আবার কর্মীদের বেতনও দেয়া লাগবে। এতো টেনশন নিয়েন না! আরও অনেক ফাঁক ফোঁকর আছে, সেগুলা তো বলি নাই এখনো। এই যেমন, আপনি আলু ওয়ালার কাছ থেকে আলু কিনবেন, তাকে কি সাথে সাথে টাকা দিয়ে দিবেন? তাকে বলবেন মাল বিক্রি করে টাকা দিচ্ছি। আপনি যখন এতো এমাউন্টের অর্ডার নিশ্চিত করবেন তখন তারা লাভের স্বার্থে অনেক টাকা বাকিতে দিবে। তাদেরকে ১৫-২০ দিনের সময় বেধে দিলেও আসলে কখন দিবেন সেটা আপনার মর্জি। দেশে কি আলু ব্যাপারীর অভাব নাকি? একজন গেলে আরেকজন থেকে নিবেন। (মজার ব্যাপার হলো, দ্বিতীয় ব্যাপারীও অর্ডার ভলিউম দেখে ঝাপিয়ে পড়বে, আগের ব্যাপারীর কি হলো সেটা সে ভেবেও দেখবে না।) এরপর সময় সুযোগ বুঝে ই-লেবু, ই-কলা, ই-মরিচ এরকম আর কিছু সাইট খুলে লাভের পরিমাণ এবং ক্যাশ ফ্লো (*গুরুত্বপূর্ণ) বাড়াতে পারেন।

এবার আসুন অন্য কথায়। উপরে আমরা যা দেখলাম সেখানে তো কাস্টমারের টাকা মাইর যাওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ফর্মুলা অনুযায়ী আগালে সবাই যার যার পণ্য বুঝে পাবে আজকে নাহয় কালকে। তাহলে এইরকম একটা সিস্টেম যদি দেশের ক্ষুধাদারিদ্র্য দূরীকরণে কিছুটা ভূমিকা রাখতে পারে, তাহলে ওইসব অতিজ্ঞানী নেটিজেনদের কি সমস্যা? তারা কেন এটার পিছনে উঠেপড়ে লেগেছে? (এখানে আমি আবারো মনে করিয়ে দিতে চাই, আমি এই পোস্টে কোন কোম্পানিকে সরাসরি উল্লেখ করে বলছি না, তারা এই মডেলে বিজনেস করছে, শুধু বলছি আমাদের মতো কিছু ব্যক্তিবর্গ তাদের বিজনেস মডেলকে এভাবে সন্দেহ করছেন বলেই এইসব কথার অবতারণা)। কথা হচ্ছে, যারা এইসব বলছে তারা বেশিরভাগই এদেশের অভাগা জাতির ধোঁকা খাওয়া দেখেছে বার বার। শুধু ডেসটিনি না, Dolancer, যুবক, Unpay2U ইত্যাদি এমএলএম ছাড়াও শেয়ার বাজারের মতো বৈধ একটা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করেও মানুষকে পথে বসতে দেখেছেন। এইসব ব্যবসায়ে কেউ ঠকবে না, যতদিন না একটা ভাটা আসে। এবং পৃথিবীর নিয়ম অনুযায়ী সকল ব্যবসায়ে ভাটা আসে। যেইসব ব্যবসায়ের নিজস্ব কোন ভিত্তি থাকে, তারা সেটাতে টিকে যায়, আর যেসব ব্যবসা অন্যের টাকার উপর নির্ভর করে চলে, সেইসব ব্যবসা নিমিষেই ধ্বসে পড়ে। এখন এই যে আকাশে উঠে ধ্বসে পড়া, সেটা তো এই বিজনেস একা পড়বে না। সাথে নিয়ে পড়বে মতো বৈধ একটা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করেও মানুষকে পথে বসতে দেখেছেন। এইসব ব্যবসায়ে কেউ ঠকবে না, যতদিন না একটা ভাটা আসে। এবং পৃথিবীর নিয়ম অনুযায়ী সকল ব্যবসায়ে ভাটা আসে। যেইসব ব্যবসায়ের নিজস্ব কোন ভিত্তি থাকে, তারা সেটাতে টিকে যায়, আর যেসব ব্যবসা অন্যের টাকার উপর নির্ভর করে চলে, সেইসব ব্যবসা নিমিষেই ধ্বসে পড়ে। এখন এই যে আকাশে উঠে ধ্বসে পড়া, সেটা তো এই বিজনেস একা পড়বে না। সাথে নিয়ে পড়বে হাজার হাজার মানুষের কোটি কোটি টাকা। আপনারা যেইসব বিজেনেস এনালিস্টরা এসবে উৎসাহ দিচ্ছেন, তারা কি পারবেন এতো মানুষের কোটি কোটি টাকার গ্যারান্টি দিতে???

সবশেষে আবারো আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, আমি এই পোস্টে কোন কোম্পানির নাম নিইনি। এটাও বলিনি কোন কোম্পানি এই মডেলে বিজনেস করছে বাংলাদেশে। কিন্তু কিছু কিছু কোম্পানির (হ্যাঁ! একের অধিক) কার্যকলাপে আমাদের এই সন্দেহ হচ্ছে এবং সেই সন্দেহের যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ আছে। এটাই আমাদের কনসার্ন। এরপর বাকিটা যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবেন। আমরা জানি এদেশে সবকিছু ঠিকভাবে হয় না। সেটা ঠিক, কিন্তু এরপরও দেশে আইন ব্যবস্থা আছে বলেই দেশটা টিকে আছে। তাই সেটার উপরই আমাদের আস্থা রাখতে হবে।

FAQ 1: আমি যদি অর্ধেক দামে পণ্য পাই, তার জন্য একটু অপেক্ষা করতে সমস্যা কোথায়? আমার তো ভয়ের কোন কারণ নাই।

- আপনার ভয়ের কারণ আছে বৈকি! সমস্যাটা এখানেই যে,

- আপনার ভয়ের কারণ আছে বৈকি! সমস্যাটা এখানেই যে, আপনার পণ্য পাওয়াটা তখন আপনার টাকার উপর নির্ভর করছে না। নির্ভর করছে, পরবর্তী মাসে (বা সাইকেলে) তারা প্রত্যাশিত অর্ডার পাচ্ছে কিনা সেটার উপর। ট্র্যাডিশনাল ব্যবসায়ে আপনি টাকা দিবেন পণ্য পাবেন, এখানে সেই কোম্পানিটি যদি আপনার টাকা দেওয়ার পরদিন কোন কারণে বন্ধও হয়ে যায়, আপনার টাকা তারা আপনাকে ফেরত দিয়ে দিতে পারবে। কারণ সেই টাকা তাদের একাউন্টে বা গেটওয়েতে, কোথাও থাকবে। কিন্তু এই নতুন উদ্ভাবিত বিজনেস মডেলে আপনার টাকা তারা খরচ করে ফেলবে তাদের আগের পেন্ডিং অর্ডার ক্লিয়ার করতে গিয়ে। এরপর সেই মূহুর্তে যদি ব্যবসা কোন কারণে বন্ধ হয়ে যায়, দেখা যাবে তাদের অর্থ ভাণ্ডার শূন্য, উলটা সেলারদের কাছে অনেক টাকা বকেয়া। তখন আপনার টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

FAQ 2: আচ্ছা, তো আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, ব্যবসায়ে কেউ ডিস্কাউন্ট ক্যাশব্যাক দিতে পারবে না? অমুক কোম্পানি তমুক কোম্পানি যখন ২০০% ক্যাশব্যাক দেয়, তখন তো আপনাদের কথা বলতে দেখা যায় না?

- হুম। অমুক কোম্পানি যদি একি নিয়মে দিয়ে থাকে, তাহলে একি রকমের রিস্ক কাষ্টমারের থাকে। তবে সেটা যদি অলরেডি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি হয়, তাহলে আমাদের ভয়ের কারণ কম থাকে। তারপরও আপনাদের কিছু নিয়ম শিখিয়ে দিই, কোন কোম্পানি যখন ক্যাশব্যাক / ডিস্কাউন্ট অফার দিবে, সেটা কি তার প্রোডাক্ট এর থেকে ডিস্কাউন্ট দিচ্ছে নাকি আসলে অন্য কোন ভাবে আপনার কাছ থেকেই এটা বের করছে।

১) ইনস্ট্যান্ট ডিস্কাউন্ট অথবা ক্যাশব্যাকঃ আপনি যেকোন অর্ডার করার সময় ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক বা ডিস্কাউন্ট যদি পান তাহলে ভয়ের কারণ কম থাকে। (ক্যাশব্যাকের ক্ষেত্রে ৩ নং পয়েন্ট দ্রষ্টব্য)।

২) ডেলিভারি টাইমিংঃ অফারের জন্য তাদের ডেলিভারি টাইমে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে না। তার মানে হলো, যদি দেখেন নরমালি একটি পণ্য কোথাও অর্ডার করলে সাধারণত ৩ দিন সময় লাগে ডেলিভারি করতে, অফারসহ অর্ডারেও সেটা ৩ দিন সময় নিবে। এটার জন্য আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা, আশেপাশের মানুষের অভিজ্ঞতা যাচাই করবেন। আর যদি দেখা যায়, অফারের কারণে অর্ডার ডেলিভারিতে অত্যধিক সময় নেয় (অনেক সময় বলেও দেয়, এতো ডিস্কাউন্ট এর জন্য একটু ওয়েট করতে পারবেন না?) তাহলে ঝামেলা আছে।

৩) ক্যাশব্যাক লিমিটঃ যদি ক্যাশব্যাক অফার হয়ে থাকে, সেই ক্যাশব্যাক দিয়ে আপনি তাদের অন্য যেকোন পণ্য যেকোন সময় কিনতে পারবেন। এখানে কোন লিমিট থাকবে না। যদি এখানে বিভিন্ন ধরনের লিমিট থাকে, তাহলে বুঝতে হবে ঝামেলা আছে।

৪) সার্ভিসে তারতম্যঃ যদি এমন হয়, অফারের অর্ডার হওয়ার কারণে, আপনি সার্ভিসের ক্ষেত্রে দুর্বলতা পাচ্ছেন, যেমন প্যাকিং খারাপ বা ওয়ারেন্টি কার্ড মিসিং বা সাপোর্ট থেকে / ডেলিভারি ম্যান থেকে ভিন্ন ধরনের কথাবার্তা যাতে বুঝা যায়, "আপনি অফারে যা পাইছেন, তাই তো বেশি! চুপচাপ কেটে পড়েন!" তাহলে বুঝতে হবে এরা প্রফেশনাল না, ধান্দাবাজ।

৫) অফারভিত্তিক কোম্পানিঃ কোন কোম্পানি যদি বেশিরভাগ অর্ডার বা সব অর্ডার অফারেই বিক্রি করে, তাহলে তাদের বিজনেস মডেল এ সমস্যা থাকা খুব স্বাভাবিক।

FAQ 3: এতো মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে যে ব্যবসায়, সেটা কি বন্ধ করে দেয়া উচিত?

- না! একদমই উচিত না। সত্যি কথা বলতে আমিও চাইনা এটা বন্ধ হয়ে যাক, যদি এটাকে কোনভাবে "মানি গেম" এর চেইন থেকে বের করে সঠিক ই-কমার্স ব্যবসায় পরিণত করা যায়। আর যদি এটা এখনকার অবস্থাতেই চলতে দেয়াটাকেই আপনি সমর্থন করছেন, তাহলে আপনাকে বলতে চাই, দেশে মাদকের ব্যবসা করেও অনেকের কর্মসংস্থান হয়, পরিবারের স্বপ্ন পূরণ হয়। অনেকেই ছিনতাই চাঁদাবাজি করে কর্মসংস্থান করে। আবার এই যে দূর্নীতি নিয়ে এতো কথা, আপনি কি জানেন এই দূর্নীতি শুধু একটা পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করে না, এই দূর্নীতির টাকা দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হয়, সেখানে মানুষের কর্মসংস্থান হয়? তাহলে আপনার উচিত না, এই কর্মসংস্থান করার অজুহাতে এদেরকেও আপনার সাপোর্ট করা? সেটা কি আপনি করেন বা করতে প্রস্তুত?

FAQ 4: উৎপাদকের কাছ থেকে যদি বাল্ক আকারে অর্ডার নেয়া হয়, তাহলে সেখানে ৫০% - ৭০% ডিস্কাউন্ট যদি করা যায়, তাহলে তো আপনার বিজনেস মডেল ফলো করা ছাড়াই এমন অফার দেয়া সম্ভব।

- আচ্ছা। আপনারা যারা কয়েক লাখ টাকার পণ্য কিনেছেন, তাদের কাছে একটা প্রশ্ন, এর মধ্যে কয়টা পণ্য আপনি সরাসরি ফ্যাক্টরি থেকে বাসায় ডেলিভারি পেয়েছেন? বেশিরভাগ আশেপাশের কোন শোরুম থেকে ডেলিভারি দেয়া হয়নি? তাহলে সেই শোরুম কোন কমিশন ছাড়াই এই সার্ভিস দিয়েছে বলে আপনার ধারণা? যাই হোক, তাও আপনার যুক্তির খাতিরে ধরে নিলাম, তারা সেরকম কোন ডিস্কাউন্ট উৎপাদকের কাছ থেকেই ম্যানেজ করলো। তাহলে কেন আপনাকে "টাকা দেয়ার পর" এক মাস ওয়েট করতে হবে ডেলিভারি পেতে? এখানে একটা কথা ছড়ানো হচ্ছে এই বলে যে বাল্ক আকারে অর্ডার তাই বলে বাল্ক আকারে ডেলিভারি করতে হয়। আমি তো বিভিন্ন অফারে দেখছি একদিনেই অর্ডার পড়ছে সব। তাহলে তারা চাইলে কি এক সপ্তাহের মধ্যে সব ডেলিভারি কমপ্লিট করতে পারে না? আবার কেউ বলতে পারেন, উৎপাদক হয়তো অর্ডার নিশ্চিত হওয়ার পর প্রোডাক্ট বানানো শুরু করে (বা ইম্পোর্ট করে) তারপর ডেলিভারি করে। যদিও এটা একটা হাস্যকর কথা, তাও বলি, যদি সেরকম কিছু হয়, তাহলে এখানে সেলারের অগ্রিম টাকা নেয়ার কোন অধিকার নেই। এক্ষেত্রে "প্রি-অর্ডার" নামক একটা টার্ম আছে, যেখানে কাস্টমার অল্প কিছু এমাউন্ট অগ্রিম দিয়ে জিনিসটা বুকিং দিবে এবং প্রোডাক্ট রেডি হওয়ার পর ডেলিভারির সময় বাকি টাকা দিবে।

FAQ 5: উনাকে দেখলে কখনো বাটপার মনে হয় না। উনি তো বাটপারি ব্যবসা করতে পারেন না। উনি ভেগে যাওয়ার হলে অনেক আগেই ভেগে যেতেন।

- ডেসটিনির এমডিকেও আমার বাটপার মনে হয়নি কখনো। সত্যি কথা বলতে, এখনো মনে হয় না। তিনি ভেগে যাবেন বা মানুষের টাকা মেরে খাবেন এই চিন্তা করে এইসব করেননি। তিনিও চেষ্টা করেছিলেন একটা নতুন বিজনেস মডেল দিয়ে এখানে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে। তাহলে সমস্যা কোথায়? এখানে সমস্যা "নিয়তে" না "নিয়মে"। কথা হচ্ছে, এই বিজনেস মডেল টিকে থাকার বিজেনেস মডেল না, তাই তারা নিজেরা ভেগে যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও শেষ পর্যন্ত সিস্টেমের কাছে হার মানতে হয়। আর যখন সেটা হয়, তখন ভুক্তভোগী হয় বিশাল একটা জনগোষ্ঠী, যাদের বিচার চাওয়ারও জায়গা থাকে না!

FAQ 6: অমুক ভাই না থাকলে তো আমি এইসব জীবনেও কিনতে পারতাম না।

- এই কথাটা যতবার দেখেছি আমার খুব কষ্ট লেগেছে। বিশেষ করে ভালোভাবে পড়ালেখা শেষ করে ভালো একটা কোম্পানিতে সম্মানজনক চাকরি করার পরও কেউ যদি এমন একটা কথা বলে, দুঃখে কইলজা ফাইট্টা যায়! ভাইরে ভাই, অমুক ভাই কি তার নিজের বাড়ি ঘর বিক্রি করে আপনাকে দিচ্ছেন? যদি এটা সঠিক নিয়মে দেয়া সম্ভব হতো, আপনার কি মনে হয়, সেরকম সিস্টেমের অভাব হতো দেশে?

আর মানুষের স্বপ্নের কোন সীমানা নাই। আজকে যে পাজেরো গাড়িতে চড়ে তার জন্য প্রাইভেট জেট কেনা একটা স্বপ্ন। আবার কারো জন্য একবেলা পেট পুরে বিরিয়ানি খাওয়াটাও একটা স্বপ্ন। আপনার সামর্থ্যের মধ্যেই দেখুন কতো স্বপ্ন আপনি পূরণ করতে পারবেন। নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রাখুন। স্রষ্টার উপর বিশ্বাস রাখুন। স্বপ্নপূরণের সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো নিজের যোগ্যতায় সেটা অর্জন করা। যদি কারো দয়া দাক্ষিণ্যে সেটা অর্জন করে ফেলেন তাহলে আসল আনন্দটাই আপনি মিস করে যাচ্ছেন।

FAQ 7: এই ডিস্কাউন্ট / ক্যাশব্যাক এগুলা কি হালাল?

- এখানে বলে নিই, আমি ধর্মীয় জ্ঞান খুব কম রাখি। তাই এই ব্যাপারে কোন আলেমের পরামর্শ আপনারা গ্রহণ করবেন। কিন্তু আমার মতে যদি কোন ডিস্কাউন্ট / ক্যাশব্যাক এই শর্তে দেয়া হয় যে একটা নির্দিষ্ট সময় পরে আপনাকে পণ্য দেয়া হবে। তাহলে এই ক্যাশব্যাক বা ডিস্কাউন্ট সুদের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে আপনার ভাবা উচিত। দ্বিতীয়তঃ যদি এমন হয়, ১০০ জন ডিস্কাউন্টে অর্ডার করার পর ৫০ জন পণ্য পেলো, বাকিরা পেলো না, তাহলে এটা জুয়া বা লটারির পর্যায়ে চলে যায় (ইসলামে দুটোই হারাম)। খুবই দুঃখের সাথে বলতে হয়, আমার পরিচিত একজন যিনি হারামের ভয়ে ইউটিউবের মনেটাইজেশন অফ করে দিয়েছেন, তিনি পর্যন্ত এই ধরনের ক্যাশব্যাকের পিছনে ছুটেছেন স্বপ্নপূরণের আশায়। এতেই বুঝা যায় শয়তান কতটা একটিভ আমাদের প্রত্যেকের পিছনে।

FAQ 8: যারা অর্ডার দিচ্ছে তারা তো সব জেনেশুনেই অর্ডার দিচ্ছে। আর নেটে এতো অভিযোগ এই কোম্পানি নিয়ে, এইসব দেখেও যারা "লোভের বশবর্তী হয়ে" অর্ডার করে, তাদের তো ধরা খাওয়াই ঠিক আছে। (এই কমেন্ট মূলতঃ আসে, যখন কেউ হয়রানির শিকার হয়ে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেন)।

- আরে ভাই, এদেশের রাস্তায় ক্যানভাসাররা এখনো কিভাবে ধান্দাবাজি করে? বিকাশের প্রতারণার বিরুদ্ধে টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়েও কেন ঠেকানো যায় না? কারণ সবাই সব কিছু জানে না। যারা টিভিতে বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দেখে ওয়েবসাইটে এসে অফার দেখে পাগল হয়ে যাচ্ছে, তাদের সতর্ক করার জন্য কেউ নাই। আবার অনলাইনেও আমরা কিছু বললে পাল্টা বুদ্ধিজীবী হাজির হয়ে যায়। তখন নতুনরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়, কার কথা বিশ্বাস করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বল্প টাকায় "স্বপ্ন পূরণ" এর ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করে। এটাকে যদি আপনি "লোভ" বলে গণ্য করেন, তাহলে জগতের সবাই আসলে লোভী কোন না কোনভাবে।


Nabil Ahmed
nabilahmed
445 Points

Popular Questions