ইউটিউব (Youtube)-এর ভবিষ্যৎ কি সত্যি নিরাপদ?

1 Answers   11.5 K

Answered 2 years ago

ইউটিউব এর ভবিষ্যৎ কি নিরাপদ এর থেকেও বড় প্রশ্ন ইউটিউবারদের ভবিষ্যৎ কি নিরাপদ?

ইউটিউব বিশাল বড় কোম্পানি। প্রতি সেকেন্ডে ওদের রোজগারের হিসেব করতে হয়, কারন সাপ্তাহিক, অথবা মাসিক রোজগারের হিসেব করলে এত বড় অংক দাঁড়াবে যে অর্থের হিসেব করতে অসুবিধা হয়ে যাবে।

কিন্তু ইউটিউবারদের কি হবে? যারা প্রিও দা পাই কে দেখে একরাশ স্বপ্ন দেখে ইউটিউবার হতে এসেছে। তাদের কি হবে? যদি, ইউটিউব একদিন রাতারাতি ঘোষণা করে যে গুগল প্লাস ( গুগলের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ছিল ফেসবুকে চ্যালেঞ্জ দেওয়ার জন্য ) এর মতো তারাও তাদের ব্যবসা টা শাটডাউন করে দিচ্ছে?

দেখুন, উত্তরটা স্পষ্টভাবে আমি দিতে পারবো না। কারণ আমি ইউটিউবের ম্যানেজমেন্ট এর কেউ আমি নই। তবে দীর্ঘ প্রায় সাত-আট বছর ইউটিউব এর সাথে কাজ করার সুবাদে ওদের গতিবিধি আন্দাজ করতে পারছে, তাই আন্দাজেই উত্তরটা দিতে হচ্ছে।

সম্প্রতি ইউটিউব ঘন ঘন ভার্চুয়াল কনফারেন্স করছে আমাদের মত ইউটিউবার দের সাথে। আজ সকাল 11 টা, ভারতীয় টাইমে একটা ভার্চুয়াল কনফারেন্স ছিল। আবার কাল সকাল 11 টায় আরেকটা ভার্চুয়াল কনফারেন্সের কল করেছে।

আজকের ভার্চুয়াল কনফারেন্স এর মূল বিষয়বস্তু ছিল যে ইউটিউবারদের কনটেন্ট প্ল্যানিং করে আজ ভিডিও আপলোড করবো কাল ভিডিও আপলোড করব এরকম মনোভাব ত্যাগ করা উচিত। ভিডিও আপলোড করা তাদের শুরু করে দিতে হবে নিয়মিত ভাবে, মোটামুটি একটা গাইড লাইট তৈরি করে, ভিডিও রেকর্ডিং শুরু করে দেওয়াটাই বড় কথা। প্ল্যানিং করার পেছনে বেশি সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই।

বাল্ক কন্টাক্ট চাইছে, ইউটিউব আমাদের কাছ থেকে। এরকম কখনো আগে বলেনি। কনটেন্ট এর ব্যাপারে ইউটিউব সব সময় বলতো ক্লাস কনটেন্ট তৈরি করতে।

আমরা সবাই শুনেছি যে ইউটিউবে একদিনে দশটা বছরের ওয়াচ টাইমের ভিডিও আপলোড হয়। এমনটাই শুনে এসেছিলাম সেই তথ্যপ্রযুক্তির আদিম যুগ থেকে তাই না? তাহলে কি ইউটিউবাররা আস্তে আস্তে ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করা কমিয়ে দিচ্ছে?

যতদূর সম্ভব দিচ্ছে। না হলে কনফারেন্স এর মূল বিষয় নিশ্চয়ই এরকম হতো না। তাছাড়াও ওয়াচ টাইমের চক্করে পরে এত বড় বড় কনটেন্ট ইউটিউবারদের তৈরি করতে হচ্ছে যে ইউটিউবে কাজের মজাটাই হারিয়ে যাচ্ছে।

কোন রকমে ক্যামেরা সেট করে বকরবকর করে কিছু মানুষ এখন চালাচ্ছেন ইউটিউব। যেমন ইউটিউব এর উদীয়মান রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০k সাবস্ক্রাইবার হওয়ার পর একদিন আমি তাকে ফোন করে বললাম যে আপনি আপনার চ্যানেলে ভেরিফাইড টিক মার্ক দেননি কেন? পরে শুনলাম যে উনি সিলভার গঠনের জন্য এপ্লাই করেনি, এমনকি সিলভার বাটন যে কি তাই ঠিকমত বুঝে উঠতে পারলেন না। আমি ফোনে ওনার ভাইপো কে সব বুঝিয়ে দিয়ে এপ্লাই করতে কি করে হয় বলে দিলাম। এরপর থেকে এক দিন উনি ইউটিউবে সিলভার পর্টনের ছবি দিয়ে বলছেন সুদূর ক্যালিফোর্নিয়া থেকে তাকে নাকি গিফট পাঠানো হয়েছে। বুঝুন কীর্তি, সিলভার বাটন নাকি গিফ্ট। কোথায় গেছে ইউটিউবারদের সম্মান এইসব ভুঁইফোড় ইউটিউবারদের জন্য। উনি আবার পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির অর্ণব গোস্বামী। আশাকরি সময়টা এই লেখাটা পড়লে এটাকে টেকনিক্যাল শিক্ষামূলক সমালোচনা হিসেবেই ধরবেন। রাগ করবেন না।

কিছু বিচিত্র ব্লগারের জন্ম হয়েছে। যারা ঘুম থেকে উঠে ক্যামেরা ধরে ব্লগারের নামে গার্বেজ কনটেন্ট দিয়ে ইউটিউবে সার্ভার স্পেস জ্যাম করে চলেছেন।

ইউটিউব প্লাটফর্ম সম্পর্কে কোনো ধারণা না নিয়ে কিছু বিচিত্র মানুষ ইউটিউবে এসে বিচিত্রভাবে নাম করে ফেলে পুরো প্ল্যাটফর্ম তার মা মাসি করে দিয়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

অ্যাডভার্টাইজমেন্ট পয়সায় ইউটিউব চলে তার কি এগুলো সহ্য করবেন?

কালকে যে ভার্চুয়াল ইউটিউব কনফারেন্স টা হতে চলেছে তার বিষয়বস্তু, ইউটিউব শর্ট ভিডিও। আপনার নিশ্চয়ই জানেন যে ইউটিউব শট নামে একটা নতুন ফিচার চালু করা হয়েছে মোবাইল ডিভাইসে সরাসরি ভিডিও রেকর্ড করে পাবলিশ করা যায়। মানে ওই টিকটকের মতন কিছু করার চেষ্টা ওরা করেছে। ওই ফিচারটায় মনিটাইজেশন নেই। তাই কেউ ওখানে বিশেষ কাজ করে না। দেখা যাক কী বলে।

মোটকথা ইউটিউব এর ভবিষ্যৎ কিন্তু টলমল করছে। ইন্টারনেটের দুনিয়ার বাদশা হয়ে থাকার জন্য এখনই তারা লড়াই করছে ছোট্ট ছোট্ট কিছু শর্ট ভিডিও অ্যাপ্লিকেশনদের সাথে। আবার, অ্যামাজন প্রাইম এর মতন অসাধারণ কনটেন্ট গুলোর কাছে।

আইপিটিভি তে অ্যামাজন প্রাইম, হটস্টার ছেড়ে নিশ্চয়ই কেউ ইউটিউব দেখতে বসে না। আর মোবাইল ডিভাইস হাতে থাকলে মাইক্রো ভিডিও সাইট গুলো থেকে অল্প সময় ফুল্টু এন্টারটেনমেন্ট। ইউটিউব এর একদিনের 10 বছরের কনটেন্ট থাকলেও মানুষের কাছে এক দিনে এন্টারটেইনমেন্ট এর জন্য সময় ম্যাক্সিমাম 6 ঘন্টা।

একেবারে শাঁখের করাতে। ভারত টিকটক ব্যান করার পরেও তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না। ভবিষ্যতে কি হবে সেটা ভবিষ্যতই বলতে পারবে।

হায়ারোগ্লিফিকের পাতায় লেখা youtube-এর টার্মস এন্ড কন্ডিশন এবং কপিরাইট পলিসি এবং কমিউনিটি গাইডলাইনের মাদুলি বানিয়া পরে থাকুক ইউটিউব এর সিইও। বিগত 10 বছর ধরে চলা ওদের এন্টারটেনমেন্ট স্টাইল এখন ভিন্টেজ হয়ে গেছে।

ব্যক্তিগতভাবে আমি নতুন ইউটিউবারদের এখন ইউটিউবে যুক্ত হয়ে ক্যারিয়ার তৈরি করার পরামর্শ দেবো না। আর বাংলা ভিডিও বানিয়ে যদি কেউ ক্যারিয়ার তৈরি করতে চান তাহলে তো আমি তাদের বলব শত শত হাত দূরে থাকুন ইউটিউবর হওয়ার স্বপ্ন থেকে। একটা কথা খুব ভালো করে মাথায় রেখে দিতে হবে যে আমেরিকান দেখলে ইউটিউব থেকে এখন যে পয়সা পাওয়া যায় তাতে কেরিয়ার বলে কিছু হতে পারে না। তাছাড়া, নতুন ইউটিউব চ্যানেল গুলোকে ইউটিউব কোনরকম ভাবে সাপোর্ট পর্যন্ত করছে না। ওদিকে সৌমালি নামে এক গার্বেজ কনটেন্ট মেকিং ব্লগার তার বগলের চুল কামানোর ভিডিও আপলোড করে মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউয়ার তুলে নিচ্ছে। নতুন ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে তা সম্পূর্ণ নিজের দায়িত্বে যে দাঁড় করাতে হয় তা আমার নতুন ইউটিউবার বন্ধুরাই বলবেন কমেন্টসের মাধ্যমে।

Riyazul Islam.
riyazulislam
524 Points

Popular Questions