আমেরিকা স্পাই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৃথিবীর প্রতি ইঞ্চি জায়গার উপর নজরদারি করতে সক্ষম—দাবিটি কতটা সত্যি অথবা প্রযুক্তিগতভাবে এটি সম্ভব কিনা?

1 Answers   3.5 K

Answered 2 years ago

আকাশ থেকে সর্বদা এক অক্লান্ত চোখে আমাদের প্রত্যেকটি কর্মকাণ্ডের উপর নজর রাখা, এমন এক কম্পাস সুবিধা যাতে পৃথিবীর যেকোনো স্থান খুঁজে পাওয়া, যেকোনো রেডিও সিগন্যাল প্রতিফলিত করে আবার পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেওয়া—এই তিনটি প্রধান কাজ স্যাটেলাইট আমাদের জন্য করে থাকে। খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে এই শতশত স্যাটেলাইট গুলোকে হয়তো খালি চোখে দেখতে পাবেন না, কিন্তু টিভি ব্রডকাস্ট থেকে শুরু করে আন্তর্মহাদেশীয় টেলিফোন কল, আবহাওয়া বার্তা এবং স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিচালনা করতে স্যাটেলাইট গুলো দিনরাত কাজ করেই চলছে।

আপনার প্রশ্ন হচ্ছে, অ্যামেরিকান স্প্যাই স্যাটেলাইট গুলো সত্যিই গোটা দুনিয়ার উপরে নজরদারি রাখার ক্ষমতা রাখে কিনা! টেকনিক্যালভাবে, উত্তরটি হচ্ছে হ্যাঁ, এটা রাখা সম্ভব! উইকিপিডিয়ার অনুসারে অ্যামেরিকার এই জন্য ২৯০টি মতো স্যাটেলাইট রয়েছে, এর মধ্যে অনেক স্যাটেলাইট সরাসরি নজরদারির জন্য আখ্যায়িত। অজানা না জানি আরো কতো স্যাটেলাইট রয়েছে এদের!

স্প্যাই স্যাটেলাইট গুলো ও নর্মাল কমিউনিকেশন বা ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট গুলো একই ভাবে কাজ করে। তবে স্প্যাই স্যাটেলাইট গুলোতে কিছু স্পেশাল টুলস থাকে। অনেক স্প্যাই স্যাটেলাইট জাস্ট ফটো নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়, এতে হিউজ লেন্স লাগানো থাকে। স্যাটেলাইট গুলোকে নানান গোপন অর্বিটে নিয়ে যাওয়া হয়, এতে ন্যাসার রকেট গুলো সাহায্য করে।

এদের প্রোগ্রাম CIA এবং US AIR Force ইউজ করতো, এতে ফিল্ম ক্যামেরা লাগানো ছিল, স্যাটেলাইট ফটো ক্যাপচার করতো তারপরে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল উপর থেকে এই ফিল্ম গুলো উদ্ধার করে পৃষ্ঠে আনা হতো। কোরোনা স্যাটেলাইট গুলো পৃথিবীর প্রথম ম্যাপিং তৈরি করার কাজে ব্যবহৃত হয়েছিলো। অনলাইনে বিভিন্য ওয়েবসাইটের অনুসারে ইউএস এয়ার ফোর্স ও সিআইএ ১৯৬০-১৯৭২ এর মাঝে প্রায় ১০০ এর ও বেশি কোরোনা স্যাটেলাইট আকাশে নিক্ষিপ্ত করেছে।

লো অর্বিট স্যাটেলাইট থেকে ম্যাপিং ডাটা কাজে লাগিয়ে গোটা দুনিয়ার পৃষ্টের ৩ডি ম্যাপ তৈরি করা হয়, এতে পৃষ্ঠের প্রত্যেকটি জিনিষের গভীরতা ও উচ্চতা ধরা পরে। অনেকটা বলতে পারেন ৩ডি স্কেচিং! এই ৩ডি ম্যাপ ডাটা থেকে দুনিয়ার সম্ভাব্য প্রত্যেকটি রাস্তা বের করা সম্ভব। সাথে এদের অনেক স্যাটেলাইট সমুদ্রের উপরেও রয়েছে।

যদিও অনেক স্প্যাই স্যাটেলাইট গুলো কোথাও লিস্টিং করা নেই, তবে বেশিরভাগ স্প্যাই স্যাটেলাইট গুলো ক্যালিফোর্নিয়ার Vandenberg Air Force Base এর প্রাইমারী সাইট থেকে লঞ্চ করা হয়েছিলো Cold War এর সময়ে, আর এখনো সেখান থেকে লঞ্চ করা হয়, যেগুলো তথ্য হাইলি গোপন রাখা হয়।

এখনকার স্যাটেলাইট গুলো নিশ্চয় আর এনালগ ছবি তোলে না, কিন্তু ডিজিটাল ইমেজ গুলোকে করিয়ে পৃথিবীতে সিগন্যাল সেন্ড করে, যাতে সিগন্যাল ক্যাপচার করার পরেও ডাটা গুলো কেউ রীড না করতে পারে।

হ্যাঁ, তারা দুনিয়ার যেকোনো প্রান্তে স্যাটেলাইট নিয়ে যেতে পারে, আর সেখানের গতিবিধির উপরে সহজেই নজর রাখতে পারে। যেহেতু তাদের অগুনতি স্যাটেলাইট রয়েছে তাই বলা খুবই সহজ যে এই মুহূর্তে কোন না কোন স্যাটেলাইট হয়তো আপনার মাথার উপরেও ঘুরছে। কোথাও যদি স্যাটেলাইট নাও থাকে, জাস্ট তারা কাজের জন্য সেখানে পৌছিয়েও দিতে পারবে, ইচ্ছা মতো অরবিট ও সেট করতে পারবে!

আরেকটি জিনিষ ভুলে গেলে চলবে না, জিপিএস স্যাটেলাইট গুলো কিন্তু ইউএস এয়ারফোর্সের জিনিষ। ১৯৭০-১৯৮০ সাল এর মাঝে, যখন ইউএস এয়ারফোর্স কিছু GPS স্যাটালাইট চালু করেছিলো আর্মি ন্যাভিগেশন প্রসঙ্গে। কিন্তু ১৯৮৩ সালে যখন রাশিয়া একটি বেসামরিক বিমানকে হামলা করে ধংস করে দেয়, কেনোনা বিমানটি ভুল করে তাদের অঞ্চলে ঢুকে পরেছিল, তখন ইউএস সরকার সিদ্ধান্ত নিলেন যে GPS সাধারন জনগণের জন্যেও প্রাপ্তি করা হবে এবং সকল বিমানে এই সুবিধাটি লাগানো হবে ন্যাভিগেশন এর জন্য।

এর ঠিক ১২ বছর পরে অনেক কঠোর পরিশ্রম এর পর ১৯৯৫ সালে আমজনতার জন্য প্রথমবার GPS চালু করা হয়। কিন্তু তখনকার সময় এই প্রযুক্তি এতোটা নির্ভুল ছিলোনা। তখন শুধু নিজের অবস্থানের হালকা আন্দাজা করা যেতো। এবং সামনে গিয়ে ২০০০ সালে পুরোপুরি ভাবে জনতার জন্য GPS চালু করে দেওয়া হয়। এর পরে ২০০৫ থেকে ২০১৫ এর মধ্যে ইউএস এয়ারফোর্স মোটামুটি ৫০ টির মতো GPS স্যাটালাইট চালু করেছে। এই জন্য আজকের দিনের GPS প্রযুক্তি অনেক বেশি শক্তিশালী এবং আপনার একদম সঠিক অবস্থান নির্ণয় করতে সক্ষম।


Rahat Ahmed
rahatahmed
419 Points

Popular Questions