আমেরিকার বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন করতে চাওয়ার সঙ্গে মানবাধিকার, গনতন্ত্র এসব কোন মূল কারন নয়।আমেরিকা যদি মানবাধিকার ও গনতন্ত্র নিয়ে এত চিন্তিত হত তাহলে তারা পাকিস্তানের ইমরান খান ও তার দলের উপর হওয়া ক্রেক ডাউন নিয়ে চুপ কেন!
আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যের সকল মিত্ররা হল স্বৈরাচার।তাদের সঙ্গে আমেরিকার অত্যন্ত সুসম্পর্ক রয়েছে।
ইরানের শাহ কি গনতান্ত্রিক লিডার ছিলেন? তবুও সিআইএ তাকে ইরানে সেট করেছিলো নিজের স্বার্থে।আবার ইসরায়েলকে রক্ষার জন্য এবং তেল লুন্ঠনের জন্য MI6 মুসলিম ব্রাদারহোডকে আরব বিশ্বে সম্প্রসারন করতে সহায়তা করে।কারন জামাল আবদুল নাসেরের ন্যায় আরবের স্যাকুলার ন্যাশনালিস্ট লিডারদের ইসরায়েল ও পশ্চিমারা ঝুঁকি মনে করত।এর ধারাবাহিকতায় সাদ্দামকে হটানো হয় এবং আরব বসন্ত প্লট করা হয়।এসব প্রতিটি কাজে আল জাজিরা ও মুসলিম ব্রাদারহোড পশ্চিমাদের সহায়তা করেছে।
প্রিন্স সালমানের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের সংঘাত নতুন নয়।প্রিন্স সালমানকে আমেরিকান ডেমক্রেটরা অপছন্দ করার কারন তার ইয়েমেনে আগ্রাসন চালানো নয়।বরং আমেরিকান Christo-Zionist রা মনে করে প্রিন্স সালমান পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে শিয়া ও সুন্নি বিবাদ নিরসন করে একটি EU টাইপ পরিমন্ডল গড়ে তুলবেন ফলে পশ্চিমাদের প্রভাব আরবে থাকবে না।প্রিন্স সালমান স্যাকুলার এবং স্যাকুলারদের ইসলামিস্টদের মত যুদ্ধে লিপ্ত করা কঠিন।প্রিন্স সালমান নিজে কট্টর সুন্নি বা ওহাবি নয় সেই ব্যাক্তি কেন শিয়াদের ঘৃণা করবে! জামাল খাশোগি কোথায় আর্টিকেল লিখত? নিউইয়র্ক টাইমস এ।সেই নিউইয়র্ক টাইমস যারা প্রতিদিন গোপন সূত্র উল্ল্যেখ করে রিপোর্ট প্রকাশ করতে "সাদ্দাম নাকি পারমাণবিক বোমা তৈরি মাটির নিচে রেখেছে"।
আমি বলছি না আমেরিকার বাংলাদেশে রিজিম পরিবর্তন করার চেষ্টার পেছনের কারন উপরোক্ত বিষয়গুলো।তবে তাদের এই প্রচেষ্টার কারন বাংলাদেশে গনতন্ত্র, সুশাসন প্রতিষ্ঠা নয় বরং নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করা।
সেই স্বার্থ হল বাংলাদেশকে চিন বিরোধী সামরিক জোটে যুক্ত করা।আমেরিকানরা এখন চিনকে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি মনে করে।এবং চিনকে শায়েস্তা করতে হলে তার বিরুদ্ধে সামরিক জোট তৈরি করতে হবে।এর ধারাবাহিকতায় আমেরিকা প্রথমে QUAD, AUKUS, NATO+, US Japan Philippine Trilateral Treaty Alliance।তেমনি আমেরিকা চিন বিরোধী জোটে বাংলাদেশকে পাশে চায়।বাংলাদেশের বর্তমান সরকার হয়ত এটাতে রাজি হয় নি এজন্য আমেরিকা তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।আমার মতে বাংলাদেশ সরকারের চিন বিরোধী জোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।কারন পৃথিবীতে আমেরিকা বা চিন সুপারপাওয়ার হওয়াতে বাংলাদেশের কিছু যায় আসে না।এমনকি চিন বা আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের বর্ডারও নেই।কিন্তু আমেরিকা যেভাবে চাপ সৃষ্টি করেছে তাতে মনে হয় বাংলাদেশের সরকার সেটা আওয়ামী লীগ আর ভবিষ্যতে অন্য কোন সরকার আসুক তাদের আমেরিকার ইন্দো প্যাসেফিক স্ট্রেটেজিতে যোগ দিতে হবে।
ন্যাটো ও সোভিয়েত ইউনিয়নের কোল্ড ওয়ারের বলি হয়ে অনেক ছোট রাষ্ট্র, ইথনিক জনগোষ্ঠী ধ্বংস হয়ে গেছে।তাই বড় সুপারপাওয়ারদের যুদ্ধের ময়দান হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।১৯৮০ এর পূর্বে মধ্যপ্রাচ্য সমৃদ্ধ ছিল।কিন্তু আবররা যখন তেল বিক্রিতে অবরোধ দেওয়া শুরু করে তখন ইরানে ব্রিটেন ও ফ্রান্স আলাতোল্লা খোমেনিকে বসায়।খোমেনি ইরানে ফ্রান্স থেকেই প্রত্যাবর্তন করেছিলেন।তার বছর দুইয়েক পর ইরান ইরাক যুদ্ধ হয় যেখানে সিআইএ দুই দিকেই অস্ত্র দেয়।
তেমনি রোহিঙ্গা সংকটের শুরুতেই আমেরিকা বাংলাদেশে সামরিক ঘাঁটি প্রস্তাব দেয়।
ততকালীন বাংলাদেশের ফরেন মিনিস্টার সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
এরকম ঘটনা পাকিস্তানেও হয়েছে।সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন আফগানিস্তান এসেছিল তখন জিমি কার্টার প্রশাসনের NSA ড. জিবনিউ ব্রেজিনস্কি সর্বপ্রথম ভূট্টোকে আফগানিস্তানে প্রক্সি যুদ্ধ শুরুর জন্য এপ্রোচ করেন কিন্তু ভূট্টো তাতে সম্মতি দেয় নি এর পরপরই জেনারেল জিয়াউল হক ভূট্টোকে গদিচ্যুত করে ফাঁসিতে ঝুলায়।এর পরই সিআইএ-আইএসআই এর যৌথ অপারেশন শুরু হয় আফগানিস্তানে।সেই যুদ্ধ আজ পর্যন্ত আফগানিস্তানে সমাপ্ত হয় নি এমনকি পাকিস্তান নিজেও যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে নি।এতে বুঝা যায় ভূট্টো কতটা সঠিক ছিলেন।
পশ্চিমারা পৃথিবীতে তাদের সুপ্রিমাসি ঠিকিয়ে রাখতে চায়।সেখানে তাদের ফরেন পলিসির মূল লক্ষ্য কৌশলগত স্বার্থ আদায়।পশ্চিমাদের স্বার্থ মানে ফ্রেডনিয়া গ্রামের কুটিরে থাকা সাদাসিধা নারী যে তার পরিবার ও গ্রামের বাহিরে কিছু জানে না তার স্বার্থ নয় বরং পশ্চিমাদের স্বার্থ হল জর্জ সরস, ইলন মাস্ক, মার্ক জাকারবার্গ, বিল গেটস, রথচাইল্ডদের স্বার্থ।আরও রয়েছে লকইড মার্টিন, বোয়িং, রিথিয়ন সহ পশ্চিমা Military Industrial Complex যাদের পেট চলে মানুষের রক্তভেজা টাকায়।
তাই পশ্চিমাদের বাংলাদেশে Strategic Goal পরিষ্কার।সেটা তারা যেকোন মূল্যে পেতে চাইবে।
আমেরিকার বর্তমান ডিপ স্টেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পজিশন সেক্রেটারি অব স্টেট আমরা যাকে বিদেশমন্ত্রী বলি তিনি এন্থনি ব্লিংকন এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি এডভাইজার জ্যাইক সুলেইভান দুজনেই ইহুদি।তাদের বাংলাদেশের মুসলমানদের প্রতি বিশেষ কোন ভালবাসা নেই বা হেফাজত বা জামাত ইসলামের, বিএনপির প্রতি বিশেষ প্রীতি নেই।তাদের চিনকে শায়েস্তা করা দরকার।আর আওয়ামী লীগ পশ্চিমা সামরিক জোটে যাচ্ছে না তাই তারা তাদের হঠিয়ে আজ্ঞাবহ কাউকে নিয়ে আসতে চায় যারা চিন বিরোধী সামরিক জোটে যুক্ত হবে।
আওয়ামী লীগ সরকার যে মতাদর্শের উপর তৈরি সেটা তাদের কাজেকর্মে প্রতিফলন হচ্ছে না।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের চারটি মৌলিক নীতি যেমন গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং ধর্ম নিরপেক্ষতার উপর জোর দিয়েছিলেন।কিন্তু আজকের আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ নেই সেটা সত্য বা আজকের আওয়ামী লীগের নেতারা কতটা আওয়ামী লীগের মতাদর্শ অন্তরে ধারন করে সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।তাই পশ্চিমারা যদি বাংলাদেশে লিবারেল ডেমোক্রেসি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে সেটা প্রশংসনীয়।কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশে গনতন্ত্র স্থাপন নয় বরং কৌশলগত স্বার্থ আদায়।এতে বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হবে না।
nazninahmed publisher